E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আতংকের জনপদ নোয়াপাড়া !

২০১৫ মার্চ ১৮ ১৪:১২:৪২
আতংকের জনপদ নোয়াপাড়া !

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ৫নং লক্ষীপাশা ইউনিয়নের একটি ছোট্ট গ্রাম নোয়াপাড়া। বর্তমানে এ গ্রামে জনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

এই গ্রামের মাতুব্বর পাড়ার লোকজনদের সাথে একই গ্রামের পূর্বপাড়ার লোকজনদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব প্রায় ২৪ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলে আসছে। বংশানুক্রমে চলে আসা দ্বন্দ্বে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

বুধবার সরেজমিনে নোয়াপাড়া গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ ধরে চলে আসা বিবাদমান দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে এ পর্যন্ত ২ জন নিহতসহ আহত হয়েছে আনুমানিক ৫’শ থেকে ৭’শ মানুষ। শুধু ২০১৪ সালে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। গত ৬ মাসের দ্বন্দ্বে ৯ জনসহ এ পর্যন্ত পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অর্ধ শতাধিক। চাষাবাদ, ব্যবসা ও চাকরী করতে না পেরে প্রতি বছর কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এখানকার মানুষজন। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও। একটু ভাল থাকার জন্য অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। কারণ গ্রামে থাকলে সকলকেই কোন একটি পক্ষ বেছে নিতে হয়, নিরপেক্ষ থাকার কোন অবস্থা নেই। বাধ্যতামূলক সংঘর্ষকালে অংশগ্রহণসহ দিতে হয় মামলা -মোকদ্দমার টাকা।

বর্তমানে মাতুব্বর পাড়ার নেতৃত্বে দিচ্ছেন সাখাওয়াত শেখ ওরফে ছকু (৭০) ও তার ছেলে নূর মোহাম্মদ শেখ (৩৫), পান্নু মেম্বর (৫৫) ও জালাল মাস্টার (৬৫)। অপরদিকে পূর্বপাড়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিবরিয়া শেখ (৫৫), ইয়াছিন মোল্লা (৫০), তারা মিয়া (৫০), সোহরাব গাজী (৫৪), মহসিন মাস্টার (৫৬), গরিব শেখ (৪০), সাহিদুল মোল্লা (৫৫) ও টুকু মিয়া (৭০)।

পূর্বপাড়ার মাতুব্বর টুকু মিয়া বলেন, দু’গ্রুপের দন্ধের জের ধরে ১৯৯৭ সালে তাদের পক্ষের একজন খুন হয়। সে সময় মামলা-মোকদ্দমা মিমাংশার পর দীর্ঘদিন গ্রামে শান্ত ছিল। তবে ২০১০ সালে মাতুব্বর গ্রুপের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক ইমারুল শেখ (২৮) তাদের হাতে নিহত হলে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই হত্যা মামলার মীমাংসা না হওয়ায় বর্তমানে ফের দু’গ্রুপ দ্বন্ধ-সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। থেমে থেমে গ্রামে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।

মাতুব্বর গ্রুপের নূর মোহাম্মদ বলেন, সব মামলা-মোকদ্দমা মিমাংসা করা হলেও ইমারুল শেখ হত্যা মামলার মিমাংসা করা সম্ভব হয় নাই। ইমারুলকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাওয়াতেই পূর্বপাড়ার লোকজন অব্যাহত ভাবে আমাদের ওপর হামলা-মামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
হত্যা মামলার আসামী হয়েও পূর্বপাড়ার নেতারা মাতুব্বর গ্রুপ সমর্থিত লোকজনদের নামে ১০টি মামলা এবং মাতুব্বররাও পূর্বপাড়ার লোকজনদের নামে ১২টি মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে ২২টি মামলার আসামী গ্রামের প্রায় সকল প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষেরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি আলাপ কালে জানান, পার্শ্ববর্তী বয়রা গ্রামের কাজী বংশ আমাদা গ্রামের গাজী ও মল্লিক বংশের লোকজনরা পূর্বপাড়ার লোকদের সাথে একত্রিত হয়ে সর্বদা মাতুব্বরদের ওপর হামলা-মামলা চালিয়ে আসছে।

পূর্বপাড়ার নেতা তারা মিয়া ও ইয়াসিন মোল্লা জানান, ইমারুল হত্যা মামলা না মিটানোর ফলে প্রায়ই তারা পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারেন না। তাই যত টাকা ক্ষতি পূরণ লাগুক তা দিয়ে তারা মাতুব্বরদের সাথে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মাতুব্বররা তা না মানায় দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মাতুব্বররা দীর্ঘদিন ধরে সকলের ওপর অত্যাচার, অন্যায় বিচার করে আসছে বলে তারা জানান।

এ সব বিষয়ে কথা হয় লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমানের সাথে। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা যায়নি। এমনকি স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার দুই পক্ষকে নিয়ে মিটিং করলেও সৃষ্ট বিবাদ নিরসন করা সম্ভব হয়নি। তবে জন-প্রতিনিধিরা অর্থসহ বিভিন্ন স্বার্থের জন্য ইচ্ছা করেই দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বলেন, নোয়াপাড়া গ্রামকে শান্ত করার জন্য অনেক বার চেষ্টা করা হয়েছে। এই গ্রামের কথিত মাতুব্বরা সভা-সমাবেশে যে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, গ্রামে গিয়ে তা পালন না করে উল্টো দ্বন্ধে মদদ দেন। ফলে, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও ওই গ্রামের কোন্দল মিটাতে পারছিনা।

এ ব্যাপারে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, নোয়াপাড়া গ্রামের দ্বন্ধ নিরসনের জন্য বেশ কয়েক দফায় সভা-সমাবেশ করেও ওই গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। দু’গ্রুপের দুষ্টু প্রকৃতির চার/পাঁচ জন মাতুব্বর এ গ্রামকে অশান্ত করে ফায়দা লুটে চলেছেন।

(আরএম/পিবি/মার্চ ১৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test