E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় দুই নেতার দ্বন্দ্ব, পাঁচশ দোকান বন্ধ

২০১৫ মে ২৫ ১৮:৪৯:২১
মাগুরায় দুই নেতার দ্বন্দ্ব, পাঁচশ দোকান বন্ধ

মাগুরা প্রতিনিধি : ক্ষমতা ও আধিপত্য নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউপির  ঝামা বাজারের প্রায় পাঁচশ ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠিান দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

শনিবার রাতে, রবিবার ও আজ সোমবার দুপুরে পলাশবাড়ীয়া ইউপির আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রেজাউল করিম চুন্নু ও আওয়ামীলীগ নেতা আলাউদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় ঝামা বাজারের ২০ ব্যবসা প্রতিষ্টানে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পরিস্থিতি সামলা দিতে পুলিশ ৫ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছোড়ে।

এই ঘটনার পর থেকে বাজারের ব্যবসায়িদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসায়িরা দোকানের মালপত্র নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় পাল্টাাপাল্টি মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে। গ্রেফতার আতঙ্কে অধিকাংশ গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ এযাবৎ ১৮ জনকে আটক করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় ব্যবসায়ি-ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে ঝামা বাজারে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু হয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান একই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরঝামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. রেজাউল করিম চুন্নু ও আওয়ামীলীগ নেতা আলাউদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। শনিবার রাতে আলা উদ্দিনের সমর্থকেরা চুুন্নুর সমর্থকদের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর করে মালপত্র লুট করে। । এই ঘটনার জের ধরে চুন্নুর সমর্থকেরা রোববার কয়েক দফা পাল্টা হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে উভয় পক্ষের ২০টি ছোটবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উভয়পক্ষের সশস্ত্র কয়েক শ’ সমর্থক এক পক্ষ আরেক পক্ষের ইটপাটকেল ছোঁড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় ইট লেগে জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের পাশ্ববর্তি ফরিদপুরের বোয়ালমারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আলাউদ্দিন গ্রুপের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ মুনুসুর, নজরুল, মাজেদুল ও চুন্নুর ৫ টি দোকান ভাংচুর করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশি টহল থাকা অবস্থায় বিকেলে এম. রেজাউল করিম চুন্নুর সমর্থকরা প্রতিপক্ষের অন্তত: ১৫ দোকান লুট করে। মধ্যরাতে দ্বিতীয় দফায় হাবিবুল্লাহ, নজির, শওকত, নিজাম, শরিফুল, টিটুল, খিকু, জাকির, মিটুল, আনোয়ার, ওদুদ, আলাউদ্দিন ও আলামিনের দোকানে ব্যাপক লুটের ঘটনা ঘটে।

এ সময় পুলিশ ৫ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছুঁড়ে লুটেরাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুই দফায় পুলিশ ওই এলাকা থেকে ১৮জনকে আটক করেছে। এই ঘটনায় চুন্নু গ্রুপের নজরুল ফকির বাদি হয়ে ১২০ জন ও আলাউদ্দিন গ্রুপের ৮২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, এই ঘটনার পর বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী লুটের আশঙ্কায় দোকানের মূল্যবান মালপত্র ভ্যান ও নছিমনে বোঝাই দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছেন। পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় এই বাজারের প্রায় পাঁচশতাধিক ছোটবড় ব্যবসায়ি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় তাদের দিন কাটছে আতঙ্কে। দেখলে মনে হবে বাজারে হরতাল চলছে। একটি দোকানও খোলা নেই। হামলা-বাংচুওে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালপত্র ও আসবাব চারদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ি নজরুল ইসলাম আনোয়ার হোসেন জানান, ‘ দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে আমরা ব্যবসায়িরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দোকানপাট খুলতে পারছি না। লুটের ভয়ে মালপত্র সরিয়ে নিয়েছি। আবার মামলার পুলিশের হাত থেকে বাচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

সংঘর্ষে নেতৃত্বদানকারি আওয়ামীলীগ নেতা এম. রেজাউল করিম চুন্নু ও নেতা আলাউদ্দিন এই ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করেন।

এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

মহম্মদপুর থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। অতরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

(ডিসি/এএস/মে ২৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test