E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে কর্মসৃজন প্রকল্পে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ

২০১৫ জানুয়ারি ০৯ ১৫:৪২:৪৭
রায়পুরে কর্মসৃজন প্রকল্পে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চলতি বছরে হতদ্ররিদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে শ্রমিক মজুরি দেখিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ রকম গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্মসৃজন প্রকল্পের নামে দৈনন্দিন শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে। যে কারণে সবগুলো প্রকল্পেই অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, তদারকি কর্মকর্তাসহ ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত। তবে তাদের দাবি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ৪০ থেকে ৫০% করে কমিশন দিতে গিয়েই কিছু অনিয়ম করতে হচ্ছে।

এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের ১৯ দিন পর কাজ শুরু করা, নিয়মানুযায়ী শ্রমিক দিয়ে কাজ না করানো ও সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর রায়পুর উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় এ নিয়ে কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেন। খোঁদ ওই সভার সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।এসময় তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ঘুষ বানিজ্য বন্ধের নির্দেশ দেয়। তাঁর ভাষ্যমতে, পিআইও’র বেপরোয়া কমিশন আদায়ের কারণে এসব উন্নয়ন কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪০টি প্রকল্পে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে মোট ১ হাজার ৩১৭ জন শ্রমিকের জন্য প্রতিদিন ২শ টাকা হারে মোট ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪শ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। জনসংখ্যানুপাতে ওই শ্রমিক ইউনিয়ন পর্যায়ে তা বিভাজন করা হয়। বরাদ্দ ও তালিকা পাওয়া পর দৈনন্দিন শ্রমিকের সংখ্যা নির্ধারণ করার সময় সংশি¬ষ্ট জনপ্রতিনিধিরা প্রতিটি ইউনিয়নে প্রকল্প অফিসের জন্য একজন, প্রতি ওয়ার্ডে চেয়ারম্যানের একজন করে মোট ১০ জন, ইউপি সদস্যদের প্রতি ওয়ার্ডে ৩ জন করে মোট ৩০ জন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ২ জন করে মোট ২০ জন এবং মহিলা সদস্যদের ৩ জনসহ মোট ৬৫ জন শ্রমিকের ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেন। এসব তালিকাভুক্ত ভুয়া শ্রমিকের নামে প্রতিদিনের মজুরি হিসেবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র আরও জানায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অতিরিক্তি কমিশন দিতে গিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নরে প্রকল্পে ৫৫ থেকে ৬০ জনের ভুয়া শ্রমিকের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভুয়া নামধারী শ্রমিকরা কোনো দিন উপস্থিত থাকেন না। অথচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে বরাদ্দকৃত টাকা নিয়মিত উত্তোলন করে তা ভাগাভাগি করে নেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের ১নং ওয়াগের ঝাউডুগি সড়ক, ৯নং ওয়ার্ডের ঝাউডুগি-হায়দরগঞ্জ সড়ক ও বামনী ইউনিয়রে ২ নং ওয়ার্ডের সরকারি বাড়ি সড়কে ফারুক, শাহেদুল হক, আক্তার, জসিম, জারিক, জাহাঙ্গীর হোসেন, আমিন, ফিরোজ, মান্নান, মোস্তফা, রাশেদ, তোফায়েল নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু তারা কোনো দিনও কাজ করেননি। অথচ এদের নাম শ্রমিকদের তালিকায় ব্যবহার করে নিয়মিত টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ দফতরের সকল কর্মচারিদের অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে গিয়ে এসব অর্থ লুটপাট করার অভিযোগও রয়েছে।

হায়দরগঞ্জ ও রায়পুর সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে শ্রমিকদের হিসাব নম্বরে টাকা প্রদানের কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উৎকোচ নিয়ে প্রকল্প সভাপতির হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও অভিন্ন কৌশলে প্রতিদিন নিয়মিত ৫০ থেকে ৫৫ জনের ভুয়া শ্রমিকের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে তা ভাগাভাগি করে নেয়া হচ্ছে। এ সময় শ্রমিকদের হাতে কোনো কাজ না থাকায় সরকার কর্মসৃজন কর্মসূচি চালু করেছে। যাতে একাধারে ৪০ দিন কাজ করে শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পায়। অথচ রায়পুরে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পকেট ভারী করায় সরকারের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

রায়পুর উপজেলার চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রকল্প কজে বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অতিরিক্তি টাকা দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন। এতে গত ৩১ ডিসেম্বর আইনশৃখলা উন্নয়ন সভা তিনি বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অতিরিক্তির টাকা না দেওয়ার জন্য বলেন। তার পরেও যদি তিনি এক কাজ করে থাকেন তাহলে অতান্ত দুঃখজনক। বিষয়টি এমপি মহাদয়কে বলা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার বলেন, আমার কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে বর্তমান শ্রমিক মুজরী ৪’শ টাকার করে কাজ করতে চায় না। এতে অনেক প্রকল্পে কিছু শ্রমিক কম নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তবে কমিশনের বিষয়টি সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান বলেন, পূর্বের কিছু ঘটনা নিয়ে তিনি নিজেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সামনের কোন কাজ নিয়ে অনিয়ম না কার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআরএস/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test