E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাজীপুরে আড়াই মাসে ৩ জোড়া খুন

২০১৫ মার্চ ৩১ ২১:১১:০৬
গাজীপুরে আড়াই মাসে ৩ জোড়া খুন

গাজীপুর প্রতিনিধি :গাজীপুরে রাতের আঁধারে একের পর এক জোড়া খুনের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামে মা-মেয়ে খুন হয়েছেন। এ নিয়ে গত আড়াই মাসে জেলায় তিনটি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটল। এসব খুনের ধরনও এক। যারা খুন হয়েছেন, তারা পরস্পর আত্মীয়।

প্রত্যেককেই রাতে ঘুমন্ত অস্থায় শোয়ার ঘরে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে খুন করে পালিয়ে গেছে অজ্ঞাত খুনীরা। চাঞ্চল্যকর এসব জাড়া খুনের একটিরও ক্লু বা জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে।

তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মাদকাসক্তি এবং সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির কারনে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

কাপাসিয়া থানার ওসি আহসান উল্লাহ জানান, মা যেয়ে স্থানীয় লোকজন জানান, মা বিধবা সূর্যিবানু (৮৫) বাধ্যর্কজনিত নানা রোগে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। অপরদিকে স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে মাফিয়া বেগম (৫৫) ছিলেন নি:সন্তান। মা-মেয়ে রোজ রাতে একসাথে, একই ঘরে ঘুমাতেন। তাদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। পরিবারটি অতি দরিদ্র। তাদের কারো সাথে শত্রুতা ছিল না। তারপরও কয়েকটি বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, কাপাসিয়ায় মা-মেয়ে হত্যার কারণ এবং জড়িতদের প্রাথমিক ভাবে সনাক্ত করা গেছে। এ মুর্হুতে সব প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আশা করছি জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আমরা সক্ষম হব।

স্থানীয়রা জানান, তারা খুবই দরিদ্র এবং নীরিহ ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে এক সঙ্গে মা-মেয়ে লোমহর্ষক ভাবে খুন হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মেয়ে মাফিয়া বেগম ঝিয়ের কাজ সংসার চলাতেন। সূর্যিবানুর মেঝ ছেলে সৌদি আরবে থাকেন। মায়ের অসুখের খবর পেয়ে কয়েক দিন আগে সে ১০ টাকা পাঠায়। চিকিৎসায় কিছু টাকা খরচ হলেও অবশিষ্ট টাকা ঘরে ট্রাংকে রাখা ছিল। মাদকাসক্তরা রাতে ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় চিনি ফেলোয় তাদের খুন করা হয়ে থাকতে পারে। লাশ উদ্ধারের সময় ওই ট্রাংক ভাঙ্গা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারী রাতে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর সালনায় বাবা-মেয়ে এবং ২০ জানুয়ারী রাতে দক্ষিণ বাউপাড়ায় ননদ-ভাবী খুন হন। নিজ ঘরে রাতের আধাঁরে তাদের কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তাদেরও কারো সাথে শত্রুতা ছিলনা। প্রথমে মামলা দু’টি জয়দেবপুর থানার পুলিশ তদন্ত করে। ১০-১২ দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশের কাছে। ঘটনার রাতে বাবা-সাইফুল ইসলাম (৫০) ও মেয়ে স্কুল ছাত্রী আঁখি (১৫) একই ঘরে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন। পরদিন ভোরে আঁখির রক্তাক্ত লাশ বাড়ির উঠানে পাওয়া যায়। বাবাকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। চাঞ্চল্যকর ওই জোড়া খুনের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও বাবা-মেয়ের খুনিকে গ্রেপ্তার বা সনাক্ত করতে পারিনি পুলিশ।

এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে নুরুল ইসলাম (৫৫) ও ইউনুস আলী (৩৪) নামে দুইজনকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছে। আঁখির সাথে নুরুল ইসলামের ছেলে গার্মেন্ট শ্রমিক মনির হোসেনের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ঘটনার কয়েকদিন আগে বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছিল মনিরের বোন পারভীন আক্তার (২২)। পারভীন নেশাখোর, বেপরোয়া ও উশৃংখল। ওইসব কারন এবং আঁখির বয়স কম বলে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কৃষক সাইফুল ইসলাম। ঘটনার পর থেকে পারভীন পলাতক। গ্রেপ্তার হওয়া ইউনুস ছিলেন বিয়ের ঘটক। এলাকাবাসীর মত পরিবারের সদস্যদের ধারণা পারভীনই ক্ষিপ্ত ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবা ও মেয়েকে হত্যা করিয়েছে।

অপরদিকে ২০ জানুয়ারী রাতে দক্ষিণ বাউপাড়ার ৮০ বছরের বৃদ্ধা কলমজান বিবিও তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রহিমা খাতুনের (৭৫) খুনের ঘটনায় কোন কিনারাই করতে পারেনি পুলিশ। মাটির ঘরের দরজা বিশেষ কৌশলে খুলে ঘরে ঢুকে দু’বৃদ্ধাকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলেই কলমজানের মৃত্যু হয়। ভোরে মূমুর্ষূ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে রহিমা বেগমের মৃত্যু হয়। কলমজান বাউপাড়ার মৃত মুসলেম উদ্দিনের স্ত্রী এবং রহিমা খাতুন একই এলাকার কৃষক মেছের দেওয়ানের স্ত্রী। এমন দুই বৃদ্ধার পৈচাশিক খুনের ঘটনায় আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আতিংকিত স্থানীয়রাও।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং গাজীপুর বারের সিনিয়র আইনজীবি আমানত হোসেন খান কালের কণ্ঠকে জানান, খুনের স্বীকার তিন পরিবারের সাথেই কারো শত্রুতা ছিলনা। মাদকাক্ত ছাড়া ডাকাত বা অন্য অপরাধীরা সাধারনত এভাবে হত্যা বা খুন করে না। নেশার টাকা যোগাড় করতে মাদক সেবীরা এসব ভয়ংকর অপরাধ করে থাকতে পারে।

গাজীপুর সিআইড পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার রায় জানান, সামাজিক অপরাধ থেকে এ ধরনের খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বাবা-মেয়ে ও ননদ-ভাবী খুনের মামলা দু’টির দায়িত্ব পাওয়ার পর অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে দু’টি ঘটনার মটিভ আলাদা আলাদা। শিঘ্রই আসল কারণ উদঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করা যাবে।

(এসএএস/এসসি/মার্চ৩১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test