E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্ত্রীকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটালেন সেনাসদস্য

২০১৫ মে ০৭ ১৪:৫৭:৪৫
স্ত্রীকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটালেন সেনাসদস্য

নড়াইল প্রতিনিধি : পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করলেন এক সেনাসদস্য। ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামে।

সেনাসদস্য স্বামী শফিকুল ও তার পরিবারের লোকজনের সম্মিলিত নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ববিতা এখন নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

টনার পাঁচ দিন পর লোহাগড়া থানা পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা গ্রহণ করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত স্বামী শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা ও পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের শালবরাত গ্রামের ছালাম শেখের ছেলে সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সঙ্গে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যার মেয়ে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী (প্রাইভেট) ববিতার (২১) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই সম্পর্কের জের ধরে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গোপনে তাদের বিয়ে হয় (রেজিস্ট্রি ২২ নভেম্বর)। বিয়ের কিছুদিন পর ববিতার স্বামী সিলেট সেনানিবাসের ৩৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত সদস্য শফিকুল শেখ ও শাশুড়ি তাকে ঘরে তুলে নেবে না বলে টালবাহানা শুরু করে। শফিকুলও ববিতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ববিতা একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। এতে শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

নির্যাতিত ববিতার মা খাদিজা বেগম জানান, ২৯ এপ্রিল ববিতার স্বামী শফিকুল বাড়িতে আসে এবং ববিতাকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়া জন্য খবর দেয়। সব সমস্যার মীমাংসা করা হবে বলেও জানানো হয়। ববিতা খুশি হয়ে রাতেই স্বামীর বাড়িতে যান। পরের দিন (৩০ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে ববিতার স্বামী শফিকুল, ভাসুর হাসান শেখ, শ্বশুর ছালাম শেখ, শাশুড়ি জিরিন আক্তার, চাচা শ্বশুর কালাম শেখ, প্রতিবেশী নান্নু শেখ এবং পাশের পদ্মবিলা গ্রামের আজিজুর রহমান আরজু মিলে ববিতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাশবিক নির্যাতন চালানোর একপর্যায়ে ববিতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে বাজারে নিয়ে একটি দোকানে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

তিনি আরও জানান, ববিতাকে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

নির্যাতিতার মা অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়ায় শফিকুলের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে সাহস করে না। এ কারণে চরম নির্যাতনের পরও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। পুলিশও প্রথম প্রথম বিষয়টি এড়িয়ে যায়। পরে নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে সকলের টনক নড়ে। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শফিকুল তাদের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নির্যাতনের ওই ঘটনার পাঁচ দিন পরও স্থানীয় থানা পুলিশের পক্ষে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। একপর্যায়ে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়।

পুলিশ মঙ্গলবার বাধ্য হয় মামলা গ্রহণ করতে। ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন (মামলা নং-০৭)।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান জানান, ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি নির্যাতনকারী শফিকুলের ভাই হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

(আরএম/পিবি/ মে ০৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test