E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধার স্বস্বীকৃতি চান নন্দীগ্রামের জবান আলী

২০১৫ এপ্রিল ০৪ ১১:৩৮:০৪
মুক্তিযোদ্ধার স্বস্বীকৃতি চান নন্দীগ্রামের জবান আলী

নন্দীগ্রাম(বগুড়া)প্রতিনিধি:“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’ ১৯৭১সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঘোষণার পর-পরই পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তৎকালিন সময়ের পাকিস্থানী রিজার্ফ ফোর্সের বিদ্রোহী পুলিশ সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষ আর স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তি বাহীনির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে’ পাকিস্থানী সেনাদের হাতে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েও স্বাধীনতার ৪৪বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে তবুও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর শহরের কচুগাড়ি মহল্যার শেরপুর-নন্দীগ্রাম বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় বসবাসরত জবান আলী পুলিশ। তিনি ১৯৭১সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলকালিন সময়ের পাকিস্থানী রিজার্ফ ফোর্সের বিদ্রোহী পুলিশ সদস্য ছিলেন। পাকিস্থান পিআরএফ, বর্তমানে আরআরএফ বলা হয়। সেসময় জবান আলী পুলিশ সদস্য নং- ১৪২০ ও জেলা পুলিশ সদস্য নং- ২০৪৯। জবান আলী সর্বশেষ বগুড়া- ১৮৮নম্বর পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবার আশায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বারবার আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি। টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় জবান আলী পুলিশকে নিয়ে প্রতিবেদন ও সংবাদ ছাপনো হয়েছে। তারপরেও ভাগ্যে মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

একান্ত সাক্ষাতকারে জবান আলী পুলিশ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১সালের ৭ই মার্চ দেশ স্বাধীনের ঘোষনা দেন। তিনি ঘোষনায় বলেছিলেন, এই দেশের নাম হবে স্বাধীন বাংলাদেশ। “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’ তোমাদের ঘরে ঘরে যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরো। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভাট বন্ধ করে দাও। পাকিস্থানীরা যেন’ এদেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো “ইনশাল্লাহ”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনায় আরোও বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারি ভাইয়েরা আজ থেকে সকল প্রকার অফিস আদালত বন্ধ রাখবেন। প্রত্যেক মাসের ২৮তারিখে বেতন গ্রহন করবেন। কেউ কোনো ডিউটি করবেন না।

ৎএরপর পাকিস্থানী সেনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্থানীরা পুলিশ সদস্যদের উপর নির্যাতন শুরু করে। সামরিক আইন দিয়ে পুলিশ বাহীনিকে জোরপূর্বক ডিউটি করায়।

জবান আলী আরোও বলেন, ১৯৭১সালের ২৩শে মার্চ রাতে পুলিশ বাহীনির আড়াই সাহেবের কাছ থেকে অস্ত্রাগারের চাবি নিয়ে পাকিস্থানীরা পুলিশ লাইনে প্রবেশ করে ১গাড়ী অস্ত্র নিয়ে যায়।

২৪শে মার্চ পুলিশ সুপারের নির্দেশ অনুযায়ি আমরা পুলিশ সদস্যরা মাটি খুঁড়ে মোরচা তৈরী করি।
২৫মার্চ পাকিস্থানীরা ট্রেজারি লুট করতে গেলে পুলিশ বাহী বাঁধা দেয়। লুট করতে না পেরে পাকিস্থানীরা তৎকালিন জেলা পুলিশ সুপারকে ধরে নিয়ে ট্রেজারিতে যাওয়ার পর আবারো পুলিশ সদস্যদের আটক করে তাদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে বেধরক মারপিট করে। এবং পুলিশের ক্ষমতা লিখে নেয়। জুলুম-অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমরা পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করি। পাকিস্থানীদের পতাকা আগুনে পড়িয়ে পুলিশ লাইনে কালো পতাকা উত্তোলন করি।

২৬মার্চ পাকিস্থানীরা তৎকালিন ডিআইজি ও পুলিশ সুপার সাহেবকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এরপরেই পাকিস্থানীরা বিদ্রোহী পুলিশ সদস্যদের উপর আক্রমন করে। পুলিশ ব্যারাকে বোমা নিক্ষেপ করে। সেখান থেকে আমিসহ বেশ ক’জন পুলিশ সদস্য জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে তৎকালিন বিডিয়ার সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে পাকিস্থানিদের ক্যান্টনমেন্ট আক্রমন করি। পরে মুক্তি বাহীনির হাতে অস্ত্র তুলে দেই।

১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হবার পর অস্ত্র জমা দেই। সেদিন থেকে বাংলার আকাশে লাল-সবুজের পতাকা উদয় হয়। রাজশাহীর পুলিশ লাইনে সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ৯মাসের বেতনও গ্রহন করি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি স্বরুপ আমাকে জয়পদক ও সংবিধান পদক দেন। সেই পদকগুলো আজও স্বযতেœ রেখেছি।

জবান আলী পুলিশ কান্না জর্জরিত কন্ঠে বলেন, আমরা পুলিশ সদস্যরা অনেক কষ্টে আছি। যারা আসল মুক্তিযোদ্ধা তাদের আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। পুলিশ সদস্যরা মুক্তি বাহীনির হাতে অস্ত্র না দিলে এদেশ স্বাধীন হতোনা। পুলিশ সদস্যরা বিদ্রোহ করেছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তারপরেও স্বাধীনতার ৪৪বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে’ তবুও তৎকালিন পুলিশ সদস্যের কাউকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
জবান আলী পুলিশের একটাই দাবি, আমি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। যুদ্ধকালিন স্বাধীনতা পক্ষের বিদ্রোহী পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। জীবনের শেষ সময় টুকু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে থাকতে চাই।



(এমএনআই/এসসি/এপ্রিল০৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test