E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নির্যাতনের শিকার ববিতা ফের হাসপাতালে

২০১৫ মে ১১ ১৭:১২:১২
নির্যাতনের শিকার ববিতা ফের হাসপাতালে

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামে গৃহবধূ ববিতা বেগম (২১)। তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন করে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

সে ক্ষত আজো শুকাইনি। ব্যাথা, জ্বর আর ঘন ঘন বমির কারণে ববিতা এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয়। তার পরেও নড়াইল সদর হাসপাতাল থেকে গত রবিবার বিকালে ছাড়পত্র পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কেবিনে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।

সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত ববিতা বলেন, নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে আমিসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর হুমকি-ধামকি অব্যহত ছিল, এখানে (লোহাগড়া) সে রকম কোন চাপ নেই। আমি এখনও সুস্থ্য না। আমার দু’পা অবশ হয়ে পড়ছে।

এদিকে, নির্যাতনের ঘটনার ১২দিন পর সোমবার বিকাল পর্যন্ত প্রধান আসামী স্বামী সেনা সদস্য শফিকুল শেখ (২৬)কে পুলিশ আটক করতে পারেনি। পুলিশ জানায়, ৫ মে দায়েরকৃত মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী চাচা শ্বশুর কালাম শেখ (৩৬)কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তাছাড়া, নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকায় ৭ মে নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম এলাকা থেকে অপর চাচা শ্বশুর হিরু শেখ (৪০)কে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান আসামী ও সেনা সদস্য শফিকুল শেখ সিলেট সেনানিবাসে ৩৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক পদে কর্মরত। সেখানকার অধিনায়ককে লিখিত ভাবে ঘটনা ও মামলার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে সোমবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। ৭ মে বিকালে নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দন্ড বিধির ২২ ধারায় ববিতার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন’।

নির্যাতিত ববিতা, তার মা খাদিজা বেগম, ভাই হাদিউর মোল্যা ও আহাদ আলী মোল্যার অভিযোগ, ‘ববিতার ওপর নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছেন কাশিপুর ইউনিয়নের পদ্মবিলা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক শেখের ছেলে ও ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আজিজুর রহমান ওরফে আরজু। দফায় দফায় নির্যাতনের সময় আরজু নিজেও ববিতার ওপর নির্যাতন চালায়।

ববিতার মা খাদিজা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ববিতার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় গোটা পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। মামলার আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এই দুঃচিন্তা ক্রমশই বাড়ছে। আমরা দরিদ্র ও অসহায়’।

এদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুয়ায়ী গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নড়াইলের জেলা প্রশাসক আঃ গফফার খান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুব্রত কুমার সাহা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোকতার হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ ফজলে এলাহী, লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন এবং ববিতার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। এ সময় তার চিকিৎসা ব্যয় বাবদ জেলা প্রশাসক নগদ ২ হাজার টাকা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২ হাজার, লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ১ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর পূর্বে নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম ববিতার চিকিৎসার জন্য নগদ ৫ হাজার ও কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মতিয়ার রহমান ১ হাজার ৫শ টাকা প্রদান করেন।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউপি’র ভূষিমাল ব্যবসায়ী ছালাম শেখের ছেলে ও সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সাথে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যার মেয়ে ববিতার প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর তাদের গোপনে বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পরে স্বামী শফিকুলসহ তার পরিবার যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেলসহ টাকা দাবি করায় ববিতা নড়াইলে আদালতে একটি মামলা দায়ের করায় তার ওপর শফিকুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত ২৯ এপ্রিল শফিকুল ছুটিতে বাড়ি এসে ববিতাকে তার বাড়ি আসার জন্য খবর দেন এবং ওই রাতে তারা একত্রে রাত্রিযাপন করেন। কিন্তু বিধি বাম!

পরের দিন ৩০ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে ববিতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্বামী শফিকুল, শ্বশুর ছালাম শেখ, শ্বাশুড়ী জিরিন বেগম, চাচা শ্বশুর কালাম, হিরু, ভাসুর হাসান শেখ, প্রতিবেশি নান্নু শেখ ও পাশের পদ্মবিলা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক শেখের ছেলে ও ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আজিজুর রহমান ওরফে আরজু পরস্পর যোগ সাজগে ববিতাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মেহগুনি গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ৫ মে ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ববিতার ওপর নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় নড়াইল-লোহাগড়াসহ দেশব্যাপী তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

(আরএম/এএস/মে ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test