সোহাগপুর বিধবা পল্লীতে এবার বিজয়ের আনন্দে নববর্ষ উৎসব

শেরপুর প্রতিনিধি : সোহাগপুর গণহত্যার ঘাতক কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবার সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে পহেলা বৈশাখে বিজয়ের আনন্দে বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের বিধবাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সেই সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে যাচ্ছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।

১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের ৫০ সদস্যের একটি দল বিধবাপল্লীতে যাচ্ছেন। একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-সন্তান-স্বজন, সম্ভ্রম হারানোয় সোহাগপুরের বিধবাদের জীবন থেকে যে হাসি-আনন্দ হারিয়েয়ে গিয়েছিলো তারাই এখন ভাসছেন উৎসবের আনন্দে। এদিকে, বর্ষবরণ উৎসব ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরা আসার সংবাদে সোহাগপুর বিধবপল্লীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা তৎপরতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জামায়াত নেতা ও আলবদর সংগঠক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পরপরই শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ডা. ইমরান এইচ. সরকার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বিধবা ও তাদের স্বজনদের সাথে কাটানোর ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা মোতাবেক তারা মঙ্গলবার বিধবাপল্লীতে যাচ্ছেন। কেবল বর্ষবরণ উপলক্ষ্যেই নয়, ঘাতক কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের আনন্দ-তৃপ্তি ভাগাভাগি করে নিতে তারা মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত শহীদ পরিবারের বিধবা ও তাদের স্বজনদের সাথে সময় কাটাবেন। স্ব-চক্ষে দেখবেন তাদের সংসার জীবনের চিত্র।

এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের নেতৃত্বে একটি দলের বিধবা পল্লীতে আগন উপলক্ষ্যে ওই এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে পান্তা-ইলিশের। এ উপলক্ষে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য কাকরকান্দি বাজারে নির্মাণ করা হয়েছে বর্ণাঢ্য মঞ্চ। আর ওই উৎসব প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে স্থানীয় কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদসহ এলাকাবাসী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি শহীদ ছফির উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের আগমন উপলক্ষ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসীর সহায়তায় পান্তা-ইলিশ ভোজনসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় কাকরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ তালুকদার মুকুল বলেন, সোহাগপুর গ্রামের ১২০ পুরুষকে হত্যা ও কয়েকজন নারীকে ধর্ষণের দায়েই ঘাতক কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় বিধবা ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসী এমনিতেই স্বস্তির নি:শ্বাস নিচ্ছে। আর ওই বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে যারা রাত-দিন রাজপথে থেকে সাহসী আন্দোলন করেছেন, সেই গণজাগরণ মঞ্চের নায়ক ডা. ইমরান এবং তাদের প্রতিনিধিদল নববর্ষের প্রথম দিনেই এ এলাকায় বিধবা ও তাদের স্বজনদের সাথে সময় কাটাতে আসছেনÑএটি আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তি, গর্বের বিষয়। এজন্য এলাকায় ইতোমধ্যেই উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. মেহেদুল করিম সাংবাদিকদের জানান, অফিসিয়ালী নিশ্চিত না হলেও জেনেছি পহেলা বৈশাখে জনজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ. সরকার তার সহকর্মীদের নিয়ে সোহাগপুর বিধবা পল্লীতে আসছেন। ওই এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও এজন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবশ্যই আরও বাড়ানো হবে।

(এইচবি/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৫)