E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরার বাজারে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আমে ছয়লাপ

আড়ৎদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করা ও দাম কমে যাওয়ায় হতাশ আম চাষিরা

২০২৫ মে ১৪ ১৯:১৯:১৩
আড়ৎদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করা ও দাম কমে যাওয়ায় হতাশ আম চাষিরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার বাজারে গোবিন্দভোগ. গোপালভোগ ও গোলাপখাস আমে ছয়লাব। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম কমেছে দাম। দাম কমে যাওয়া, হিমাগার না থাকা, ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করায় হতাশ আম চাষিরা। 

এদিকে অত্যাধিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চাষী ও ব্যবসায়িদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরী সভায় হিমসাগর আম ভাঙার দিন ২০ মে থেকে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।

আবহাওয়া ও মাটির বিশেষ গুণাগুণের কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আগেভাগেই পাকে সাতক্ষীরার আম। এর মধ্যে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি দেশে ও বিদেশে বেশ কদর লাভ করেছে। সাতক্ষীরার আম বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ ও বিদেশে চাহিদা বেশি। সরকারিভাবে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। গত বছর এ সময় সাতক্ষীরার তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করলেও এবারের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রীতে বেড়ে যাওয়ায় পাকা শুরু করেছে হিমসাগর আম।

তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড় বাজার, ধুলিহর, আশাশুনি, কলারোয়া, তালা, কালিগঞ্জ সদর ও দেবহাটার বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় বেশি আম ওঠায় কমেছে দাম। তবে সরকাারি পৃষ্টপোষকতা না পেয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে গাছ পরিচর্যার জন্য দাদন নেওয়া, আম বিক্রির জন্য সময় কম পাওয়া ও জেলায় হিমাগার না থাকায় হতাশ আম চাষীরা। তবে আবহওয়ায় গরম হওয়ায় আম ভাঙার তারিখ এগিয়ে আনার দাবি চাষিদের।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার আমবাগান রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি জমিতে গোপালবোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাম খাস ও সরাইখাসসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টণ। ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষের সঙ্গে যুক্ত।সরকারিভাবে আম পাড়ার জন্য ৫ মে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও বোম্বাই, ২০ মে হিমসাগর, ২৭ মে ন্যাংড়া ও ৫ জুন আম্রপালি আম বাজারজাত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফিংড়ি গ্রামের আম চাষী কমলেশ সরদার জানান, এবার আমের ফলন বেশি। গোবিন্দবোগ ও গোপালভোগ আম ১৫ দিন বাজারে থাকে। কিন্তু সরকারিভাবে তিন থেকে চার মাসের জন্য চাষীদের স্বল্প সুদে ঋণ না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়েছে। ফলে বাজার দামের চেয়ে ওই আড়ৎদারের কাছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই এলাকার গোবিন্দ ঘোষ জানান, তাদের দুই ভাইয়ের ৩০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার গোপালবোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, হিমসাগর, ন্যাংড়া, রুপালীসহ নানা জাতের আম রয়েছে তাদের বাড়ানে। তবে তারা যে দামে আম বিক্রি করেছেন তার চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়িরা। এতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, লাভবান হয় মধ্য স্বত্ববোগীরা।

পুরাতন সাতক্ষীরার আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ২০ মে হিমসাগর আম পাড়ার জন্য সরকারি সময় নির্ধারণ করা হলেও বেশি গরম পড়ায় ওই আম আগে ভাগে পেড়ে গোপনে স্প্রে করে সুলতানপুর শেখ পাড়ার সরদার মোটরের মালিক রেজাউল সরদার ও নুরুলের বাড়ির পাশে এবং পিএন ব্যায়াম ল্যাবরেটরীর পাশে মন্টু সাহেবের বেড় এর পাশে কমপক্ষে ৫০টি ঘরে হিমসাগর আম মজুত করে পাকানো ও রং করার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। তিনি আম পাড়ার সরকারি সময় ্এগিয়ে আনার আহবান জানান।

বড়বাজারের ব্যবসায়ি আব্দুল হাকিম জানান, গতবার এ সময় গোবিন্দভোগ আম দুই হাজার ৮০০ টাকায় মণ কিনলেও এবার ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চাষীদের সুবিধার্থে সরকারকে সাতক্ষীরায় হিমাগার স্থাপনের দাবি করেন তিনি।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশান আলী বলেন, প্রতিদিন বাজারে আম ছয়লাপ হয়ে যায়। কিন্তু বাজারে খরিদ্দার কম। তাই চাষীরা ও ব্যবসায়িরা কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম পাড়ার দিন আরো এক সপ্তাহ আগে এগিয়ে আনলে চাষী ও কৃষকরা উপকৃত হতেন।

সটঃ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ হাজার হেক্টর আম এর উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকার আম এবার বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশাবাদি। একইসাথে বিদেশেও আম পাঠানো হবে। গরম বেড়ে যাওয়ায় চাষী ও ব্যবসায়িদের সুবিধার্থে হিমসাগর আম পাড়ার দিন ২০ মে তকে পিছিয়ে এনে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অন্য দিনগুলি ঠিক থাকছে। বুধবার বিকেল ৬টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত এক জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার উদ্যোগ নিলে চাষীরা আগামিতে আমের ভাল দাম পাবেন। এতে আম চাষীর সংখ্যা বাড়বে ও বেকারত্ব কমবে বলে মনে করেন তিনি।

(আরকে/এসপি/মে ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ জুন ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test