E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা

বাগেরহাটে নিষিদ্ধ গাইডে সয়লাব

২০১৫ জানুয়ারি ২১ ১১:৩৮:০৪
বাগেরহাটে নিষিদ্ধ গাইডে সয়লাব

বাগেরহাট  প্রতিনিধি : বাগেরহাটে প্রাথমিক, নিন্ম মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে নতুন বছরের ক্লাস শুরু হতে না হতেই নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছে প্রকাশকরা।

গাইড বই প্রকাশকদের পক্ষে নিয়োজিত মার্কেটিং বিভাগের প্রতিনিধিরা স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে বিক্রির জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কতিপয় শিক্ষক সহ স্থানীয় একাধিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের সাথে ডোনেশন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এ ডোনেশন বানিজ্য জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মংলা, রামপাল, চিতলমারী, মোল্লাহাট, কচুয়া, ফকিরহাট ও সদর উপজেলার প্রায় সর্বত্রই কম-বেশী ছড়িয়ে পড়েছে। জেলাব্যাপী এ বানিজ্যের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে। অন্যদিকে, গাইড নির্ভরশীলতার ফলে সরকারের সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বাগেরহাট জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলার সর্বত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ব্যাবহার। শরণখোলা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে ২০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯ টি মাদ্রাসা ও ১১৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাবর্ষের কয়েক হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রাইম, নিউটন, পাঞ্জেরী, ক্যাপিটাল, স্কলার, গ্লোবাল, নবপুথি ঘর, ক্যাপ্টেন, রূপসি, গোল্ডেন এ প্লাস, কনকর্ট, সাইমা, আশার আলো, আলফাতা, আল বারাকা, আল বানার, আল ইত্তেফা, গ্লাক্সি, অনুপম, ইসলামিক পাঞ্জেরী, নবদূত, আলফালা ও আল সামাদ পাবলিকেশন্স সহ শতাধিক প্রকাশনী ব্যাপক ভিত্তিতে ১ম শ্রেনী থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত গাইড বই প্রকাশ করছে। এছাড়া বাংলা ব্যবকরন, ইংরেজী গ্রামার ও এস,এস,সি টেষ্ট পেপারসহ স্বস্ব বিভাগের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের সাথে ডোনেশনের নামে চলছে অর্থনৈতিক চুক্তি। স্কুলের ছাত্র সংখ্যার ভিত্তিতে এ ডোনেশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে স্কুল প্রতি এক থেকে দেড়লাখ টাকা আগাম ডোনেশন দেয়া হচ্ছে। শুধু ডোনেশন নয় তার সাথে সারা বছরের সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফ্রি দেয়ার চুক্তি হচ্ছে। উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের এক বই বিক্রেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, যে গাইড বইয়ের দাম ৬৫০/৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে তার মূল্য ২০০/২৫০ টাকা গাইড প্রতি ২০/২৫ ভাগ কমিশন নেয়া হচ্ছে। প্রকাশকরা বই প্রতি ২/৩ গুন দাম বেশি ধার্য করেছে। বাড়তি টাকা অভিভাবদের পকেট থেকে কোম্পানীগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া সারা বছর বই বিক্রি করে ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ করা গেলেও বাংলা ব্যকরণ/ইংরেজী গ্রামার সহ বিষয়ভিত্তিক এক এক জন শিক্ষক কমিশন পাবে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা।এছাড়া স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি ৬ লাখক টাকা, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ৩ লাখ টাকা ইতিমধ্যে কোম্পানিতগুলোর কাছ থেকে ডোনেশন নিয়েছে এবং মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে দর কষাকশি চালাচ্ছে। এবিষয় উপজেলা রাজৈর এলাকার বাসিন্দা স্বামী পরিত্যাক্তা পিয়ারা বেগম বলেন, তার ছেলে সাব্বিরকে এবছর স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করেছে। সরকারী বই পেলেও এখন নতুন করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার গাইড বই কিনতে হবে।
একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষকরা আন্তরিক হলে ছাত্র/ছাত্রীদের গাইড বইয়ের প্রয়োজন পড়েনা। কিছু অসাধু শিক্ষক অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য ছাত্র/ছাত্রীদের মাথা বিক্রি করে কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। এবং সৃজনশীল পদ্ধতিতে মুল বই পড়াতে হলে শিক্ষকদের ব্যাখ্যা বিশ্লেশন পড়তে হয়। আর এজন্য শিক্ষকদে পড়ালেখা করে ক্লাসে আসতে হয়। অনেক শিক্ষক প্রাইভেট নিয়ে এত ব্যাস্ত থাকেন যে, পড়াশুনা করার সময় তারা পান না। তাই শিক্ষকরা ক্লাসে গাইড বই পড়ান। অন্যদিকে, উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সভাপতি ও বাগেরহাট সরকারী পি.সি. কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার আকন জানান, গাইড প্রকাশনা কোম্পানী গুলোর সাথে অনৈতিক চুক্তি করে শিক্ষক নামধারী ব্যাক্তিরা তাদের স্বার্থ হাসিল এর জন্য সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাইছে। এব্যাপারে শীগ্রই মন্ত্রনালয়ের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
শরণখোলা উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ সুলতান আহম্মেদ বিএসসি ও মাওলানা আব্দুস সালাম জানান, কয়েকটি কোম্পানী তাদের সাথে ইতিমধ্যে চুক্তি করতে চাইলেও তারা জানিয়েছেন চলতি বছরে এবিষয়ে কোন অর্থনৈতিক চুক্তি সম্ভব না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, কোন বিদ্যালয়ে যেন গাইড বইয়ের ব্যবহার না হয় সেজন্য তিনি ইতিমধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহিত করেছেন। এছাড়া যারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে ডোনেশনের নামে অনৈতিক সুবিধা নিবে ওই সকল শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমত সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ ব্যাপারে জুপিটার, স্কলার, আলবারাকা, প্রাইম ও গ্লোবাল সহ কয়েকটি পাবলিকেশন্স এর মার্কেটিং বিভাগের প্রতিনিধিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
(একে/পিবি/জানুয়ারি ২১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test