E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে উধাও বখাটে বাপ্পি

২০২৪ অক্টোবর ১২ ২১:১০:৫১
ফরিদপুরে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে উধাও বখাটে বাপ্পি

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্ৰামের বাদশা মন্ডলের ছেলে প্রবাসী মো. সালমান মন্ডলের স্ত্রী এবং ওই প্রবাসীর বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও ঘরের মুল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে পালিয়েছে একই গ্ৰামের বাদল শেখের বখাটে ছেলে বাপ্পি শেখ (২০)।

এই বিষয়ে ফরিদপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতনে ওই প্রবাসীর বাবা বাদশা মন্ডল (৫৫) বাদী হয়ে সম্প্রতিকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় বখাটে বাপ্পি শেখ (২০), বাদীর ছেলের বউ উর্মি আক্তার (২৪) সহ মোট ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী সালমান মন্ডল বিদেশে যাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী উর্মি শ্বশুর বাড়ির কাউকে না জানিয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতো। পরে বাদী জানতে পারেন দীর্ঘদিন ধরে উর্মি অনৈতিক সম্পর্কে গড়ে তোলেছে বাপ্পী শেখ নামের এক বখাটের সাথে। বিষয়টা জানাজানি হওয়ায় বাপ্পীর বাবা বাদল শেখের কাছে বিষয়টি একাধিক বার জানায় প্রবাসী সালমানের পরিবার। কিন্তু ওই বিষয়ে বাপ্পীর পরিবার কোন প্রকার সহযোগিতা না করে বরং ছেলের পক্ষে অবস্থান নেয়।

এর কিছুদিনের মধ্যে প্রবাসীর বাড়ী থেকে নগদ দুই লাখ টাকা, পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও বাড়ীর আরো কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র সহ ওই প্রবাসীর স্ত্রী উর্মিকে নিয়ে পালিয়ে যায় বাপ্পী শেখ।

এব্যাপারে সালমানের বাবা বাদশা মন্ডল জানান, আমার ছেলের বউ উর্মি বাপ্পীর সাথে যাওয়ার দিন আমাদের বাড়িতেই ছিলেন, সকালে বাপ্পী শেখ পিতা বাদল শেখ সাং কৃষ্ণনগর উপজেলা ফরিদপুর সদর, উর্মির বাবা উসমান গাজী পিতা মৃত- জুলহাস গাজী সাং খাসকান্দী কানাই পুর ফরিদপুর সদর, মুসলিমা বেগম (২৫) পিং ছব্দুল শেখ সাং কমলেশ্বরদী, উপজেলা বোয়ালমারী জেলা ফরিদপুর প্রমুখ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখন আমি ও আমার স্ত্রী তাদেরকে আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকি এই সুযোগে এরা আমার ঘরে থাকা কাঠের আলমারির তালা খুলে নগদ দুই লাখ টাকা, পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার সহ ঘরের মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাইতে থাকে এসময় কৌশলে আমার পুত্র বধু উর্মিও তাদের সাথে যাওয়ার জন্য তাদের গাড়িতে উঠে যায়।

এসব দেখে আমি চিল্লাচিল্লি করি ও বাধা দিলে তখন আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি ভাবে কিল, ঘুষি, থাপ্পর, ও হাতে থাকা কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে নিলা ফুলা যখম করে। বাপ্পী শেখের হাতে থাকা বড় দা (ছ্যান দা) দিয়ে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে এলে আমি ডাক চিৎকার করি, তখন আমাকে বাঁচানোর জন্য- ইনামুল মন্ডল (২০) মো. আলাউদ্দিন শেখ (৪২) বাবলু মন্ডল (৪০) সাহেদা বেগম (৫২) হোসনেআয়ারা বেগম (৫০) সব সাং কৃষ্ণনগর, থানা কোতয়ালী জেলা ফরিদপুর এগিয়ে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্ৰামের মো. বাদশা মন্ডলের ছেলে মো. সালমান মন্ডলের সহিত ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর ইসলামী শরীয়া আইনে বিয়ে হয় খাসকান্দী গ্ৰামের মো. উসমান গাজীর মেয়ে মোসা. উর্মি আক্তারের সাথে। সালমানের মা জানান শুরু থেকেই সালমানের স্ত্রী উর্মি আক্তার তার খেয়াল খুশি মতো চলতো শ্বশুর শাশুড়ি এমনকি আমার ছেলে সালমানের কথা ও খুব একটা শুনতোনা।

বেশিরভাগ সময় তার খেয়াল খুশি মতো চলতো। মাঝেমধ্যে না বলেই বাবার বাড়িতে চলে যেত। এব্যাপারে উর্মির বাবা-মা'কে অনেক বার বলেছি। মেয়ের কোন কথা শুনলেই উর্মির বাবা-মা উল্টো আমাদেরকে শাসিয়ে যেতো'। উর্মির শ্বাশুড়ি আরো জানান, আমাদের সংসারে দুই ছেলে বড় ছেলে হচ্ছে সালমান মন্ডল দুবাই প্রবাসী, ছোট ছেলে পড়াশোনা শেষ ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করে।

আমার সংসারটা খুব সুন্দর ভাবেই চলছিলো, আমার সংসারে একমাত্র ছেলের বউ উর্মি আমরা তাকে খুব ভালোবাসে 'মনি' বলে ডাকতাম। আমার মনে হয় আমরা বেশি ভালোবাসি বলে উর্মি এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে'। তিনি জানান, 'উর্মির বাবা-মা যদি উর্মিকে একটু শাসন করতো তাহলে এতোটা উশৃংখল সে হতো না এবং এধরনের ঘটনা ঘটাতেও পারতোনা'। সংসারে সালমান-উর্মি দম্পতির রুবাইয়্যা (৫) ও হুমাইয়া (৩) নামের দু'টি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রবাসে বাবা সালমান ও মা উর্মি বখাটে বাপ্পীর সাথে নিরুদ্দেশ হওয়া শিশু দু'টি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং মানবেতর জীবন যাবন করছেন বলে জানান প্রবাসী সালমানের বাবা-মা।

সালমানের বাবা বলেন, আমি কোর্টে পাঁচ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছি গত ২৭ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে । এরপর থেকে বাপ্পী শেখ সহ তার পরিবারের সকলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে ও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতি নিয়ত চাপ প্রয়োগ করে আসছে। আমার ছেলে সালমানকে দেশে আসা মাত্র হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলেও বারবার হুমকি দিচ্ছে তারা।

আমারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার প্রবাসী ছেলে সালমান মন্ডল নিরাপত্তা হীনতার কারণে দেশে পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, কোর্ট থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় ফরিদপুর কোতয়ালি থানা। ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সনাতন দাস মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শনিবার (১২ অক্টোবর) মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ফোন করা হলে এসআই সনাতন জানান, 'আমি ছুটিতে আছি। মামলাটি আমি তদন্ত করতেছি। এখনও মামলা তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'।

এদিকে, একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পলাতক বাপ্পি শেখ ও উর্মি আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(আরআর/এএস/অক্টোবর ১২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test