E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবন ও মংলা বন্দর রক্ষার্থে চলছে নদী খনন

২০১৫ জানুয়ারি ২৫ ১৯:০১:৪৫
সুন্দরবন ও মংলা বন্দর রক্ষার্থে চলছে নদী খনন

রামপাল (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরই এগিয়ে চলেছে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন কাজ। নদীর উপর নির্ভরশীল রামপাল-মংলার এই কৃষি নির্ভর জনপদকে পূনরুজ্জীবীত ও মংলা বন্দরের অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি আনতে এই চ্যানেল পুনঃখনন যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। তবে  গত ২ মে ২০১৪ থেকে খনন কাজ শুরু হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছেনা। খনন কাজের ধীরগতী, সমন্বয়হীনতা, সংযোগ নদী খালসমূহের স্রোতধারা এখনও চ্যানেলে যুক্ত না হওয়ায় কাজের সফলতা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেল সচলকরনে উপজেলার বেশ কয়েকটি খালের বাঁধ ও পলি অপসারন করার কাজ হাতে নেয়া হয়। বর্তমানে উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের ঘাড়ার খাল,বাঁশতলীর খাল,ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের চ্যাটার্জিখাল, পেড়িখালী ইউনিয়নের কুমারখালী খাল, রমজাইপুর ইউনিয়নের মাদারতলা খাল, পেড়িখালী খাল, তালতলার খাল, সিকিরডাঙ্গা ট্যাপা আলীর খাল,আমতলার খাল,রামপাল উইনিয়নের ওড়াবুনিয়া খাল,নলবুনিয়া খাল,রামপাল খালের খননকাজ চলছে। এই কাজে শুরু থেকেই ১০ হাজার ৮শত শ্রমিক শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জনের উপরে শ্রমিক কাজ করছে। ১৫৮ টি ছোট বড়ো বাঁধ অপসারন করা হয়েছে ও এই প্রকল্পে বরাদ্বের পরিমান ১০৮.৬৮২ মেট্রিকটন গম।

সূত্র জানায়, বিআইব্লিউটিএ ২০০৯/২০১০ প্রথম দফায় খনন কাজ শুরু করে ব্যার্থ হয় । পরবর্তীতে ২০১০/২০১১ সালে আরেক দফায় নদীর কিছু অংশে খনন পরিচালনা করলেও এ কাজের ধারাবাহিকতা না থাকায় চ্যানেলটি সচল রাখা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায়,বিআইডাব্লিউটিএ নদী গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভারনমেন্টাল জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (সিইজিআইএস) কে দিয়ে সার্ভে করায়। তারা ভালভাবে নদীর গতি প্রকৃতি অনুধাবন না করে এর সমস্যা চিহ্নিত এবং উত্তরণের উপায় খুজে বের করেনি। এ প্রতিষ্ঠান সরকারকে সঠিক তথ্য এবং সহযোগিতা দিতে পারেনি । যে কারণে পরপর ৩ দফায় খনন কাজ শুরু করে ৩০/৪০ কোটি টাকা গচ্চা যায়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস কে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আবারও কাজ দেয়। তাদের সমীক্ষায় বলা হয়, বিঞ্চু নদী ও দাউদখালী নদী খনন করে জোয়ার ভাটা প্লাবন ভূমিতে প্রবেশের ব্যবস্থা, মংলা ঘষিয়াখালীর সাথে সংযোগকারী ৩২টি খাল খনন করে জোয়ার অববাহিকা বন্ধ ও পোল্ডার তৈরীর মাধ্যমে জোয়ার অববাহিকার আয়তন হ্রাস করা হয়েছে। তা বৃদ্ধি করতে হবে। এসব কাজ এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে খনন কাজ শেখ হওয়ার পর পুরো এলাকায় জোয়ার ভাটার প্রভাব বৃদ্ধি পায়।অপরদিকে, বাগেরহাটের ৩৪/২ পোল্ডারের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় জৌখালী সাব প্রজেক্ট যা মল্লিকেরবেড়, বাইনতলা ইউনিয়নের কিছু অংশ, উজলকুড় ইউনিয়ন ও গৌরম্ভা ইউনিয়ন অবস্থিত।

দাউদখালী নদীর আগায় ফয়লা এলাকায় জৌখালী পোল্ডারের অধীনে রেগুলেটর আটকিয়ে একটি মহল ও এর পাশাপাশি দাউদখালী নদীর ২ পাশের খাল প্রভাবশালীরা আটকিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এতে অতি দ্রুত জৌখালী পোল্ডারের দক্ষিন পাশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এ উপর নির্মিত হয় বেশ কয়েকটি আশ্রায়ন বা আবাসন প্রকল্প। এতে দাউদখালী নদী শেষ হয়ে যায়। সেই সাথে ভূমিহীনদের নদীর ২ পাড়ের জমি বন্দোবাস্ত দেওয়া হয় এবং এর সাথে ঝনঝনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন দাউদখালী নদর অববাহিকায় আমাদের গ্রাম নামক এনজিও এর একটি ক্যান্সার কেয়ার প্রকল্প গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, সর্ব প্রথম চ্যানেল সংশ্লিষ্ট ৩২টি খালের অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারণ, অন্যতম শাখা নদী দাউদখালী খনন ও পলি অপসারণ করলে এই চ্যানেল খনন সফলতার আশা করতে পারে। এর পাশাপাশি চ্যানেলের ২ পাড়ে জেগে ওঠা চরে মাটি রাখার ড্যাম্পিং ব্যবস্থা করে চ্যানেল খননের কাজ শুরু করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই নৌ রুটটি চালু করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে পরিবেশ বিষেশজ্ঞ ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের মতামত জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, পরিকল্পনা মাফিক খনন কাজ করলে অবশ্যই চ্যানেলটি দ্রুত সচল করা সম্ভব।

তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ, চায়না হারবারসহ যেসব সংস্থা দিয়ে খননের কাজ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। চ্যানেল সংলগ্ন অন্যতম শাখা নদী দাউদখালী নদী এখনও খনন শুরু হয়নি। গত ৪ জানুয়ারি সরকারের ২ জন মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম চ্যানেল এলাকা পরিদর্শনের পর ১৫ দিনে ৩ লাখ ঘন মিটার মাটি কাটা হয়েছে। সর্ব প্রথম দাউদখালী নদী খনন ও এর উপর নির্মিত সকল বৈধ অবৈধ স্থাপনা অপসারন করে এবং চ্যানেল সংলগ্ন সকল খাল সচল করতে হবে। তা না হলে আবার ও এই খনন কাজ ব্যার্থ হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে এ চ্যানেল খনন করতে হবে। উল্লেখ্য বিআইডাব্লুউটিএ গত বছরের ২২ মে ৫টি ড্রেজার মেশিন নিয়ে এই চ্যানেলটি আবারও খনন শুরু করে। কিন্তু খননে দীর্ঘ সূত্রিতা লক্ষ্য করা যায়। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর এই চ্যানেল খননের জন্য সরকারের উপর চাপ বাড়ে। এতে সরকার চ্যানেল খননের জন্য আবারও জোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত ৪ জানুয়ারী নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ চ্যানেলটি পরিদর্শন করেন।

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা কমিটি ও ওয়াপদা ভেড়িবাঁধ বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, কতৃপক্ষের কাজে সমন্বয়হীনতা এবং মনিটরিং এর অভাব রয়েছে। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতায় ৩৪/২ পোল্ডারের অনুকূলে পরিবেশ বান্ধব ও পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ১শ ৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। ভেড়ীবাঁধ বাস্তবায়ন ও মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল খনন সাংঘর্ষিক নয়। কারন ওই বরাদ্দের ভেতর ১শ ১০ কিলোমিটার নদী খাল খননের বরাদ্দ রয়েছে যা অত্যান্ত পরিবেশ বান্ধব। এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোঃ আরিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চ্যানেল খনন সর্ম্পকিত তথ্য বিআইডাব্লুউটিএ এর কাছ থেকে জানা যাবে। আমার শুধু ১৩ টি খাল খননের দায়িত্ব রয়েছে। যা ইতিমধ্যে ৭৫% সম্পন্ন হয়েছে।

বিআইডাব্লুউটিএ এর স্থানীয় কর্মকর্তা সহকারী ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১০টি ড্রেজার মেশিন ও ১০ স্কুবেটর মেশিন খনন কাজে যুক্ত রয়েছে। সর্বশেষ ১০লাখ কিউবিক ঘন মিটার মাটি খনন করা হয়েছে। খনন কাজ পাওয়া চায়না হারবার কোম্পানি এখনও কাজ শুরু করেনি।

(এপি/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test