E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সত্যতা মিলেছে ঝিনাইদহ শিক্ষা অফিসে অনলাইনে বদলী জালিয়াতির 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ৩০ ১৭:৫৫:৩৬
সত্যতা মিলেছে ঝিনাইদহ শিক্ষা অফিসে অনলাইনে বদলী জালিয়াতির 

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনলাইনে বদলী জালিয়াতির সত্যতা মিলেছে। প্রমানিত হয়েছে কারসাজির মাধ্যমে সিনিয়র শিক্ষকদের অনলাইন আবেদন ত্রুটিপুর্ণ দেখিয়ে বাতিল ও পরে অর্থের বিনিময়ে জুনিয়রদেরকে বদলী দেওয়া। সম্প্রতি খুলনা উপ-পরিচালক অফিসের এডি ফজলে রহমান সরেজমিন তদন্ত করে এই অনিয়মের সত্যতা পান। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তিনি মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছেন।

এদিকে দোষ প্রমানিত হওয়ার পরও দায়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ খালেকুজ্জামান ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এখনো ছড়ি ঘুরাচ্ছেন অভিযোগকারী শিক্ষকদের উপর। ফলে তারা ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে চাকরী খাওয়ারও হুমকী দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এদিকে দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসার মোঃ খালেকুজ্জামান ও মোঃ শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উপজেলার সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় অনলাইন বদলীর আবেদন শুরু হয়। জেলার ৬৮৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭৮ জন শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করেন। অনলাইনে বদলীর আবেদন শেষ হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ খালেকুজ্জামান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাজাহান রিজু ও প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান সার্ভার জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তারা সিনিয়র শিক্ষকদের অনলাইন আবেদন ত্রুটিপুর্ণ দেখিয়ে বাতিল করে তদন্তস্থলে অপেক্ষকৃত জুনিয়রদের বদলীর সুযোগ করে দেন। এ কাজ করতে তারা অনলাইনে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়ে ৬ জন সিনিয়র নারী শিক্ষককে বদলীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।

অভিযোগ উঠেছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাজাহান রিজুর স্ত্রী সুরাইয়ার স্ত্রীকে এই মহাজালিয়াতির মাধ্যমে বদলী করেন। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিথুন সাহার স্ত্রী স্মৃতি বিশ্বাসকে প্রতিবন্ধি বানিয়ে বদলী করেন। এভাবে অন্তত ৬জন শিক্ষককে জালিয়াতির মাধ্যমে বদলী করিয়ে আনেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে প্রথমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহার সহায়তার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে ঢাকায় দেন দরবার করে দফায় দফায় তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত করা হয়। এরপর শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহাপরিচারকের দপ্তর থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। গত মাসে তিনি ঝিনাইদহে সরজমিন তদন্ত করে অনলাইনে বদলী জালিয়াতির সত্যতা পান এবং সে মোতাবেক প্রতিবেদন মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনে বদলী জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন মোতাবেক এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বিষয়ে আবারো নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে এই তদন্ত কাজ শুরু করবেন। এক চিঠিতে তিনি অভিযোগকারীদের আবেদন, পত্রিকায় অভিযোগ সমূহের প্রামাণক ও স্বাক্ষীসহ যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে এই তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে এই তদন্ত কর্মকর্তা আসার খবরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট নড়েচড়ে বসেছে। তারা অভিযোগকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার কখনো অফিসে ডেকে অনুনয় বিনয়ের পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগকারী শিক্ষকরা কোন ছাড় দিতে নারাজ। তারা মনোবল শক্ত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সম্মুখে প্রমানসহ হাজির হবেন বলে জানা গেছে।

(এসআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test