E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরায় ছেলে-পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অরবিন্দু মন্ডল মারা গেছেন

২০২৪ নভেম্বর ১১ ১৭:২৬:০৬
সাতক্ষীরায় ছেলে-পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অরবিন্দু মন্ডল মারা গেছেন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দুই হাত ও পা বেঁধে ছেলে ও পুত্রবধুর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতিত সাতক্ষীরা সদরের বাঁশতলা গ্রামের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক ৭৩ বছর বয়সী অরবিন্দু মন্ডল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়োর পথে গতকাল রবিবার বিকেল চারটার দিকে তিনি মারা যান।

এদিকে অরবিন্দ মন্ডলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছে তার ছেলে বিশ্বজিৎ মন্ডল ও তার স্ত্রী কবিতা মন্ডল। তবে বাবার মৃত্যুর জন্য দাদা ও বৌদি ছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার মন্ডল, একই গ্রামের কলেজ শিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে অঞ্জনা মন্ডল।

প্রয়াত অরবিন্দ মন্ডলের মেয়ে অঞ্জনা মন্ডল জানান, তার বাবা বাঁশতলা রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ৯ জুন (অরবিন্দ) অবসরে যান। ক্রমশঃ তার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যায়। বড় দিদি বণলতা সরকার ভারত থেকে বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। অবসরে যাওয়ার পর থেকে দাদা বিশ্বনাথ ও বৌদি কবিতা বাবাকে থেকে ভাল চোখে দেখতো না। তাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করতো। বিষয়টি তার বড়দিদি ভারতের নৈহাটীর বাসিন্দা বনলতা সরকার জানতে পেরে বাবুরাম কাকার ছেলে নকুলকে নির্যাতনের ছবি ভিডিও করে তাকে পাঠাতে বলে। গত বছর মা চপলা মন্ডল মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খেতেন বাবা। ছোট কাকা সুভাষ মন্ডল, আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশীরা তাকে থেতে দিতে চাইলেও ছেলে ও পুত্রবধূর গালাগালির কারণে বাবা নিজেই রান্না করে খেতেন। ২ নভেম্বর শনিবার সকালে বাবাকে বাড়ির উঠানে ফেলে মশারির নেট দিয়ে হাতে ও পায়ে বেঁধে গালিগালাজের পাশাপাশি মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। এর ভিডিও চিত্র ধারণ করে নকুল পাঠায় বণলতাকে। বিষয়টির সত্যতা পেয়ে বনলতা ওই নির্যাতনের ভিডিও ফেইসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিও ধারণ করার অপরাধে কলেজ শিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইন কেড়ে নেয় নকুলের মোবাইল। এ ছাড়া কয়েকজনের এক ঘরে করে দিয়ে দোকান থেকে মালামাল কেনা বেচা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত এক বছরে আটবার বাবাকে মারপিট করে দাদা ও বৌদি। এরপরও বাবাকে পুলিশ গত ৫ নভেম্বর থানায় নিয়ে অভিযোগ দিতে বললে তিনি রাজী হননি। অথচ ৫ নভেম্বর তারা বাবাাকে দেখে চলে যাওয়ার পরদিন বিকেলে ইউপি সদস্য সন্তোষ মন্ডল, কলেজ শিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইন, তাপস সরকার, সুফল সরকারসহ একটি মহল শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে বৌদি কবিতা ম-লকে বাড়িতে তুলে দেন। ৬ নভেম্বর তিনি বাবার জীবনের নিরাপত্তার জন্য থানায় আবেদন করেন। শনিবার থানা থেকে তাকে ফোন দেওয়া হয়।

মেয়ে অঞ্জনা মন্ডল আরো জানান, তার বাবার গচ্ছিত দেড় লাখ টাকা দুই দফায় হারিয়ে যায়। পুত্রবধু কবিতা ওই টাকা চুৃরি করেছে বলে বাবা ধারণা করে আসেন। ওই টাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তাষ মন্ডলের কাছে সুদে খাটাচ্ছে বৌদি কবিতা বলে তারা জেনেছেন। যে কারণে সন্তোষ মন্ডল ও তার পরিবারের সদস্যরা বাবাকে নির্যাতনে কোন বাধা দেন না। উপরন্তু বাবা দ্রুত মারা গেলে তারা খুশী হন। আগে যে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হতো সেই দড়ি বাবা অন্যত্র লুকিয়ে রাখতের। তাই ২ নভেম্বর শনিবার সকালে পূর্ণিমার বাড়ি থেকে মশারির নেট এনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। বাবাকে নির্যাতনের ব্যাপারে প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা কথা বলতে গেলে বউদি কবিতার আত্মীয় খগেন্দ্র নাথ মন্ডল, তার স্ত্রী পূর্ণিমা তেড়ে আসেন। তবে ইউপি সদস্য সন্তোষ মন্ডলের প্রশয়ে বিশ্বানথ ও তার স্ত্রী কবিতা ৫ নভেম্বর সকালে গ্রামে এলেও বাড়িতে আসে বিকেল ৫টার দিকে।

বাঁশতলা উত্তর পাড়ার কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, কবিতা ম-লের সঙ্গে সন্তোষ মন্ডলের শুধু টাকা সুদ খাটানোর সম্পর্ক না। তাদের মধ্যে রয়েছে গভীর প্রেম। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় প্রতিবেশি ও স্বজনরা কবিতার কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্র। তবে সোমবার বাড়িতে পুলিশ আসলে মেম্বরের ছেলের মটর সাইকেলে পালিয়ে যায় কবিতা। দুই ছেলে রাজ ও দ্বীপকে তারা সঙ্গে নিয়ে যায়। গ্রামে আত্মগোপন করে থাকে বিশ্বনাথ। মঙ্গলবার ভোরে বাড়িতে এসে দুই বোন ও বাবার কাছে নিজের ও স্ত্রীর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায় বিশ্বনাথ। তবে এতকিছুর পরও ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করতে চাননি অরবিন্দু মন্ডল। তবে অরবিন্দু মন্ডলের দুই ভাইয়ের ভারতে যাওয়ার পর তাদের ১/১ খতিয়ানে যাওয়া সম্পত্তি দখলে নিতে সন্তোষ মন্ডল কবিতাকে কৌশলে বগলদাবা করে রেখেছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test