E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রৌমারীর শহীদ ৯ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অভাব অনটনে!

২০১৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৬:৫৫:৪৭
রৌমারীর শহীদ ৯ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অভাব অনটনে!

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যে ৯ শহীদ বীরসেনাদের কারনে পাকবাহিনীর কলুষিত পা রৌমারীর মাটিকে স্পর্শ করতে পারেনি। যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকহানাদার বাহিনীদের রৌমারীতে ঢুকতে দেয়নি এমনকি তাদের পিছু হটতে বাধ্য করে। সেই ৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আজ অসহায়। নিজেদের স্বাধীন করা দেশে আজ তারা লড়াই করছে অভাবের সঙ্গে। তাদের পরিবারকে দেওয়া হয়নি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। শহীদদের স্ত্রী সন্তান ও ভাইবোনরা আজ চরম অবহেলিত।

মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন, কছিবর রহমান, আব্দুল আজিজ খন্দকার, বদিউজ্জামান, আব্দুল মজিদ, আবুল হোসেন, আব্দুল লতিফ, আবু আসাদ, আব্দুল বারী ও আব্দুল হামিদ। সরেজমিনে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের পরিবারের করুন বাস্তবচিত্র দেখা গেছে। উপজেলার বাইটকামারী গ্রামে বাড়ি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু আসাদের বাড়ি। তাঁর বাবা হাজী আব্দুর রশীদ ও মা নছিরন বেওয়া বেঁচে নেই। তবে তাঁর দুই ভাই ও দুই বোন বেঁচে আছেন। আসাদের ছোট ভাই ফরহাত হোসেন বলেন, ‘আমি তখন ৭ম শ্রেণিতে পড়ি। ভাই কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর পাউবোতে (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) চাকরি হয়। চাকরিতে যাগদানপত্র হাতে পাওয়ার পরও ভাই আমার চাকরিতে যোগদান করেনি। দেশের স্বার্থে ছুটে যায় মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষনে। রৌমারী সিজি জামান হাইস্কুল এবং ভারতের কুচবিহার প্রশিক্ষন ক্যাম্পে প্রশিক্ষন গ্রহণ করে সরাসরি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।’

তিনি জানান, আবু আসাদ প্রশিক্ষন শেষে বাড়িতে আসে। এসময় খবর আসে পাকবাহিনী চিলমারী থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে রৌমারীর দিকে আসছে। তখন অক্টোবর মাস। মুক্তিবাহিনীদের সাথে আবু আসাদও নেমে পড়ে পাকবাহিনীদের প্রতিরোধে। তাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকহানাদার বাহিনী। পরে তারা দু’ভাগে ভাগ হয়ে চিলমারীর অব্দায় অবস্থিত পাকবাহিনীদের ক্যাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে পাকবাহিনীদের বুলেটে আবু আসাদ নিহত হয় (১১অক্টোবর)। তার লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফরহাত হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার আমাদের কোনো সম্মাননা দেয়নি। আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো চাকরিও হয়নি। অভাবের সঙ্গে লড়াই করছি আমার।’

রৌমারী উপজেলার টাপুরচর গ্রামে আরেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদের বাড়ি। বাবা জিন্নত উল্লাহ ও মা ফুলজান বেগম বেঁচে নেই। তার দুই ভাই ও ৫ বোন বেঁচে আছে। ভাইদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চিলমারী যুদ্ধে আব্দুল মজিদ পাকবাহিনীদের গুলিতে নিহত হয়। তারও লাশ দেখতে পায়নি তাদের স্বজনরা। ওই শহীদ আব্দুল মজিদ এর স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে বেঁচে আছেন। তাঁর পুত্র সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের জন্য যুদ্ধ করতে আমার বাবা শহীদ হয়েছেন। এটাই আমাদের গর্ব। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারের দেওয়া ভাতা তার পান।’

একই চিত্র দেখা গেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রায় সব পরিবারই। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল কাদের বলেন, ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মননা দেওয়া উচিত। বিশেষ করে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা সবাই অভাট অনটনের সঙ্গে লড়াই করছে।’

(আরএ/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test