E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাহজাদপুরে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা

২০১৫ জানুয়ারি ২৭ ১৪:২৪:৩৪
শাহজাদপুরে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : অবরোধের কারনে মালিকদের রাস্তায় গাড়ি নামানো অনিহা থাকায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১ হাজার ৬০০ মটর শ্রমিক এখন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। অবরোধ ও হরতালের কারনে এসকল বেকার শ্রমিকদের এখন কোন দোকান মালিকও বাকিতে পন্য দিচ্ছেনা ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে এ সকল শ্রমিকরা।

অবরোধ ও হরতালের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে নছিমন-করিমন ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, লেগুনা সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করলেও নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশী ভাড়া আদায় করছে এসকল যানবাহনের চালকরা। তবে এর সত্যতা অস্বীকার করে এসকল যানবাহনের চালকরা জানান, দুএকটি ব্যতিক্রম ঘটনা ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে পুর্বের ভাড়াই নেয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ মটর শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা জানান, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রায় ২ হাজার বৈধ পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধ ও হরতালে কোন বাস ট্রাক না চলার কারণে ২৩ দিন ধরে এসব শ্রমিকের বেশীর ভাগই বেকার হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় সংসার চালাতে এসকল শ্রমিকেরা উচ্চ সুদে স্থানীয় বিভিন্ন সমিতির কাছ থেকে ঋন নিয়ে সংসার চালাচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন তাদের ঋনের বোঝা বাড়ছেই। আর যারা ঋন নিতে পারছেনা তাদের অনেকেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনভাবে দিন কাটাচ্ছে।
শ্রমিকেরা জানান, এরই মধ্যেই ঋনের কিস্তি বোঝার ওপর শাকের আটির মত হয়ে দাড়িয়েছে । বেশীর ভাগ শ্রমিক ঋন নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পাড়ায় অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার শাহজাদপুর বিসিক ও দিলরুবা বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে কথা হয় বাস মালিক সমিতির চেন মাষ্টার জামাল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, লালু শেখ, হাসিব ট্রাভেলসের ড্রাইভার আব্দুল কুদ্দুস, সুপারভাইজার রাসেল শেখ ও শাহজাদপুর ট্রাভেলসের সুপারভাইজার আশান আলীর সাথে। তারা বলেন ‘অবরোধ আমাগরে পতে বসাইছে। কোন দোকানদার আর আমাগরে বাকীকে জিনিস দিতে চায়না। প্রত্যেকদিন বাবি আজ মনে কয় গাড়ি চলবি। ভাই দ্যাশে একি ওইলো’।
সিরাজগঞ্জ মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শাহজাদপুর পৌর মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম শ্রমিকদের দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রায় ২ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। অবরোধে বাস, ট্রাক না চলায় বেশীর ভাগ শ্রমিকের সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকরাও সমস্যায় পড়েছেন। অধিকাংশ বাস ও ট্রাক মালিক ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে গাড়ী কিনেছেন। অবরোধের কারণে রাস্তায় গাড়ী বের করা সম্ভব না হওয়ায় ব্যাংকের কিস্তির টাকা এসব মালিকদের পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যেই কোন কোন মালিক যতসামান্য টাকা পয়সা শ্রমিকদের দিলেও তা দিয়ে পরিবার পরিজন ভরনপোষন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এদিকে শাহজাদপুর-বেড়া, শাহজাদপুর-হাটিকুমরুল (সিরাজগঞ্জ রোড) পথে চলাচলকারী নছিমন চালক সাইফুল ইসলাম ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক হুমায়ুন বলেন‘আমরা ভাড়া বাড়াইনি। শাহজাদপুর থেকে বেড়া পর্যন্ত আগেও ২০ টাকা নেওয়া হতো এখনও তাই নেওয়া হচ্ছে’। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় পাবনা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় আসা আব্দুল মজিদের সাথে। তিনি জানান, তাকে পাবনা থেকে শাহজাদপুর আসতে দু’বার গাড়ী বদল করতে হয়েছে। এরজন্য তাকে ভাড়া গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা। তিনি জানান, ব্যবসার কারণে তাকে প্রায়ই পাবনা যেতে হয়। স্বাভাবিক সময় ৫০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে পাবনায় যাতায়াত করে থাকেন। অবরোধ ও হরতালের কারণে তাকে ডবল ভাড়া গুনতে হয়েছে।
শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ডে কর্মরত চেন মাষ্টার জামাল হোসেন জানান, আমরা যারা মটর শ্রমিক রয়েছি অবরোধ ও হরতালের কারণে আমাদের আয় উপার্জন না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও নছিমন, করিমন ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকদের এখন সুসময় যাচ্ছে। শাহজাদপুর পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের অটোরিক্সা চালক শাহাদত হোসেন জানান, তাকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধুমাত্র সংসারে খরচ যোগাতে অবরোধের মধ্যেও গাড়ী নিয়ে বের হতে হচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন এধরনের অবরোধ তাদের পরিবহন শ্রমিকদের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
(এআরপি/পিবি/জানুয়ারি ২৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test