E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ব্যবসায়ির ২৩ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই

ছেলের রেখে যাওয়া টাকা থানায় জমা দিয়ে গ্রাম পুলিশ বাবার মৃত্যু

২০২৪ ডিসেম্বর ২৭ ১২:৫৮:১৬
ছেলের রেখে যাওয়া টাকা থানায় জমা দিয়ে গ্রাম পুলিশ বাবার মৃত্যু

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা থেকে ভোমরা বন্দরে যাওয়ার পথে আলীপুর ঢালীপাড়া মোড়ে ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা ছিনতাইয়ের মামলার আসামী এজাজুল হকের কাছে থাকা এক লাখ টাকা থানায় জমা দিলেন গ্রাম পুলিশ বাবা সাঈদুল হক। এর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই পুলিশের কাছে ছেলেকে সোপর্দ করতে পারা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন বাবা সাঈদুল ইসলাম।

সাঈদুল হক (৪৭) সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ই্উনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি লাবসা ইউনিয়নের নলকুড়া গ্রামে।

নলকুড়া গ্রামের সদ্য প্রয়াত গ্রাম পুলিশ সাঈদুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টা দিকে ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ি জিএম আমীর হামজার দুই কর্মচারির কাছ থেকে আলীপুর ঢালীপাড়া নামক স্থান থেকে ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা ছিনতাই হয়। ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় শহরতলীর কুচপুকুরের মেহেদী হাসান মুন্নাকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এজাহারে ও মুন্নার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তার (সেলিনা) নির্মাণ শ্রমিক ছেলে এজাজুলের নাম রয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে টাইলস বসানোর কাজ করার সময় মোবাইল ফোনে ডেকে আনে থানাঘাটার আরাফাত।১৯ ডিসেম্বর রাতে পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালানোর পর তার ছেলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত মর্মে জানতে পারেন। অভিযান পরিচালনা কালে পুলিশ এজাজুলের ব্যবহৃত মোবাইলটি নিয়ে যায়।

সেলিনা খাতুন আরো জানান, ছেলে এজাজুলকে মোটর সাইকেলে করে ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে ডেকে নিয়ে যায় আরাফাত। থানাঘাটার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুজ্জামান ও আরাফাত ছিনতাই করে চলে যাওয়ার পর এজাজুলকে একটি স্থানে ডেকে ৫০ হাজার টাকার(৫০০ টাকার নোটের) দুটি ব্যান্ডেল দিয়ে চলে যায়। ওই ব্যাÐেল দুটিতে ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার সিল মারা ছিল। সেখান থেকে ফিরে এজাজুল বাড়ির একটি স্থানে ওই টাকা রেখে চলে যায়। যা তিনি ও তার স্বামী পরে জানতে পারেন। ২০ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে ছিনতাই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে স্বামী সাঈদুল হক ও ছেলে ইফতেখারুল হককে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় স্বামী ও ছেলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় পুলিশ। মোবাইলের কললিষ্ট দেখে পুলিশ স্বামী ও ছেলেকে কলারোয়ার শ্রীপতিপুর স্কুলের পাশে তার বোন শাহীনা বেগমের বাসায় যায়। সেখানে এজাজুলকে না পেয়ে স্বামী ও ছেলের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। এজাজুলকে থানায় ধরিয়ে না দিলে তাদেরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান। শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে থানা থেকে স্বামী ও ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে টেনশনে ছিলেন স্বামী গ্রামপুলিশ সাঈদুল হক।

সেলিনা বেগম জানান, এজাজুলের বাড়িতে রেখে যাওয়া ছিনতাইয়ের টাকার খবর পেয়ে ওই টাকা মালিককে ফেরৎ দেওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সাঈদুল হক। একপর্যায়ে তিনি বিষয়টি লাবসা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য ফেরদৌসী আরা মিষ্টিকে অবহিত করেন। তার কথা অনুযায়ি তিনিসহ ছেলে ইফতেখারুল হক ও স্বামী সাঈদুল হক গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থানায় জান। থানায় তাদের কাছ থেকে টাকা জমা নেন উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান। জব্দ তালিকা করে তাতে সাক্ষর নেওয়া হয় সাঈদুল ও মিষ্টি মেম্বরের। এ সময় পুলিশ ও তারা ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। টাকা জমা দেওয়ার পর বিষয়টি একজন বিশিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে পরামর্শ করায় তিনি বুঝতে পারেন যে , টাকা মালিককে ফেরৎ না দিয়ে থানায় জমা দেওয়ায় ছেলে এজাজুলের কারাদণ্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেলো। এরপর থেকে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ প্রতিদিনই তার স্বামী ও ছেলেকে এজাজুল সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য মোবাইলে চাপ সৃষ্টি করতো।

ইফতেখারুল হক শুভ জানান, বুধবার সকালে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনের পাশে একটি বাসায় আরবি পড়াতে যান। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি তিনতলা থেকে নেমে দেখতে পান যে, দুটি তালা ভেঙে সাইকেলটি কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি বাড়িতে যেয়ে বাবাকে বলেন। এতে বাবা আরো ভেঙে পড়েন। সকাল ১০টার দিকে গোয়ালে গরুকে পানি খাওয়ানোর সময় পুলিশ আবারো বাবকে ফোন করে ছেলেকে না পেলে তাকে (শুভ) ও বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখান। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বাবা। তাকে(সাঈদুল) আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাবার মৃতদেহ বাড়িতে আনার পর দুইবার পুলিশের বিশেষ বহর তাদের বাড়িতে আসে।

লাবসা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ফেরদেদৌসি আরা মিষ্টি জানান, ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় তিনি গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক, সাঈদুলের স্ত্রী সেলিনা বেগম ও ছোট ছেলে ইফতেখারুল হক শুভ থানায় যান। এ সময় সাঈদুল তার ছেলের বাড়িতে রেখে যাওয়া আলীপুর ঢালীপাড়া মোড়ে ১৯ ডিসেম্বর ছিনতাই হওয়া ইসলামী ব্যাংকের সিল মারা এক লাখ টাকা উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানের কাছে দেন। এ সময় তার ও সাঈদুলের কাছ থেকে জব্দ তালিকায় সাক্ষর নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভোমরা বন্দরের “মা’ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জিএম আমির হামজা জানান, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মহেদী হাসান তাকে কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে এবং তা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম ঢাকা থেকে ফেরার পর প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানাবেন বলে তাকে অবহিত করেন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, ছিনতাই মামলার আসামী নলকুড়া গ্রামের এজাজুল হকের বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক বুধবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ওই বাড়ি থেকে আমীর হামজার ছিনতাই হওয়াকিছু টাকা উদ্ধার করা হয়।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test