E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নববর্ষকে ঘিরে গাইবান্ধার গ্রামগুলোতে এখন বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি

২০১৫ এপ্রিল ১১ ২২:৪৬:১৮
নববর্ষকে ঘিরে গাইবান্ধার গ্রামগুলোতে এখন বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: বাঙলা এবং বাঙালী জীবনের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির শেকড় গ্রথিত অনেক গভীরে। আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রয়েছে হাজার বছরের উত্তরাধিকার। পয়লা বৈশাখ বাঙলা নববর্ষ। বাঙলা সনের শুভ সূচনা। যা বাঙালী জাতিগোষ্ঠীর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে একান্ত স্বজন হয়ে। 

বৈশাখ তাই গাইবান্ধার গ্রামে-গঞ্জের প্রতিটি মানুষের মনে কৃষি, ব্যবসা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে জীবনের প্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে এখনও জড়িয়ে আছে। পুরাতন ঐতিহ্যকে লালন করে গাইবান্ধায় বৈশাখ যেন উত্তর উত্তর নব চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে উৎসব মুখর দিন হিসেবে আজও চিহ্নিত হয়ে আছে।

বৈশাখ মাস শুরু হবার সাথে সাথে গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে নানা নামে অন্তত: ১৫-২০টি মেলা শুরু হয়। সারা মাস জুড়ে চলবে এসব মেলা। যার কোনটি দিনব্যাপী, কোনটি মাসব্যাপী। বৈশাখী মেলার পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পুজার মেলা, মন্দির সংলগ্ন মেলা। এসব মেলার সাথে জড়িয়ে আছে চারু, কারু ও মৃৎ শিল্প। মেলাগুলোতে শিশুদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন গ্রামীণ খেলনা ভিন্ন এক আমেজ তৈরী করে। বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাই গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার খেলনার গ্রামগুলোতে এখন ব্যস্ততার শেষ নেই। প্রতিটি গ্রামেই চিরচেনা নানা আকারের খেলনা তৈরীতে ব্যস্ত কারিগররা। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই ব্যস্ত খেলনা তৈরীর কাজে। কারিগররা ছেড়ে দিয়েছে অন্য পেশা। বয়সে একটু বড় শিশুরা ছেড়েছে স্কুল। কেননা বছরের সর্বোচ্চ আয় আসে এ মাস থেকেই।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া, বাদিয়াখালী ও খোলাহাটী ইউনিয়নের পালপাড়া, কুমোরপাড়া, শিবপুর, কলাকোপা ও ধুতিচোরা, ফুলছড়ির রসুলপুর, কঞ্চিপাড়া ও ভাষারপাড়া, সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা ও পুটিমারী, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, পাঁচপীর, ধুবনী, চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর ও ধর্মপুর, সাদুল্যাপুরের রসুলপুর ও দামোদরপুর, পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, আরজিশাহপুর ও শক্তিপুর এবং পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী গ্রাম এ জেলার খেলনার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এসব গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার এখনও মাটি এবং বিভিন্ন দ্রব্যের নানা খেলনা তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। নানা প্রতিকূলতা মাথায় নিয়ে তারা এখনও তাদের পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। বিভিন্ন আকর্ষণীয় আকারে মাটির খেলনার পাশাপাশি শোলা, বাঁশ, কাঠ, লোহা, বেত ও তালপাতা দিয়ে নানা ধরণের খেলনা তৈরী করছেন তারা। তাদের তৈরী করা খেলনার মধ্যে রয়েছে মাটির তৈরী পুতুল, শোলার তৈরী ফুল ও পশুপাখি, মাটি আর চামড়ায় তৈরী ঢোলগাড়ী, বেত ও বাঁশের বাঁশি, শোলা ও তালপাতার শব্দ করা পাখি, কাগজের বাহারী ফুল, কাঠ ও লোহার গাড়ি, পাখি, ঝুড়িসহ অনেক কিছু।

সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের পালপাড়ার পরেশ চন্দ্র পাল জানান, গ্রামীণ বৈশাখী মেলাগুলোতে স্থানীয়ভাবে তৈরী করা এসব খেলনা বেচা কেনা হয় সব চেয়ে বেশি। সে কারণে এসব পণ্য বেচা-কেনার ভরা মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস। এছাড়া আশ্বিন, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসেও অল্প পরিমাণে খেলনা সামগ্রী বিক্রি হয়ে থাকে। একই এলাকার ঢোলগাড়ী, তালপাতা ও শোলার শব্দ করা পাখির কারিগর শৈলেশ চন্দ্র পাল ও মঞ্জুরানী পাল জানালেন, বর্ষার সময় এসব জিনিষ তৈরী করা সম্ভব হয় না বলে অনেক আগেই খেলনা বানিয়ে মজুত করে রাখতে হয়। গাইবান্ধা শহর সংলগ্ন তুলশীঘাট এলাকার কাঠ, বাঁশ, টিন, লোহার খেলনা নির্মাণকারীদের অন্যতম শিল্পী বাদশা মিয়া বলেন, এ গ্রামের ৪০টি পরিবার খেলনা তৈরী ও বিক্রি পেশার উপর নির্ভরশীল। এ গ্রাম থেকে পাইকারি ও খুচরা মূল্যে খেলনা বিক্রি করা হয়। ফলে আশপাশের জেলার বিক্রেতাদের ভীড় সারাবছর লেগেই থাকে।
সদর উপজেলার তুলশীঘাট ও বিষ্ণুপুর গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের লোকজন কাঠ, বাঁশ ও মাটির খেলনার জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা কামনা করেন।

(আরআই/এসসি/এপ্রিল১১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test