E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় বয়লারের ছাই ফেলে রাস্তার খাদ ভরাট

২০১৫ মে ২৭ ১৫:৫৬:৫২
নওগাঁয় বয়লারের ছাই ফেলে রাস্তার খাদ ভরাট

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় বিভিন্ন বয়লারের বর্জ্য ছাই ফেলে রাস্তার খাদ ও  আবাদী জমিসহ একরের পর একর জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আবাদী জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তেমনই অপরদিকে এ সকল ছাই পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বয়লার সমূহের বর্জ্য এ সকল ছাইয়ের কারণে মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনের যাত্রীসহ পথচারিরাও চোখে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চোখে ছাই পড়ায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন যানবাহনের চালকরাও । পাশাপাশি জ্বলন্ত এ সব ছাইয়ে পড়ে গৃহপালিত পশুসহ অন্যান্য পশু এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। এই ছাইয়ের কারণে এলাকার পরিবেশ মারাত্বক হুমকির মুখে পড়লেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই।

নওগাঁর সঙ্গে রাজশাহী ও জয়পুরহাট জেলার যোগাযোগ রক্ষাকারি একমাত্র মহাসড়কটি মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া (নওহাটা) মোড়ে বিভক্ত হয়ে দক্ষিনমুখি মহা সড়কটি মান্দা উপজেলা হয়ে রাজশাহী এবং পশ্চিমমুখি সড়কটি মহাদেবপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা ঘুরে জয়পুরহাট জেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া নওগাঁ থেকে বদলগাছি উপজেলা ঘুরে অপর একটি মহা সড়ক বিভক্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলায় যুক্ত হয়েছে এবং একটি সড়ক পত্নীতলা হয়ে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলা হয়ে রাজশাহীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। পরিবহন সুবিধার কারণে নওগাঁর প্রায় সকল বয়লার চাতাল এ সকল সড়কের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষত নওগাঁর হাপানিয়া থেকে মহাদেবপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশের পুরো অংশটিই বয়লারে ভরা। এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলেও সড়কের পার্শ্বে একই কারণে শতাধিক বয়লার স্থাপন করা হয়েছে। এ সকল বয়লারে জ্বালানী হিসাবে ধানের গুড়া ব্যবহার করায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ছাই বর্জ্য হিসাবে জমা হয়। এ সকল বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় অধিকাংশ বয়লার মালিক বয়লার সংযুক্ত আবাদী জমিসহ সড়ক সংলগ্ন সরকারি জমি ও রাস্তার খাদে তাদের বয়লারের ছাই ফেলে থাকেন। আর এ কারণেই বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
এ ব্যাপারে অবসর প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রবীন্দ্র কুমার মজুমদার বলেন, ছাই একটি উন্নত মানের সার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করা যায়। তিনি এও বলেন, ধানের গুড়ার ছাই-এ যদিও এ্যাসিডের পরিমান একটু বেশী থাকে, তবুও এ ছাই কিছু দিন রেখে দিয়ে জমিতে ব্যবহার করলে জমির অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বেড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু এ সকল বর্জ্য ছাই এসব কাজে ব্যবহার না করে জমি ভরাটের কাজে ব্যবহার করায় একদিকে যেমন জেলার আবাদী জমি কমে যাচ্ছে অপর দিকে তেমনই জেলার পরিবেশ মারাত্বক হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ বাঁচাতে বয়লারের বর্জ্য ছাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক বলে পরিবেশবাদীরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
নওগাঁর এই বয়লারের ছাই নিয়ে মহাদেবপুরের জনগণের নিকট থেকে অভিযোগ প্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে। প্রতিবারই প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। দ্রুতই এ বিষয়টির সমাধান হবে। প্রশাসন থেকে বিগত দিনের ইস্যুকৃত বেশ কিছু চিঠি তুলে ধরে বলা হয়, কয়েকটি বয়লারকে শোধনাগার নির্মাণর জন্য জরুরি চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছাই অন্যত্র না ফেলার ব্যবস্থা নিলে কয়েকটি বয়লারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা উল্লেখ করা কয়েকটি চিঠিও দেখানো হয়েছে। কিন্তু এর পর প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসন কিম্বা অন্য কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা অজ্ঞাত কারণে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। প্রশাসনের বয়লারের এই ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নিরবতাকে নওগাঁবাসী রহস্যজনক বলে মনে করছে।
(বিএম/পিবি/মে ২৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test