E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় প্রতিমা ভাংচুর, প্রশাসন নিরব, সংখ্যালঘুদের মাঝে ক্ষোভ

২০১৪ মে ১৫ ১৮:০০:৩৬
নওগাঁয় প্রতিমা ভাংচুর, প্রশাসন নিরব, সংখ্যালঘুদের মাঝে ক্ষোভ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর তিন উপজেলায় ৬ দিনে তিনটি মণ্ডপে প্রতিমা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে সরকার দলীয় নেতা-কর্মী দাবীদার ও দুর্বৃত্তরা। পৃথক এ তিনটি ঘটনায় নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা ও জিডি দায়ের করা হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

পুলিশের চোখে আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এদিকে একের পর এক ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার ঘটনার নায়করা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও শুধু রাজনৈতিক কারনে জড়িতদের গ্রেফতার না করায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিন দুপূরে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার রজয়পুর গ্রামের মাঠে জোর করে একটি মন্ডপের সন্যাস(শিব) মূর্তি পুড়িয়ে দিলেন স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার ছোট ভাই আব্দুল হাকিম (৪৬) ও তার সহযোগী আফজাল হোসেন(৪৪)। এ ঘটনায় বুধবার দিনগত রাতে আব্দুল হাকিম ও আফজাল হোসেনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে থানার অফিসার ইনচার্জ এএইচ এনায়েত উদ্দিন জানিয়েছেন।
রবিবার (১১ মে) দিনগত রাতে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের একটি শ্মশানের সম্পত্তির দখল নিতে নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বজলুর রহমান নঈমের নেতৃত্বে ১৮/২০টি মোটরসাইকেলসহ অর্ধশতাধিক ক্যাডার বাহিনী লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে কীর্তনরত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মারপিট, শিবমূর্তি ভাংচুর ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সোমবার দুপূরে থানায় বজলুর রহমান নঈমসহ ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন শ্মশান শিবমন্দিরের সেবায়েত লাল বাহাদুর চন্দ্র শীল। এদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুভুতিতে হানার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হিন্দুধর্মীয় কয়েক ব্যক্তিসহ বাদীপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপোষ মিমাংসার নামে প্রহসন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা হামলা এবং প্রতিমা ভাংচুরের অপরাধে আসামীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টা বিতর্কিত জমি থেকে মন্দির সরিয়ে দিয়েছে। এই স্পর্শকাতর মামলায় আসামীরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কাউকে ধরেনি। এব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ ওবাইদুল হক আসামী গেফেতারের চেষ্টা চরছে বলে জানান।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে (৮মে) নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নৈদিঘী গ্রামে শিব মন্দিরের একটি শিব মূর্তির মাথা কেটে গ্রামের একটি খেলার মাঠে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ খান জানিয়েছেন।
জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল জানান, সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সমঝোতা করে দেশ পরিচালনার কারণে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। নওগাঁ শান্তিপ্রিয় জেলা হওয়ার পরও পরপর তিন-তিনটি ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু প্রশাসন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যতঃ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জেলা সিপিবি’র সভাপতি প্রদ্যুৎ ফৌজদার জানান, জেলার পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতর অবনতি ঘটেছে। এর আগেও জেলার ধামইরহাট সদরে থানার পার্শ্বে দু’টি মন্দিরের ১০টি প্রতিমা ভাংচুরসহ এ রকম অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে থেকে কাউকে গ্রেফতার না করতে পারায় দিনদিন এ ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মজুমদার গোপাল জানান, বর্তমান সরকার এ সকল বিষয়ে আন্তরিক থাকলেও জেলার পুলিশ প্রশাসন থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়টি দেখা যায়নি। যার কারনে দিনদিন এ ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পুলিশ প্রশাসনের নিরব ভুমিকার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার কাইয়ুমুজ্জামান খাঁন জানান, পৃথক স্থানে মূর্তি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশ প্রশাসন বদ্ধ পরিকর।
(বিএম/এএস/মে ১৫, ২০১৪)




পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test