E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারায়ণগঞ্জে আইনজীবী সমিতির স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত

২০১৪ মে ০৪ ১৮:৪১:১৯
নারায়ণগঞ্জে আইনজীবী সমিতির স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : কোথাও কোন ধরনের সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জে জেলা আইনজীবী সমিতির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতাল নজির বিহীন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭জন হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে এ হরতালের আহবান করা হয়।

হরতালে সড়ক ও রেলপথে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলনা। সকল মার্কেট ও বিপনী কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়। সংঘর্ষের আশংকায় নগরীতে বিজিবি ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। আতংক সৃষ্টির জন্য নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ জলকামান নামানো হয়।একই দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরা গতকাল সকাল থেকে তাদের ৪৮ঘন্টার কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। সকালে আইনজীবী সমিতির হরতালের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও কাউন্সিলররা। এদিকে ফতুল্লা থানায় দায়ের করা নজরুল ও চন্দন সরকার হত্যা মামলার তদন্ত ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সকাল থেকেই আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থান নিয়ে দিনব্যাপী সভা সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা এডভোকেট চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুর ইসলামসহ সেভেন মার্ডারের আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন বলেন,আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করেছি। দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ আমাদের হরতালকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন ও অংশগ্রহন করেছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসী খুনী ও অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। গণমানুষের এ আন্দোলনকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাবেনা। খুনীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে পিছ পা হব না। খুনীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। তিনি এ হরতালকে সন্ত্রাসী ও খুনীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীর নীরব প্রতিবাদ বলে মনে করেন।
এদিকে সকালে নগর ভবনের সামনে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরা ৪৮ ঘন্টা কর্মবিরতি দিয়ে সমাবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও কাউন্সিলররা সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির হরতালের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। সমাবেশে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, প্রশাসন পারেনা এমন কিছু নেই। আমি আমার কাউন্সিলর ও নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে হত্যাকান্ডের বিচার চাই। তিনি বলেন, প্রশাসনে রদবদল এসেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।আমাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। সিটি কাউন্সিলররা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন নারায়ণগঞ্জে এখন জনপ্রতিনিধিদেরও জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই।কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, একজন এম.পি হয়েও শামীম ওসমান জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় জি.ডি করেছেন।তাহলে নারায়ণগঞ্জবাসীর নিরাপত্তা কোথায়? কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না বলেন,হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবীতে আমরা আজ থেকে ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা সকল অন্যায়ের বিুরুদ্ধে সব সময় জনগণের পাশে আছি।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলিতে সকাল থেকেই জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা গণসংহতি আন্দোলন, বিএনপি, সিপিবি-বাসদ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, আমরা নারায়নগঞ্জবাসি সকাল থেকেই হরতালের সমর্থনে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।শহরের ডিআইটি এলাকায় আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী নামে একটি সংগঠন কালোপতাকা মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক গুলি প্রদক্ষিন করে। সকাল থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা রোড, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী রোড ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের একাংশে বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। শহরে একটি রিকশাও চলাচল করতে দেখা যায়নি। এমনকি চায়ের দোকান পর্যন্ত বন্ধ ছিল। নগরীর বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষার কারণে খোলা রাখা হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে কোন ট্রেন ছেড়ে যায়নি। এদিকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান ছিল চোখে পরার মত।

(এএইচপি/এএস/মে ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test