E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঝিনাইদহের ২ যুবকের মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

স্বজনদের কান্না থামছে না, শেষবারের মত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষা

২০২৫ মে ২৪ ১৯:২৯:২৮
স্বজনদের কান্না থামছে না, শেষবারের মত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষা

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : বারান্দায় বসে নির্বাক দৃষ্টিতে ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদেছেন মা। কখন আসবে প্রিয় সন্তানের মরদেহ। সন্তানকে হারিয়ে পুরো বাড়িজুড়ে শুধুই হাহাকার। চোখের পানিতে ভারি পুরো বাড়ি। মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ একমাত্র ছেলের মরদেহ ফেরত পাওয়ার। সন্তানের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ বাবাও। গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সিমান্তবর্তী গোপালপুর গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে ওবাইদুর রহমান। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গেলে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। কিন্ত এতদিনেও মরদেহ ফেরত না পাওয়ায় পাগলপ্রায় নিহতের পরিবার। মায়ের শেষ চাওয়া, যেন ছেলের লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। 

ওবাইদুরের পরিবার জানায়, ওবাইদুর ঢাকায় গাড়ি চালাতো। মাঝে মধ্যেই বাড়িতে আসতো। শেষবার বাড়িতে এসে শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ওবাইদুরসহ ৭/৮ জন ভারতে প্রবেশ করে। এ সময় ভারতের মধুপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলে। বিএসএফের হাত থেকে অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও ওবায়দুর ধরা পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। পরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে ওবায়দুলের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। এরপর ভারতীয় সিমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ ওবাইদুরের মরদেহ নিয়ে যায়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তার মরদেহ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। ভারতের অভ্যন্তরে নিহত হওয়ায় মরদেহ ফেরত পেতে হাইকমিশনে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে বিজিবি।

ওবাইদুরের বোন অন্তরা খাতুন বলেন, ‘সন্ধ্যায় ধান মাড়াইয়ের কাজ করছিল ওবাইদুর। ফোন আসলে কাজ ফেলে রেখে চলে যায় সে। এরপর বাড়িতে ফেরেনি সে। বিএসএফ তাকে মেরে লাশ নিয়ে গেছে। মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও তার মরদেহ পায়নি।’

ওবাইদুরের মামা আব্দুস সালাম বলেন, ‘সে অন্যায়ভাবে ভারতে গিয়েছিলো,তার শাস্তি সে পেয়েছে। কিন্তু এতদিনেও তার মরদেহ ফেরত আনতে পারেনি বিজিবি। এটা বিজিবির গাফিলতি ছাড়া আর কিছু না।’

মা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘ছেলের মরদেহ ফিরে পেলে তাকে দাফন করে মনকে বোঝাতে পারতাম যে ছেলে আমার কাছেই আছে। বিজিবির কাছে বার বার গেলেও তারা মরদেহ ফেরত এনে দিতে পারেনি। বিজিবি বলেছে, বৈধ উপায়ে ভারতে গিয়ে সকল কার্যাদী সম্পন্ন করে মরদেহ আনতে হবে। আদৌ মরদেহ আনতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না। মন আর মানছে না।’

অন্যদিকে বিএসএফ’র হাতে নিহত হওয়া মহেশপুর সীমান্তের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিমের পরিবারেরও চলছে শোকের মাতম। ওয়াসিম ওই গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। মাস পেরিয়ে গেলেও তার মরদেহ ফেরত না পাওয়ায় কান্না থামছে না বাবা-মায়ের।

পরিবার জানায়, ওয়াসিমসহ আরও চারজন গত ৬ এপ্রিল অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে যায়। এসময় ভারতের হাবাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল তদের ধাওয়া দেয়। পরে বাকিরা পালিয়ে আসলেও ওয়াসিম ধরা পড়ে। পরে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হুদাপাড়া এলাকার ইছামতী নদীতে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাংলাদেশি কৃষকেরা। পরে স্থানীয় লোকজন সেখানে গিয়ে নিশ্চিত হন, মৃতদেহটি ভারতের অংশে রয়েছে। তাঁরা বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানালে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটিকে ভারতীয় অংশে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর বিজিবি বিএসএফকে জানায়। পরে রাত ১০টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা মৃতদেহটি নদী থেকে নিয়ে যান।
পরিবারের অভিযোগ,বিএসএফ ওয়াসিমকে পিটিয়ে হত্যার পর ইছামতি নদীতে ফেলে দিয়েছে।

ওয়াসিমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘ছবি দেখে নিশ্চিত হই নদীতে ভেসে থাকা মরদেহ ওয়াসিমের। এরপর সেই ছবি নিয়ে বিজিবির সাথে যোগাযোগ করি। বিজিবি মরদেহ ফেরত আনার আশ^াস দেন। তারা কিছু প্রমাণ চান এবং লিখিত অভিযোগ নেন। পরে কয়েকদিন পরে তারা বলে আমরা মরদেহ আনতে পারবো না। থানায় যোগাযোগ করে ভারতে গিয়ে মরদেহ আনতে হবে।’

ওয়াসিমের বাবা রমজান আলী বলেন, ‘ছেলের মরদেহ পেলে অন্তত দাফন করতে পারতাম। নিজের মনতে শান্তনা দিতে পারতাম। কিন্তু তা হবে কিনা জানিনা।’

ওয়াসিমের মা ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘বিজিবির কাছে মরদেহ ফেরত আনার কথা বললে তারা বলে থানায় মামলা করে পাসপোর্ট-ভিসা করে ভারতে গিয়ে মরদহে নিজেদের আনতে হবে। আমরা মুর্খ মানুষ,অন্য একটা দেশে গিয়ে কিভাবে মরদেহ আনবো?’

মরদেহ ফেরত আনার ব্যাপারে ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘বিএসএফ জানিয়েছে ওয়াসিমের মরদেহটি ভারতের পুলিশের কাছে আছে। তারা তার মরদেহটির ময়নাতদন্ত করেছে।

ভারতীয় পুলিশের ভাষ্যমতে, মরদেহ নিতে হলে বৈধভাবে ভারতীয় পুলিশের কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ ও সনাক্ত শেষে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে এনওসি নিতে হবে। পরে তাদেরকে ফরেনার রিজিওনাল রেজিষ্ট্রেশন অফিসে গিয়ে যাবতীয় কার্যাদী সম্পন্ন করতে হবে। এই বিষয়গুলো ওই দুই পরিবারকে জানানো হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে যাতে তারা মরদেহ ফেরত আনতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে।

বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতীয় বিএসএফ’র সাথে অনেকবার পতাকা বৈঠক সহ নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। বিএসএফ জানিয়েছে, বিষয়টা পুরোপুরি ভারতীয় পুলিশ হ্যান্ডেল করছে। তাদের কিছু করার নেই। সেইক্ষেত্রে তারা বলেছে,পরিবারের পক্ষ থেকে বৈধ উপায়ে ভারতে এসে সকল কার্যাদী সম্পন্ন করে মরদেহ ফেরত নিতে হবে।’

(এসআই/এসপি/মে ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ জুন ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test