E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার দেড় মাসেও নেয়া হয়নি ব্যবস্থা

২০২৪ নভেম্বর ০৭ ১৮:৫৯:৫৯
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার দেড় মাসেও নেয়া হয়নি ব্যবস্থা

চাটমোহর প্রতিনিধি : সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাবনার চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাককে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার ঘটনার দেড় মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। হয়নি কোনো তদন্ত বা শোকজ। উল্টো জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখলকারী রবিউল ইসলামকে বৈধতা দিয়ে চলেছেন তারা। এ নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অথচ গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-সচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা অনান্য শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ বা হেনস্তা না করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এছাড়া ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (উপ-সচিব) হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এত পরিপত্রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা সুপারের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা সুপার পদে দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিন্তু সেই সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাককে কোনো কারণ ছাড়াই মাদ্রাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। আর তার অপেক্ষাকৃত বয়সে অনেক জুনিয়র শিক্ষক রবিউল করিম বাচ্চু স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ্যের চেয়ার দখল করে বসেন।

ঘটনার বিচার চেয়ে ২০ সেপ্টেম্বর চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)’র কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাক। কিন্তু ঘটনার দেড় মাস পার হয়ে গেলেও সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় কিছু লোকজন মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাকের কক্ষে যান। তারা তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজ সহ বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় অপমান করেন। একপর্যায়ে তারা যাকে খুশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বানাবেন বলে তাঁকে চেয়ার ছেড়ে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও শোনেননি। অনেকটা জোর করেই তাকে মাদ্রাসা বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে তারা মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন।

তার কিছু সময় পর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবিদার একই মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম বাচ্চুকে ফুলের মালা পরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে উল্লাস করেন মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকসহ ওইসব লোকজন। মিষ্টি মুখও করেন তারা। সেইসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

ওই সময় মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবিদার রবিউল করিম বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'নিয়োগকালে ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশন করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে। আবু ইসহাককে বারবার বলার পরও তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। এলাকাবাসী তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু এটা তিনি পারেন কি না, বা আইন সম্মত কি না সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।'

অন্যদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ সংক্রান্ত যে সকল কার্যক্রম করা হয় তার মেয়াদকাল থাকে ৬ মাস। ছয় মাস অতিবাহিত হলে নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হয়। কিন্তু সেটিও মানা হচ্ছে না। মাদ্রাসাটির নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর পর রবিউল করিমকে সাচিবিক দায়িত্ব দেয়া হয় ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর। সে হিসেবে ওই নিয়োগ কার্যক্রমের এক বছর এক মাস পার হয়ে গেছে।

এদিকে, ঘটনার এক মাস ১৭ দিন পর মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) বিকেলে মাদ্রাসায় সরেজমিন দেখতে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাহফুজা সুলতানা। এ সময় চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী সহ সাংবাদিক সুধীজন অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জোর করে পদ দখলকারী রবিউল করিম বাচ্চুকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা জানান এডিসি। কিন্তু আবু ইসহাককে হেনস্তা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বা ব্যবস্থা নেননি।

অজ্ঞাত কারণে কেন কোনো তদন্ত কমিটি বা তদন্ত হলো না, অভিযুক্ত চেয়ার দখলকারীকে শোকজ করা হলো না। এসব বিষয় নিয়ে চলছে সমালোচনা। এডিসি বের হবার সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা উদ্ভূত বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে চলে যান।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহফুজা সুলতানার সাথে কথা বলার জন্য বুধবার (০৬ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকটি মোবাইল থেকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

(এসএইচ/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test