E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টানা অবরোধ সুন্দরবনে পর্যটক নেই

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৪:৩৮:৫৩
টানা অবরোধ সুন্দরবনে পর্যটক নেই

বাগেরহাট  প্রতিনিধি : বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে দেশী-বিদেশী ইকো ট্যুরিষ্টিদের কাছে আকর্ষনীয় করার নেই কোন উদ্যোগ। জীববৈচিত্র্যের ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি সুন্দারবন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান। তবে পর্যটকের সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য ন্যূনতম অবকাঠামো সুবিধা নেই। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও যারা সুন্দরবনে আসেন তারা এখন অবরোধ-হরতালের কারনে আসছেন না। ফলে সুন্দরবনে ইকো ট্যুরিজম বন্ধের পথে।

সুন্দরবন বনবিভাগ সূত্রে জানাগেছে, পর্যটকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২০১০ সালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে ‘সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, চাঁদপাই ও শরনখোলায় ‘পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষন’ নামে একটি প্রকল্প তৈরী করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালায়ে দাখিল করলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। একারনে প্রতিবছরই সুন্দরবনে ইকো ট্যুরিষ্টিদের সংখ্যা কমছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে এই বিভাগে গত বছর যেখানে দেশী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৫শ ৬০ জন ও বিদেশী পর্যাটক ছিল ৩ হাজার ৮শ ৫৪ জন। সেখানে জানুয়ারি থেকে দেড় মাসে এসব কারন ছাড়াও টানা অবরোধ-হরতালে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৪’শ ৮৬ জনে।
সমগ্র সুন্দরবনের মোট আয়াতনের মধ্যে বনভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। এ বনে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। বন্যপ্রানীয় বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিন, লোনা পানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রকার ডলফিন, ১ প্রকার তিমিসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রানী রয়েছে এ বনে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনের নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইকো ট্যুরিষ্টদের সব সময় অকর্ষণ করে। এ কারনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিষধর সাপ ও কুমিরের অক্রমনের ভয় উপেক্ষা করে দুঃসাহসী ইকো ট্যুরিষ্টরা সুন্দরবনের আকর্ষনে বারবার এখানে ছুটে আসেন। ৬ হাজার ১৭ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬ বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ, পড়ন্ত বিকেলে অন্যরূপ, সন্ধ্যায় অপরূপ রূপে সজ্জিত হয়। মধ্য ও গভীর রাতে এক রকম ও চাঁদনি রাতে মোহনীয় রূপে সজ্জিত হয় সুন্দরবন। এছাড়া গভীরভাবে দেখলে ১২ মাসে সুন্দরবন ১২ রকমের রূপ ধারন করে। যা দারুন ভাবে পর্যটদের বিমোহিত করে। এছাড়া টাইগার পয়েন্টের কচিখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্থ দেখার সুযোগ তো রয়েছেই। এতোকিছুর পরও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে টানা অবরোধ-হরতালে ঠিকিয়ে দিয়েছে পর্যটকদের।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, প্রকল্প তৈরী করে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিল করা হয়েছে। প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। তবে সুন্দরবনে করমজলে একটি আরসিসি অবজারবেশন টাওয়ার নির্মান ও কুমির প্রজানন খামার সম্প্রসারন করা হয়েছে। ইকো ট্যুরিষ্টদের সুন্দরবনে যাতায়াতসহ আবাসনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। টানা অবরোধ-হরতালের কারনে সুন্দরবনে দেশী বিদেশী ইকো ট্যুরিষ্টিদের সংখ্যা আশংঙ্কাজনক হারে কমেছে বলে ডিএফও জানান।
(একে/পিবি/ফেব্রুয়ারি ১৮,২০১৫)







পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test