E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাঘ শুমারির মধ্যেই চলছে বাঘ হত্যা, আটক ৩

২০১৫ জানুয়ারি ১৪ ১৮:০৫:২৬
বাঘ শুমারির মধ্যেই চলছে বাঘ হত্যা, আটক ৩

বাগেরহাট প্রতিনিধি : একদিকে সুন্দরবনে চলছে বাঘ শুমারি,- অন্যদিকে পল্লা দিয়ে চলছে বাঘ শিকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। শিকারীদের দৌরত্ব্যে সুন্দরবন থেকে কমে গেল বনের প্রাকৃতিক পাহারাদার  হিসাবে খ্যাত একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব-৮) অভিযান চালিয়ে ১টি বাঘের চামড়া, বিপুল পরিমান হাঁড়গোড় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ বাগেরহাটের শরণখোলার চিহ্নিত তিন পাচারকারীকে আটক করেছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলাধীন নব্বই রশি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে র‌্যাব। আটক তিন চোরা শিকারী হলো, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন সোনাতলা ঢালিরঘোপ গ্রামের ইউসুফ শেখের দুই ছেলে মো. দেলোয়ার শেখ (৩৪) ও নূরুজ্জামান শেখ (৫২) ও ধানসাগর ইউনিয়নের ছোট নলবুনিয়া গ্রামের আব্দুল হক হাওলাদারের ছেলে কবির হাওলাদার (৪০)। আটকরে পর তাদেরকে ওই রাতেই বরিশাল র‌্যাব-৮ এর হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। বাঘ শুমারি চলাকালীন এ ধরণের ঘটনায় বনবিভাগের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদীরা।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফরিদুল আলম বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪৫মিনিটের দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মেজর আদনান কবিরের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল মোরেলগঞ্জ নব্বইরশি বাসস্ট্যান্ডের ইব্রাহীম শেখের মোটর সাইকেল গ্যারেজের পূর্ব পাশে একটি বটগাছের নিচে সন্দেহভাজন কিছু সংখ্যক লোককে আনাগোনা করতে দেখেন। এসময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের ওপর গোপন নজরদারি করতে থাকে। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা কৌশলে তাদের দিকে অগ্রসর হলে ওই দুষ্কৃতকারীরা দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে দেলোয়ার শেখ, নূরুজ্জামান শেখ ও কবির হাওলাদার তাদের হাতে ধরা পড়েন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা ইউসুফ শেখের অপর ২ ছেলে ছগির শেখ , কবির শেখ, একই গ্রামের মৃত আব্দুল হক এর ছেলে এমাদুল শেখ ও মনেছ হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

র‌্যাব জানায়, আটকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, তারা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া বিক্রয় ও পাচারের সাথে জড়িত । তাদের কাছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরর চামড়া, হাড়, দাঁতসহ মাথা রক্ষিত আছে। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক স্থানীয় জনসাধারণের উপস্থিতিতে আসামীদের কাছ থেকে ১টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারে চামড়া (লেজসহ ৯ ফিট ৭ ইঞ্চি লম্বা), শরীরের সকল অংশের সর্বমোট ২৪টি হাঁড়, ২৯টি দাঁত, ১টি মাথা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা আরও স্বীকার করে যে, তারা ১০-১৫ বছর ধরে রয়েল বেঙ্গল টাইগা, হরিণ, কুমির ও অন্যান্য বন্যপ্রাণির চোরা শিকারী ও পাচারকারী।

তারা পরস্পর যোগসাজসে এসব বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণির চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার করে আসছে। তারা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণি ফাঁদে আটকিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে চামড়া ছাড়িয়ে অধিক মূল্যে দেশের বাইরে পাচার করে আসছে। তাদের এরূপ নিষিদ্ধ শিকার ও ব্যবসার মনোবৃত্তির কারণে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে বলে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান। এঘটনায় বুধবার বিকালে র‌্যাব-৮এর ডিএডি এটিএম মাহবুব বাদী হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানায় আটককৃতদের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে।

শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন সোনাতলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ডালিম হাওলাদার জানান, ইউসুফ শেখ ও তার পাঁচ ছেলে একই গ্রামের শামছু ফকিরের ছেলে ইব্রাহীম ফকির ও রায়েন্দা ইউনিয়নের চালরায়েন্দা গ্রামের মৃত মোতাহার হোসেনের ছেলে নবী হোসেনসহ ১০-১২ জনের একটি চোরা শিকারী চক্র ১০-১৫ বছর ধরে বন্যপ্রাণি শিকার ও তার চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার করে আসছে। নূরুজ্জামান শেখ, নবী হোসেনসহ এই চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বাঘ, হরিণ, কুমিরের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ একাধিকবার আটক হলেও আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় একই পেশায় ফিরে যায়। এদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য।

পরিবেশবাদী নেতা সুন্দরবন সংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন খলিফা বলেন, বাঘ না থাকলে এতোদিনে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যেত। বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পাহারাদার। প্রতিবছরই দু-একটি বাঘ চোরা শিকারীদের হাতে মারা পড়ছে। বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অপরাধের সহযোগীতা করছে। তা-নাহলে চোরা শিকারীরা বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণি শিকার করে নির্বিঘ্নে বন থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না। এব্যাপারে সরকারের আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ।

পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে স্বীকার করে বলেন, চোরা শিকারীদের দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা নিয়ে বনবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ডিএফও বলেন, ২০০৪ সালের পায়ের ছাপের মাধ্যমে শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ক্যামেরার মাধ্যমে পুনরায় বাঘ শুমারি শুরু হয়। তা এখনো চলমান রয়েছে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test