E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোবাইল ফোন সেটের কারণে বন্ধুর হাতে খুন হলো ফয়সাল

২০১৫ এপ্রিল ৩০ ১৩:১৬:৩৫
মোবাইল ফোন সেটের কারণে বন্ধুর হাতে খুন হলো ফয়সাল

দীপক চক্রবর্তী,মাগুরা থেকে :শুধুমাত্র একটি মোবাইলের কারণে খুন হতে হয়েছে মাগুরার সীমাখালি বাজারের দোকান কর্মচারী  ফয়সাল (১৫)কে। শালিখা থানা পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য দিয়েছে ফয়সাল খুনের ঘটনায় আটক নিহতের বন্ধু রানা (১৫)।

শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, মঙ্গলবার ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পরপরই স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় ফয়সালের বন্ধু রানাকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে রানা জানায়, ঘটনার দিন সোমবার ফয়সালের মালিক উজ্জ্বল হোসেন বাঘারপাড়ার গাইদঘাট বাজারের পোল্ট্রির টাকা আদায়ে পাঠায়। এ সময় বন্ধু রানাও তার সঙ্গে যায়। এ সময় আদায় কৃত টাকা নিয়ে তারা সীমাখালী ফিরে আসে। এর পর মালিকের বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে উভয়েই একই সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু রানা-ফয়সালের নিকট থাকা টাকা দিয়ে মোবাইল ক্রয়ের লোভে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। এ কারনে ঘটনার দিন রাতে তার সাথে ফার্নিচারের দোকানে ঘুমোতে গিয়ে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ তাকে হত্যা করে সে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে সে পালিয়ে যায়। সকালে যশোর গিয়ে শিশির ডট কম থেকে একটা আর্কশনীয় মোবাইল ফোন সেট ক্রয় করে সীমাখালীতে ফিরে আসে। পুলিশ ফয়সালের মোবাইলটিও তার কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে আর কেউ জড়িত কিম্বা অন্য কোন বিষয় সম্পৃক্ত কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

যে কারনে খুন হয় ফয়সাল- রানার দেওয়া তথ্যে জানাযায় দীর্ঘদিন যাবৎ সখ ছিলো একটা মোবাইল ফোনের। কিন্তু রোজ মাত্র ৫০টাকা আয়ে তার মোবাইল ক্রয় সম্ভব না হওয়ায় বন্ধু ফয়সালের নিকট প্রায়ই টাকা ধার চাইতো। কিন্তু ফয়সাল মালিকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় সে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করে।

যে ভাবে খুন করা হয়- রানার দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক থানার ওসি সাংবাদিকদের জানান, প্রতি রাতে ফযসাল এবং আমি একই বিছানায় ঘুমাতাম। ঘটনার রাতে ফয়সাল মালিকের বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়ে এলে দুই বন্ধু কিছু সময় আড্ডা মারি। পরে ফয়সাল এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে আমি –ফয়সালের গলায় লাইলনের রশি পেঁচিয়ে টেনে হত্যা করি। হত্যা নিশ্চিত হলে ভোর রাত পর্যন্তু তার পাশেই শুয়ে থাকি। ভোর হলেই দরজায় তালা লাগিয়ে আমি যশোর চলে যায়। এসময় ফয়সালের কাছে থাকা টাকা দিয়ে শিশির ডট কম থেকে একটা মোবাইল কিনি।

কে এই রানা- উপজেলার বাহির মল্লিকা গ্রামের হত দরিদ্র দিন মজুর সাহেব আলী ওরফে হারেজ মন্ডলের এক মাত্র পুত্র। তার পিতার পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার পুরানো বাখরবা গ্রামে। ১৬/১৭ বছর পূর্বে রানার পিতা হারেজ মন্ডল হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়লে স্ব-স্ত্রীক পালিয়ে শালিখার ছান্দড়া গ্রামে এসে বসবাস করতে শুরু করে। দ্বিতীয় শ্রেনী পাশের পরে বখাটে বনে যাওয়ায় এবং এলাকায় ছিচকে চুরির সাথে জড়িয়ে পড়ায় নিরূপায় হয়ে পিতা-মাতা সীমাখালী বাজারের এক ফার্নিচারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে তাকে রেখে দেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী ফার্নিচার দোকানের ফয়সালের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল তাদের এ বন্ধুত্ব।

উল্লেখ্য,সোমবার রাতে সীমাখালি বাজারে ইবাদত মন্ডলের ফার্নিচারের দোকানে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হয় শালিখার ছান্দড়া গ্রামের মোশারফ ফকিরের ছেলে এই ফয়সাল। সে সীমাখালী বাজারের একটি পোল্ট্রি মুরগীর দোকানের কর্মচারী। মঙ্গলবার লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয় লোকজন ও ফার্নিচার দোকান মালিদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রানা নামে ফয়সালের ওই বন্ধুকে আটক করলে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশের কাছে এ স্বীকারোক্তি দেয়।

(ডিসি/এসসি/এপ্রিল৩০,২০১৫)




পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test