E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীকে হত্যার হুমকি

২০১৫ মার্চ ২৫ ১৩:২৯:০৬
রায়পুরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীকে হত্যার হুমকি

 রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্ত্রী চাঁন বানুকে হত্যার পর প্রবাসী স্বামী জয়নাল মিয়াকে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যার হুমকি নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর শহরের দেবীপুর গ্রামের জমাদাররের নতুন বাড়ীতে এঘটনাটি ঘটে। এঘটনায় সোমবার বিকালে জয়নাল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ ৪ জনের নাম উল্যেখ করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি প্রকাশের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছেন।

মামালার এজাহার সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার প্রতিবেশি ইউনুছ মিয়ার কাছ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে জয়নাল মিয়া। ওই জমিতে বাড়ি করতে গেলে একই বাড়ীর হানিফ বিশ্বাস এক শতাংশ জমি পাবে বলে দাবি করে জয়নাল মিয়ার সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এঘটনায় উভয় পক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা কিছু দিন পরেই দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ স্ত্রীকে বাড়ী রেখে জয়নাল বিদেশে চলে যায়। পরে মেয়ে মরিয়মকে পৌর শহরের দেনায়েতপুর গ্রামের নানা এলাকায় বিয়ে দিয়ে বড় ছেলে সুমনকে বিদেশে নিয়ে যায় জয়নাল।

এরই মধ্যে বেশ কয়েক বার হানিফ বিশ্বাসের স্ত্রী হাছিনা বেগমের সাঙ্গে ওই জমি নিয়ে জয়নালের স্ত্রী চাঁন বানুর সাথে বিভিন্ন সময় কথা কটাকাটি ও বিরোধ হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা স্থানীয় লোকদের জানালে তারাও এনিয়ে কয়েকবার বৈঠক করেও জয়নাল বিদেশে থাকায় কোন সমাধান হয়নি। পরে চাঁন বানুর ছোট ছেলে ৪০ দিনে জন্য বাড়ী থেকে তাবলিক-জামায়াতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন চাঁন বানুকে বাড়ীতে একা পেয়ে ২১ এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে পূর্বের বিরোধের জের ধরে চাঁন বানুকে একাই বাড়ীর হাছিনা বেগম, হানিফ বিশ্বাস, রাসেল ও শারমিন মিলে মারধর করে হত্যার হুমকি দেয়। এঘটনাটিকে ফের স্থানীয় লোকজনসহ চাঁন বানুর প্রবাসী স্বামীকে জানালে প্রতিপক্ষের লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যনায় ২২ এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে গভির রাতে ঘরে কেউ না থাকায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। বিদেশ থেকে ফিরে জয়নাল বাড়ীতে আসলে গত ১১ মার্চ ২০১৫ইং তারিখে ওই জমিতে বাড়ী করার জন্য মাটি ফেলতে গেলে প্রতিপক্ষ হাছিনা বেগম ও হানিফ বিশ্বাস জয়নালকে হত্যার হুমকি দিয়ে বলে, তোর স্ত্রীরকে হত্যা করে লাশ দিয়েছি, তোকে হত্যা করলে লাশও পাওয়া যাবে না। পরে এঘটনায় গত সোমবার দুপুরে জয়নাল বাদি হয়ে হাছিনা বেগম, হানিফ বিশ্বাস, রাসেল ও শারমিনকে আসামী করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয় তাজল ইসলাম, মোস্তফা, শাহাদাত হোসেন, আমিন, জাহাঙ্গীর আলম, সালমা আক্তার ও মরিয়ম বেগমসহ কয়েকজন জানান, চাঁন বানু একজন সহজ সরল প্রকৃতির গৃহবধু ছিলেন। তার সাথে গ্রামের কোন লোকের সাথে বিরোধ ও সংসারে কোন অভাব অনোটনও ছিলেন না। স্বামী ও ছেলে মেয়েদের সাথেও সম্পূক ছিলো খুবেই ভালো। সব সময় আমাদের সাথে স্বামী ও ছেলে মেয়েদের প্রসংশা করত। তবে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে একই বাড়ীর হানিফ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী হাছিনার সাথে মাঝে মধ্যে বিরোধ হয়ে থাকতো। এতে স্থানীয় ভাবে একাধিক বার বৈঠক করেও কোন সমাধান করেত পারেন নি। ঘটনার আগের দিনও হানিফ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী হাছিনার সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পর দিন সাকালে শুনতে পারি চাঁন বান আত্মহত্যা করেন বলে শুনেছি। এতো সুখের সংসারে কেউ আত্মহত্যা করে এটা আমাদের ভাবতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ওই সময় কোন তার কোন অভিভাবক না থাকায় থানা পুলিশে কেউ জানাই নি।
চাঁন বানুর স্বামী জয়নাল মিয়া বলেন, প্রতিদিনের মত ঘটনার রাতে আমি চাঁন বানুর মোবাইল ফোনে একাধিবার ফোন করলেও থাকে পাওয়া যানি। পরে তার বড় বোন লতিফাকে ফোন করে সকালে আমার বাড়ীতে পাঠায়। দুপুরে জনতে পারি চাঁন বানুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরে ফেলে রাখে কে বা কারা। এসময় তার গলায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে বলেও আমাকে জানান। এঘটনায় আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি খুলে বলি। তবে চেয়ারম্যান বলে এঘটনায় হত্যা না আত্মহত্যা তার কোন প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি পুলিশকে না বলে এখন লাশ দাফন করে ফেলো। পরে তুমি বাড়ীতে আসলে তন্তদ করে মামলা করো। এতেই স্ত্রীর লাশ দাফন করা হয়।
এঘটনায় অভিযুক্ত হানিফ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী হাছিনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ঘটনাটি সত্য। তবে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার স্ত্রী চাঁন বানুকে হত্যার করার কোন প্রশ্নই আসে না। সে কী আত্মহত্যা করে না কী স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তা আমাদের জানা নেই।

এঘটনায় যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, জয়নাল বিদেশ থেকে ঘটনাটি আমাকে জানালে তাকে বলা হয় পুলিশকে অবহিত করার জন্য। কিন্তু সে পুলিশকে অবহিত না করে স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে গোপনে লাশ দাফন করে। এ বিষটি নিয়ে আর আমাকে কিছুই বলেনি।
রায়পুর থানার ওসি একেএম মনজুরুল হক আখন্দ বলেন, ঘটনায় জয়নাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে হত্যার বিষয়টি প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআরএস/পিবি/মার্চ ২৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test