E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্ত্রীকে গাছে বেঁধে অত্যাচারের মামলায় ৪ জন গ্রেফতার

২০১৫ মে ১২ ২০:১৬:৫৬
স্ত্রীকে গাছে বেঁধে অত্যাচারের মামলায় ৪ জন গ্রেফতার

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামে গত ৩০ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে ববিতা নামে এক গৃহবধূ গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। ওই গৃহবধূর স্বামী সেনাবাহিনীর সদস্য শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে এ নির্যাতন চালায়।

গৃহবধূ ববিতা বর্তমানে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনার পাঁচ দিন পর লোহাগড়া থানা পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা গ্রহণ করেছে। সরেজমিন বুধবার সকালে অভিযুক্ত স্বামী শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা ও পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে ববিতা ও তার বাবা-মা ও পরিবারের কথা বলে এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের শালবরাত গ্রামের ছালাম শেখের ছেলে সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সঙ্গে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যার মেয়ে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী (প্রাইভেট) ববিতার (২১) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই সম্পর্র্কের জের ধরে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গোপনে তাদের বিয়ে হয় (রেজিস্ট্রি ২২ নভেম্বর)। বিয়ের কিছুদিন পর ববিতার স্বামী সিলেট সেনানিবাসের ৩৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত সদস্য শফিকুল শেখ ও শাশুড়ি তাকে ঘরে তুলে নেবে না বলে টালবাহানা শুরু করে। শফিকুলও ববিতার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ববিতা একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ে। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। এতে শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

নির্যাতিত ববিতার মা খাদিজা বেগম জানান, ২৯ এপ্রিল ববিতার স্বামী শফিকুল বাড়িতে আসে এবং ববিতাকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়া জন্য খবর দেয়। সব সমস্যার মীমাংসা করা হবে বলেও জানানো হয়। ববিতা খুশি হয়ে রাতেই স্বামীর বাড়িতে যান। পরের দিন (৩০ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে ববিতার স্বামী শফিকুল, ভাসুর হাসান শেখ, শ্বশুর ছালাম শেখ, শাশুড়ি জিরিন আক্তার, চাচা শ্বশুর কালাম শেখ, প্রতিবেশী নান্নু শেখ এবং পাশের পদ্মবিলা গ্রামের আজিজুর রহমান আরজু মিলে ববিতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাশবিক নির্যাতন চালানোর একপর্যায়ে ববিতা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাকে বাজারে নিয়ে একটি দোকানে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, ববিতাকে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়ায় শফিকুলের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে সাহস করে না। এ কারণে চরম নির্যাতনের পরও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। পুলিশও প্রথম প্রথম বিষয়টি এড়িয়ে যায়। পরে নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে সকলের টনক নড়ে। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শফিকুল তাদের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নির্যাতনের ওই ঘটনার পাঁচ দিন পরও স্থানীয় থানা পুলিশের পক্ষে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। একপর্যায়ে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ মঙ্গলবার (৫মে) বাধ্য হয় মামলা গ্রহণ করতে। ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন (মামলা নং-০৭)। এদিকে, বুধবার সকালে সরেজমিন শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা, ভাই, চাচাসহ পরিবারের তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে থাকা ববিতার স্বামী শফিকুলের ভাবী রুনা খানম জানান, সবাই বেড়াতে গিয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে তিনি জানান, ববিতাকে সামান্য মারা হয়েছিল। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান জানান, ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি নির্যাতনকারী শফিকুলের ভাই হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে মামলার ৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে গত সোমবার (১১ মে) রাত ১টার দিকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ববিতার শ্বশুর ছালাম শেখ, ববিতার ভাসুর আবুল হাসান শেখ ও প্রতিবেশি নান্নু মোল্যাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার প্রধান আসামি ববিতার স্বামী শফিকুল শেখকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া গত ৫ মে মামলা দায়েরের পর এজাহারভূক্ত আসামি শফিকুলের চাচা কালাম শেখ এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে হিরু মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে, এ মামলার আসামি ববিতার শ্বাশুড়ি জিরিন আক্তার ও আজিজুর রহমান আর্জুকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ৫ মে (মঙ্গলবার) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ববিতার স্বামী শফিকুল শেখসহ সাতজনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন ববিতার মা খাদিজা বেগম। এদিকে, নড়াইল সদর হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসা শেষে নির্যাতিত গৃহবধূ ববিতাকে গত রোববার (১০ মে) লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মামলার বিবরণে ও ববিতার বাবার বাড়ির লোকজন জানান, গত ৩০ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে ববিতার শ্বশুরবাড়ি নড়াইলের শালবরাত গ্রামে একটি গাছের সাথে বেঁধে ববিতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক লাঠিপেটাসহ নির্যাতন করা হয়। ববিতা জানান, স্বামী শফিকুলসহ তার বাবা ছালাম শেখ, মা জিরিন আক্তার, চাচা কালাম শেখ ও প্রতিবেশি নান্নু মোল্যাসহ অন্যরা ববিতাকে গাছের সাথে বেঁধে লাঠিপেটা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ববিতাকে উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মোটরসাইকেলসহ যৌতুকের টাকার দাবিতে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ববিতা। তিনি (ববিতা) জানান, তার স্বামী সিলেট সেনানিবাসের ৩৮ বেঙ্গলে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার পর থেকে শ্বশুরবাড়ির পালিয়ে যান। এদিকে, গৃহবধূ ববিতার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ১০ মে (রবিবার) জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়।

(টিএআর/পি/মে ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test