E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনভর কাম কইরা ১৫০ টাহার বেতনে সংসার চলেনা

২০১৫ মে ০১ ১১:৪২:৫৮
দিনভর কাম কইরা ১৫০ টাহার বেতনে সংসার চলেনা

বরগুনা প্রতিনিধি:“দিনভর রাস্তায় মাডি কাটার কাম কইরা ১৫০ টাহার বেতনে জীবন আর চলেনা। যেহানে ব্যাডারা দিনে ৪শত টাহা মজুরী পায় হে হানে মোগো দেয় ১৫০ টাহা। মোরা কামও বেশী হরি বেতনও কোম পাই”।

বেশ আক্ষেপ করে এসব কথাগুলো বললেন বরগুনার বামনা উপজেলার ছনবুনীয়া গ্রামের হতদরিদ্র স্বামী পরিত্যাক্তা মাটিকাটা শ্রমিক কলামতি বেগম। মহান মে দিবসে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, “মে দিবস হেইডা আবার কি? এইসব কথা বুঝিনা, কেউতো কয়নায়। মে দিবস দিয়া মোরা কি হরমু। প্যাডের টানে মাডি কাডি, ওই সব দিন পালন বড়লোকের মোগো না। মোগো বেবাগ দিন হোমান। যদি পারেন মোগো টাহাডা একটু বারাইয়া দিতে কইয়েন”।

বৃহস্পতিবার সকালে কলামতিসহ আরও কয়েকজন নারী মাটিকাটা শ্রমিকের সাথে দলবদ্ধ হয়ে উপজেলার আমতলী গ্রামের একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ করছিল। এসব নারী শ্রমিকরা মাটি কেটে বিপর্যস্ত গ্রামীণ রাস্তা মেরামত করে তাদের জীবিকা চালান। অথচ এসব নারীদের প্রত্যেকের জীবনই ওই রাস্তার মতোন বিপর্যস্ত। সংসার চালানোর তাগিদে মে দিবসের নিয়ে ভাবনার সময় তাদের কারো নেই।
ছোনবুনিয়া গ্রামের মরহুম গফুর কাজীর মেয়ে কলামতি বেগম পাশ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার টিয়ারখালী গ্রামের মো. লাল মিয়ার সাথে ৩০ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের ২ বছরের মধ্যে দুই শিশুসন্তান ইব্রাহিম খলিল ও মেয়ে জায়েদার জন্ম হয়। সন্তান দুইটি জন্মের বছরখানে পরে স্বামী মো. লাল মিয়া স্ত্রী কলামতি ও দুই শিশু সন্তানকে ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামী আর কোন দিন স্ত্রী সন্তানের খোঁজ নেয়নি। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে কলামতি বাবার বাড়ি বামনার ছনবুনীয় গ্রামে আশ্রয় নেয়। এরপর পেটের তাগিদে প্রথমে বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ শুরু করে। যা উপার্যন হয় তা দিয়ে দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে থাকে। ঝিঁয়ের কাজে তেমন মজুরী না থাকায় কলামতি যোগ দেয় এলজিইডির মাটিশ্রমিকের কাজে। এই কাজে দৈনিক ১৫০টাকা মজুরী দিয়ে কোন মতে সংসারের ভরন পোষনসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটায়। ছেলে ইব্রাহিম খলিল এখন উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর মেয়ে জায়েদা আক্তার চলতি উচ্চমাধ্যমিক মানবিক শাখায় পরীক্ষা দিচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে কলামতি দলভূক্ত মাটিকাটা শ্রমিকের করেণ। দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরীর এ কাজে কলামতির মত আরও শতাধীক অসহায় নারীরা দিনভর শ্রমিকের কাজ করে।

কলামতি বলেন,স্বামী ছাইড়া গেছে তবু তো কাম কইরা বাইচা আছি। দিনভর মাটিকাটা কষ্টের কাম । তবু এছাড়া তো উপায় নাই । এ কাম কইরাই দুই ছেলে মাইয়ার লেহা পড়া চালাইতেছি। পোলা মাইয়ারা লেহা পড়া কইরা কাম পাইলেই এই মাডি কাটা কাম ছাইরা দিমু। এইহানে বেতন কম। এই বেতনে সংসার চলেনা। নারী বইলা মজুরী কম ।

বামনা উপজেলা স্থানীয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানাগেছে,বামনা উপজেলার গ্রামীণ রাস্তা অবকাঠামো উন্নয়নে আই.আর.এস.পি-২ ও আর.আর এ- সি.এসপি ও এসডব্লিউবিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় মোট ৭১ জন দরিদ্র নারী শ্রমিক কাজ করছে। প্রতিটি দলে আট থেকে ১০জন নারী মাটিকাটা শ্রমিক মিলে গ্রামের বিপর্যস্ত রাস্তায় মাটি ভরাট করে সংস্কারের কাজ করছেন। এসব নারী শ্রমিকরা মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে দিনভর কাজ করে।

এ বিষয়ে বুকাবুনীয় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অঞ্জন চ্যাটার্জী বলেন, গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে গ্রামীণ নারী শ্রমিকরা অবদান রাখলেও তাদের শ্রমের মজুরী যথাযথ নয়। নারী শ্রমিকের শ্রম মজুররীর বৈষম্য দূর হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারে পুরুষের তুলনায় নারীদের ভূমিকা বেশি। তবে এই নারী শ্রমিকের মজুরী একটু কম পান। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে নারীদের এই মজুরীর পরিমান বাড়ানোর জন্য আবেদন করবো ।


(এমএইচ/এসসি/মে০১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test