E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৫ শিক্ষার্থীর জন্য ১জন করে শিক্ষক!

২০১৪ ডিসেম্বর ০৯ ১৮:৫০:০১
৫ শিক্ষার্থীর জন্য ১জন করে শিক্ষক!

নওগাঁ প্রতিনিধি : বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৭১ জন। কর্মরত আছেন ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারি। তারা নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে সরকারি বেতনভাতার ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৮ টাকা উত্তোলন করছেন। এতে বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ গচ্চা গেলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি নেই এই প্রতিষ্ঠানের দিকে। গত এক বছর ধরে এ অবস্থা চলছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে রয়েছে, প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে ২শ’ জন ও বালিকার ক্ষেত্রে ১শ’ জন শিক্ষার্থী প্রয়োজন। তবেই পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি ও এমপিওভূক্তিসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন সেই প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে, এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দুটি কক্ষে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১৮ জন, ৭ম শ্রেণিতে ২৩ জন ও ৯ম শ্রেণিতে মাত্র ১০ জন। বিদ্যালয়ের পুরনো জীর্ণ ভবনের একটি কক্ষে ৭জন শিক্ষার্থী নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিমুলক কোচিং চলছে। তবে ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী ফরম পুরন করেছে। সদ্য সমাপ্ত জেএসসি পরীক্ষায় এই প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ১১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এটিই হচ্ছে খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লিতে খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয় ২০০০ সালে। এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক ছাড়াও ৯জন সহকারি শিক্ষক, ১জন গ্রন্থাগারিক, ১জন অফিস সহকারি, ১জন এমএলএসএস ও ১জন নৈশ্য প্রহরী। বর্তমান বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৭১ জন। এত অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারিরা প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে ব্যাংক থেকে সরকারি বেতনভাতার ১লাখ ৬৭ হাজার ১৩৮ টাকা উত্তোলন করছেন।

বিদ্যালয়ের এ করুণ চিত্রের অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে অনেক চমকপ্রদ তথ্য। প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারিদের দ্বন্দ্বই এ ভগ্নদশার অন্যতম কারণ। এজন্য গত এক বছরে তিনবার এ বিদ্যালয়ের কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। তবুও দ্বন্দ্বের নিরসন হয়নি। দিনদিন এই দ্বন্দ্ব আরো জটিল আকার ধারণ করছে। সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলামসহ স্থানীয়দের একাংশ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। এ অবস্থায় কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ ছাড়াই গত ১৩ নবেম্বর বিধিবহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটি। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার আবেদন করেছেন প্রধান শিক্ষক। এসব দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন অনিয়ন ও দুর্নীতির জন্য প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ম্যানেজিং কমিটি বরখাস্ত করেছে কি-না সে বিষয়টি এখনো আমি অবগত নই।

তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুর আলম বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এখনো কোনো রিপোর্ট দাখিল করেন নি। দুই মাস পরপর বিদ্যালয় পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও গত ছয় মাসে একবারও তিনি এ প্রতিষ্ঠানে যাননি। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুর আলম বলেন, উপজেলা সদর থেকে অনেক দুরে প্রত্যন্ত পল্লিতে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। রাস্তা-ঘাটের অবস্থাও নাজুক। এসব কারণে সময়মত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করা হয়নি। তবে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই অপ্রতুল বলে স্বীকার করেন তিনি। এদিকে বিদ্যালয়টির ভগ্নদশার জন্য প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারি ও ম্যানেজিং কমিটিকে দায়ি করেন স্থানীয় অভিভাবক মহল। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

(বিএম/পি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test