E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শত বাধা পেরিয়ে, বৃষ্টি দ্যূতি ছড়ালেন

২০১৫ জুন ০৫ ১১:২৯:১৭
শত বাধা পেরিয়ে, বৃষ্টি দ্যূতি ছড়ালেন

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর থেকে :ফরিদপুরের অজ পাড়াগাঁয়ে তার বসবাস, বাড়ীটি সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের জ্ঞানদিয়া গ্রামে। প্রতিদিন তাকে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে এর মধ্যে অবার এক কিলোমিটার কাদাঁ মাটিতে মাখানো যা বৃষ্টি হলে কাদাঁমাটি ও পানি খেলা করে পথটিতে।

এমন একটি গ্রামের হীরার টুকরো উর্মি হোসেন বৃষ্টির কথা বলছি। যার প্রাইভেট শিক্ষক রেখে পড়ার মতো কোন উপায় ছিলোনা এমনকি তার জন্মদাতা পিতাও খোঁজ নেয়নি কখনো। শুধু মা একাই লড়াই করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ঘড়টি তেমন ভালো নয়, ছিলো না বিদ্যু, রাতের আধারে প্রদীপের পাদ আলোয় পড়াশুনা করে প্রদীপের মতো আলো ছড়িয়েছেন বৃষ্টি নামের মেয়েটি। বৃষ্টির কথা মতো একটি মাত্র সম্বল ছিলো তার সেটি হলো অপার মনোবল ভালো করার, শত প্রতিকূলতার মাঝে সেটি করতে হবে এটিই তার জানা ছিলো। তার নামটি যেমন বৃষ্টিতে খেলা করে, তেমনি তার মেধা শক্তি দ্যূতি ছড়ায় ঈশান গোপালপুরের ঈশান ইনিষ্টিটিউশন স্কুলসহ এলাকায়।

বৃষ্টি এবার কর এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। স্কুলের ১৩৭জন শিক্ষার্থীর মাঝে বৃষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একাই স্কুলে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।

বৃষ্টি জানান, প্রতিদিন সে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পড়তে পেরেছেন আর এর জন্য রাতকে তার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন আর সেটি রাত ১২টা পর্যন্ত। এর মধ্যে খুব ভোর উঠে স্কুলে গিয়েছেন প্রাইভেট পড়তে আর সারাদিন স্কুলে থেকে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরেছেন। স্কুলের শিক্ষকরা তাদের অভাবের কথা চিন্তা করে তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন একদম বিনা পয়সায়।

তিনি জানান, স্যারদের এই ঋণ জীবনে কোনদিন শোধ করতে পারবেন না। বিশেষ করে স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক লিপিকা রানী সাহার কথা যিনি তাকে মায়ের ভালোবাস দিয়ে গড়ে তুলেছেন। এখন তার ইচ্ছা একজন নামকরা ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু এই কথাটি বলতে গিয়ে তার চোখে মুখে সারা রাজ্যর চিন্তা কি ভাবে চলবে সামনের দিনের পড়াশুনা।

বৃষ্টির মা কামরুন নাহার রিপা জানান, এমন অভাবের মাঝে তার এই রেজাল্ট আমাদের গর্বিত করেছে, এখন আমার চিন্তা কিভাবে ওকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। বৃষ্টির মামা বাবলু মিয়া জানান, বৃষ্টি অষ্টম শ্রেনিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলো ও ভালো রেজাল্ট করবে আমরা জানতাম ওর মা একা একা কষ্ট করে পড়াশুনা করিয়েছেন ওকে মাঝে মাঝে আমরা সাহায্য করেছি।

স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা লিপিকা রানী সাহা জানান, বৃষ্টি আমাদের স্কুলের মধ্যে সবচাইতে ভালো ছাত্রী তাকে নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। তার অভাবের কথা চিন্তা করে আমরা স্কুলের শিক্ষকরা অর্থ ছাড়া তাকে সব রকম সহযোগিতা করে গেছি। আমি তাকে মেয়ের স্থান দিয়েছি কারন আমার কোন মেয়ে নেই ওই আমার মেয়ে। তার এই রেজাল্ট অভাবকে জয় করে নতুন আলোতে তাকে পৌঁছে দিবে বলে আমি মনে করি সামনের দিন গুলোতে এই আশাই রাখি সব সময়।

(এসডি/এসসি/জুন০৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test