E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে একই রাতে তিন বাড়িতে ডাকাতি


২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৫:১১:২৭
রায়পুরে একই রাতে তিন বাড়িতে ডাকাতি

রায়পুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে একই রাতে প্রবাসী, অবসর প্রাপ্ত সৈনিক ও ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এসময় ১০-১২ জনের মুখোশপরা সশস্ত্র ডাকাতদল পরিবারের সবাইকে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। বুধবার  মধ্যরাতে উপজেলার বামনী ইউনিয়নের পশ্চিম সাগরদী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানান, ১০-১২ জনের সশস্ত্র মুখোশপরা ডাকাত প্রথমে প্রবাসী আলতাফ হোসেনের বাড়ীর কলাপসিবল গেইট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন। ঘরের সবাইকে জিম্মি করে দুই ভরি স্বর্ণসহ ২০ হাজার টাকার মালামাল লুটে নেয়। একই কায়দায় তার পার্শ্ববর্তী বাড়ীর অবসর প্রাপ্ত সৈনিক আজাদ হোসেনের বাড়ীতে ঢুকে ৬ভরি স্বর্ণসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার মালামাল এবং ব্যবসায়ী ফজলু মিয়ার বাড়ীতে ঢুকে ১০ ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়। এদিকে ডাকাতি রোধে সহযোগীতা কামনা করে বুধবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ নাসিম মতবিনিময় সভা করেছেন।

জানায়, সোমবার গভীর রাতে রায়পুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রামগঞ্জের চণ্ডিপুর ইউনিয়নের কামারহাট এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতদল হানা দেয়। এ সময় ঘরের লোকজনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন দ্রুত 'ডাকাত-ডাকাত' বলে বেরিয়ে আসে। একপর্যায়ে জনতা সাতজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বেশ কয়েকজন পালিয়েও যায়। পরে রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামছুল হক ও মোজাম্মেল হোসেন তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। ডাকাতদের কাছ থেকে দেশীয় চায়নিজ কুড়াল, কোরাবাড়ি, ছুরি ও কয়েকটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের ওমর ফারুক পাটোয়ারীর ছেলে পারভেজ হোসেন (২২), মনির হোসেনের ছেলে জামাল হোসেন (২৭), মৃত শহিদ উল্যার ছেলে কাউছার আলম ওরফে সাদ্দাম (২২), হোসেন আহম্মদের ছেলে রাশেদ (২০), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মনির হোসেন (২৮), মধ্য সাগরদী গ্রামের আলী হায়দার হেনজুর ছেলে আবুল বাশার (২৭) এবং সদর উপজেলার হাসন্দি গ্রামের ইসমাইল সওদাগরের ছেলে বাবর হোসেন (২৫)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটক পারভেজ হোসেন রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। জামাল হোসেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি। সাদ্দাম ছাত্রলীগে করত। রাশেদ ও মনির হোসেন শিবিরের সক্রিয় কর্মী। আবুল বাশার যুবদলের কর্মী। এ ছাড়া বাবর হোসেনের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় একাধিক নির্ভর যোগ্য সূত্র তাঁদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করেছে। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, জামালের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে ডাকাত আটকের খবরে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমবার রাতে রামগঞ্জ থানায় লুধুয়া গ্রামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নিয়ে যান। এ সময় ডাকাতির শিকার ওই ব্যক্তি থানায় ডাকাতদের শনাক্ত করেন। এ নিয়ে সোমবার রাতে রায়পুর থানায় রামগঞ্জে আটক সাতজনসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রায়পুর থানার ওসি মনজুরুল হক আকন্দ বলেন, 'আটক চক্রটি রায়পুরের বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের দলীয় পরিচয় আছে কি না, তা আমার জানা নেই।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদরাসা শিক্ষক জানান, জনতার পিটুনির শিকার যুবকরাই লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ ও আশপাশ এলাকায় মিলেমিশে ডাকাতি করে। দিনের বেলায় তারা সুদর্শন সেজে সড়কে দামি মোটর সাইকেল হাঁকায়। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির সামনেও তাদের দেখা যায়। অনেকেই তাদের অপকর্মের কথা জানলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। কেরোয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাহ আলম বলেন, 'পারভেজের ঘটনা শুনেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কেরোয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল পাটোয়ারী বলেন, 'দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জামালকে বহু আগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাদ্দাম ছাত্রলীগ নয়, যুবলীগ কর্মী।' জেলা শিবিরের প্রচার সম্পাদক ফজলুল করিম বলেন, 'রাশেদ ও মনিরের সঙ্গে শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। ডাকাতদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না।'
কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, 'ডাকাতদের কোনো দল নেই। রাত হলে দলের পরিচয় ভুলে এক হয়ে তারা ডাকাতিতে নামে। আটকরা দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতিতে জড়িত। তাদের কাছে রায়পুর ও রামগঞ্জের কয়েকটি এলাকার মানুষ জিম্মি ছিল।'
(পিকেআর/পিবি/ফেব্রুয়ারি ১২,২০১৫)




পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test