E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরণখোলায় পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

২০১৫ মার্চ ১৫ ১৮:১৩:০৫
শরণখোলায় পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা থানার সকল অপকর্মে হোতা সেই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই গাজী ইকবালের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

সুন্দরবনের নিরীহ জেলেদের বনদস্যু আখ্যা দিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন, প্রতি ২-৩ মাস পর পর সুন্দরবনে অভিযানের নামে হরিণ শিকার এবং অভিযানে গিয়ে বনদস্যু বাহিনীর কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করা গাজী ইকবালের রুটিন ওয়ার্কে পরিনত হয়েছে। এছাড়া মাদক থেকে শুরু করে সকল অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

উপজেলার উসাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের আ. খালেক হাওলাদারের ছেলে মৎস্যজীবী কবির হাওলাদারের (৩৮) অভিযোগে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এসআই গাজী ইকবাল তাকে ধরে এনে তিনি ও কনস্টেবল কৌশিক তাকে বেদম মারধর করেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি কবিরকে নিয়ে সুন্দরবনে অভিযানে যান ওই কর্মকর্তা। তার সাথে বনদস্যুদের সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ এনে তাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। পরে ওই এসআই তার ছোটভাই ছগিরের কাছে খবর পাঠান যে, তোর ভাইকে ক্রসফায়ারের হাত থেকে বাঁচাতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে তার পরিবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের হস্তক্ষেপে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রসফায়ারের হাত থেকে তাকে মুক্তি পান কবির।

কবির আরো জানান, এসময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় তিন শিকারীও ছিল। তারা সুন্দরবনে চাতরা এলাকায় গিয়ে ৫টি হরিণ শিকার করে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। এসআই গাজী ইকবাল তাকে পুরনো অস্ত্র ও চাঁদাবাজীসহ তিনটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। এইসব মামলার সূত্র ধরে তাকে বার বার হয়রানি করছেন। এর আগে আরো দ্’ুবার তাকে আটক করে ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছেন এসআই গাজী ইকবাল।

কবিরের স্ত্রী শিউলী বেগম (২৮) জানান, এস আই গাজীর দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তিনি ইতিমধ্যে তার স্বামীকে ৩টি মামলায় জড়িয়েছেন। গত ৪বছর ধরে তিনি তার স্বামীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে চলেছেন।

এছাড়া ওই কর্মকর্তা উপজেলার উত্তর রাজাপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী জাকির দর্জিকে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে রায়েন্দা বাজারের একটি ওয়ার্কশপের শ্রমিক রুবেল, সোনাতলা গ্রামের রাজ্জাক ও মাঝের চরের জেলে রিয়াদুলসহ নিরীহ মানুষকে আটক করে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেন।

সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা আ. মালেক হাওলাদার জানান, কবিরের সাথে বনদস্যুদের কোনো সম্পর্ক নেই। সে একজন সাধারণ জেলে। স্থানীয় কিছু লোক পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি করছে। পুলিশ তাকে বিভিন্ন সময় মিথ্যা অভিযোগে আটকও করেছে।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, এসআই ইকবালের নির্যাতনে সুন্দরবনের বহু নিরিহ জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে সম্প্রতি তাকে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডা. মোজাম্মেল হোসেনের সুপারিশে স্ট্যান্ডরিলিজ (জরুরি বদলি) করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে তিনি শরণখোলা থানায় স্বপদেই বহল রয়েছেন।

অপরদিকে, দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় উপজেলার সর্বত্র মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দৈনিকে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন পুরোনো মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে অপকর্মের হোতা এসআই গাজী ইকবালকে শরণখোলা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকার সচেতন সমাজ।

(একে/এএস/মার্চ ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test