E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় বেকার হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার বয়লার-চাতাল শ্রমিক-কর্মচারি

২০১৪ নভেম্বর ২৮ ২০:৩২:২৭
নওগাঁয় বেকার হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার বয়লার-চাতাল শ্রমিক-কর্মচারি

 নওগাঁ প্রতিনিধি:দেশের ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ হিসেবে খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার চালকল ও বয়লার-চাতালের মালিকরা ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে তাদের মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে  উৎপাদিত চাল পাইকারের অভাবে অবিক্রিত থাকায় ও দিনের পর দিন ব্যাংক ঋণের সুদে জর্জরিত হয়ে জেলার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অটোসহ চালকল ও বয়লার- চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে।

বেকার হয়ে পড়েছে নারী-পুরুষ চাতাল শ্রমিক প্রায় ৩০ হাজার। খেলাপি ঋনের দায়ে জড়িয়ে পড়েছেন ৬শ’ মিল মালিক। ব্যাংকের লেন-দেনেও চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক চালকল মিল মালিক জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমেও বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানী, ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋন আর দেশে উৎপাদি সরকারের নির্ধারিত চালের মূল্যের সঙ্গে আমদানীকৃত চালের মূল্যের সমন্বয় না থাকায় আজ ব্যবসায়ীদের ভড়াডুবির মূল কারন।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ আর বিদেশ থেকে ভরা মৌসুমে চাল আমদানী করার কারনে দেশের চালকল ব্যবসায়ীরা আজ পথে বসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নওগাঁর ৬শ’ মিল মালিক ব্যাংক ঋনে খেলাপি হয়ে পড়েছেন। শ্রমিক কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। এখন আমন মৌসুম চলছে। এ সময় বিদেশ থেকে চাল আমদানী করার কোন প্রয়োজন দেখছিনা। ব্যাংক ঋনের সুদের পরিমান কমানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানী বন্ধ করে শুল্ক আদায়ে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।

নওগাঁ জেলা ধান্য চাল ও আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন জানান, নওগাঁ দেশের বৃহৎ চালের বাজারে আজ পাইকারদের আগমন নেই। মিল মালিকরা লোকসান গুনতে গুনতে বাধ্য হয়ে মিল বন্ধ করে দিচ্ছে। একদিকে আমদানী নির্ভর চালের বাজার মূল্য তার সঙ্গে ব্যাংক ঋনের উচ্চহারে সুদ, সব মিলিয়ে চাল ব্যবসায়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যম ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে যারা চাল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বাঁচাতে হলে ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানী বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার আলম কাজল জানান, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অবশ্যই চাল বিদেশ থেকে আমদানী করবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশে উৎপাদিত চালের মূল্য পুনরায় নির্ধারন করার বিষয়ে জরুরী ভাবে সরকারকেই বিবেচনা করতে হবে। আমন ধান এবার আশানুরুপ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নায্য দাম পাচ্ছেনা। তঁরাা উৎপাদন ব্যয় তুলতে পারবেনা। সরকারী ভাবে এবার দেশে উৎপাদিত চালের মূল্য ৩২টাকা প্রতি কেজি নির্ধারন করা হয়েছে। অথচ বিনা শুল্কে আমদানী করা চাল সরকার নির্ধারিত দেশী চালের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পৃথক পৃথক দিনে বিভিন্ন দাবী নিয়ে মিল মালিকদের র‌্যালী, সভা, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরারবর স্মারকলিপি প্রদান করার কর্মসূচি অব্যাহত আছে। রবিবার (৩০ নবেম্বর) নওগাঁয় ওই কর্মসূচির দিন ধার্য্য করা হয়েছে। নওগাঁ জেলায় আটোমেটিক রাইস মিলসহ প্রায় ১৫শ’ চালকল রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক জড়িত। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ চালকল, বয়লার-চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ব্যাংকে চাল ব্যবসায়ীদের লেন-দেনের বিষয়টি খুবই খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক চাল ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ঋন সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু চাল ব্যবসায়ীরা ভাল বাজার না পেয়ে ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না।

(বিএম/এসসি/নভেম্বর২৮,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test