E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অনন্য সংগঠন শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশ

২০১৫ মার্চ ২৯ ২২:৪৬:০৬
অনন্য সংগঠন শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক : শারদাঞ্জলি ফোরাম, বাংলাদেশ-এর পরিচিতি এবং লাঙ্গলবন্দের অভিজ্ঞতা শারদাঞ্জলি ফোরাম, বাংলাদেশ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে গঠিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। “সনাতন সেতুবন্ধনে কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সত্য ও শান্তির অন্বেষণে তারুণ্যের যাত্রা”- এই শ্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে গত ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ইং বারদীতে অবস্থিত লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে শারদাঞ্জলি পরিবারের এক প্রীতি সম্মেলন এবং মিলনমেলার মাধ্যমে এই ফোরামের যাত্রা শুরু হয়।

ঐদিন ৩ বছরের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিও ঘোষণা করা হয় এবং ১ নভেম্বর, ২০১৪ ইং তারিখ থেকে উক্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, শারদাঞ্জলি ফোরাম, বাংলাদেশ প্রথমে অন-লাইন ভিত্তিক ফোরাম ছিল। কিছু উদ্যোমী তরুণ-তরুণী ২০১৪ সালে অনলাইনে ফেসবুকে 'শারদাঞ্জলি ম্যাগাজিন ফোরাম' নামে একটি পেজটি চালু করেছিল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সহ বিশ্বে এ পেজটি ব্যাপক সাড়া জাগাতে সমর্থ হয়। তরুণ-তরুণীরা এ পেজে নিজেদের ধর্মীয় আদর্শ, চেতনা, মূল্যাবোধ, সামাজিক সমস্যা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা পোষ্ট করা শুরু করে। মাত্র ৩/৪ মাসের মধ্যে এর সদস্য সংখ্যা বিশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৪ ইং এ অনুষ্ঠিত দুর্গোৎসব উপলক্ষে ফোরামের উদ্যোগে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। পূজার মাত্র দুই মাস পূর্বে ম্যাগাজিন প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এত অল্প সময়ে মধ্যে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু তরুণেরা এই কঠিন কাজটি সহজেই করে ফেললো। দুই হাজার কপি ম্যাগাজিন ছাপানো হয়েছিল। ম্যাগাজিনটি পাঠকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর সাথে এক হাজার আকর্ষণীয় টি-শার্টও ফোরামের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল- যা তরুণদের মাঝে প্রচণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছিল।

ফোরাম হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত সভাপতি বাবুল চন্দ্র পাল একটি সুন্দর গঠনতন্ত্র রচনা করে দিয়েছেন। বিভিন্ন বিজ্ঞজনের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রতে আরো কিছু সংযোজন এবং সংশোধন করা হয়েছে- যা বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সভাপতি বাবুল চন্দ্র পালের নেতৃত্বে ফোরামের সহ-সভাপতি অভি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পলাশ নাথ, নিতাই সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পাল এবং প্রধান সমন্বয়ক সুমন বর্মন-এর পরিকল্পনায় ফোরামের উদ্যোগে একটি সুন্দর লিফলেটও তৈরি করা হয়েছে। এতে ফোরামের উদ্দেশ্য, আদর্শ সহ ফোরামের আগামী তিন বছরের “ভিশন”ও প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ফোরামে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর, নোয়াখালী, ভোলা, সিলেট, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং সাতীরা জেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াধীন আছে। আগামী এক বছরের মধ্যে অন্ততঃ দশটি জেলায় নতুন জেলা কমিটি গঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় ধর্মীয় শিক্ষার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে চটগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জে ১০ টি গীতা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া শারদাঞ্জলি ফোরাম, বাংলাদেশ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক এবং কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে ৪টি দরিদ্র পরিবারের ঘর সহ সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে উক্ত ৪ টি দরিদ্র পরিবারকে বিশ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসার জন্য কিছু দরিদ্র পরিবারকেও সাহায্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শারদাঞ্জলি ফোরাম নিয়মিত অংশ গ্রহণ করে আসছে।

গত ২৬ এবং ২৭ মার্চ, ২০১৫ ইং দুই দিন নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের অষ্টমীস্নান উপলক্ষে শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে লাঙ্গলবন্দের প্রাণকেন্দ্র রাজঘাট এলাকায় একটি বড় স্টল বরাদ্দ পায়। সেখানে শারদাঞ্জলির ফোরামের ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক ২৬ তারিখ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে ২৭ তারিখ (শুক্রবার) রাত পর্যন্ত অবস্থান করে পুণ্যার্থীদের মাঝে বিশুদ্ধ জল, লেবুর শরবত এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এর মাঝে ২৭ তারিখ শুক্রবার সকালে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। শুক্রবার ভোর ৪ টা থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী রাজঘাট আসতে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তখন স্থানীয় কোন স্বেচ্ছাসেবক দল বা নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। এমতাবস্থায় প্রচণ্ড ভীড়ে বৃদ্ধ এবং শিশুরা অসুস্থ হয়ে যায়। পুণ্যার্থীদের স্রোত আসতে থাকায় আশ-পাশের দোকান মালিকগণ আতংকে দোকান-পাট বন্ধ করে দেন।

ততক্ষণে বহু নিখোঁজ সংবাদ সহ অসুস্থ মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে শারদাঞ্জলি ক্যাম্পে। ক্যাম্পে স্থান সীমিত থাকায় শারদাঞ্জলির স্বেচ্ছাসেবকেরা অসুস্থ পুণ্যার্থীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে থাকে। তবু তারা ধৈর্যের সাথে মানবিক কাজগুলো করে সম্পন্ন করে যায়। সে সাথে মাইকে নিখোঁজ সংবাদও প্রচার করতে থাকে। শারদাঞ্জলির স্বেচ্ছাসেবগণ ৫০ জন নিখোঁজ শিশুকে তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। হঠাৎ সকাল ৭ টার পর শারদাঞ্জলির ষ্টল থেকে আনুমানিক ২০ গজ দূরে একটি গুজব ছড়ানো হয় যে রাজঘাটের কাছে একটি বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। আতংকিত হয়ে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এবং পদদলিত হয়ে ১০ দশ পুণ্যার্থী প্রাণ হারায়। কয়েকশত পুণ্যার্থী আহত হয়। বহু আহত পুণ্যার্থীকে শারদাঞ্জলির ক্যাম্প থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এবং সেদিন অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রয়াত পুণ্যার্থীদের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রাজঘাট এলাকায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও শোক র‌্যালী বের করা হয়।

উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী “প্রাণের ৭১”-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বাবু মলয় দাস তার পরিবার নিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা শারদাঞ্জলির ক্যাম্পে অবস্থান করেন। তিনি শুধু ক্যাম্পে অবস্থানই করেননি, শারদাঞ্জলির স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুণ্যার্থীদের জন্য সেবা দিয়ে গেছেন।

(ওএস/অ/মার্চ ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test