E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যাত্রীবহনের অভিযোগ

২০১৫ জুন ১৪ ২১:০৩:২৪
কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যাত্রীবহনের অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : রাজধানী ঢাকার সাথে মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যোগাযোগের মাধ্যম কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে লঞ্চগুলো। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা।

যাত্রীদের অভিযোগ, এই নৌরুটে পুরোনো চেহারা ফিরতে শুরু করেছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন প্রশাসনের নজরদারী থাকলেও পরবর্তীতে নজরদারী না থাকায় প্রশাসনকে উপেক্ষা করেই যাত্রী বোঝাই করে চলছে লঞ্চ পারাপার।

এজন্য কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে সব সময় ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে দায়ী লঞ্চমালিক ও সংশ্লিষ্টদের জেল ও জরিমানা করা হলে লঞ্চ দুঘর্টনা রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে যাত্রীদের দাবী।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার নৌ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চালু হয় কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুট।

এই রুটে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে বিভিন্ন সময় ঘটেছে একাধিক লঞ্চ দুর্ঘটনা। সবশেষ গত বছরের ৪ আগস্ট কাওরাকান্দি থেকে প্রায় আড়াইশ যাত্রী নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি ডুবে প্রাণ হারায় বহুযাত্রী। আজও খোঁজ মেলেনি অনেক যাত্রীর।

তবুও আগের মতো এই নৌরুটের লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীবহন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীবহনের প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া হয় বা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিবচরের উৎরাইলের লঞ্চের যাত্রী সজীব, কামাল, সুমন বলেন, প্রতিদিন কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌ-রুটে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। তাদের দিকে সরকারের কোন খেয়াল নেই। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা হয়। এরপর সেগুলো ছেড়ে যায়। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই লঞ্চে উঠি। কোন প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয় বা লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। কোন উপায় না থাকায় আমরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা লঞ্চের যাত্রী রানা, মাহফুজ, জামাল বলেন, লঞ্চের ভেতরের সব আসন ভর্তি হয়ে যায়। যাত্রীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। ছাদে যাত্রী উঠানোর পর লঞ্চগুলো ছাড়ে। তা না হলে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়।

আরেক যাত্রী লুৎফর ফকির বলেন, আমরা নৌপথে জীবনের নিরাপত্তা চাই। যখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে সরকার তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর তাদের কোন বিচারই হয় না।

কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌরুটে চলাচলকারী সকল নৌযানগুলো চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। তবুও লঞ্চ মালিকরা আগের মতো চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীবহন করে পারাপার করছে।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বিএম আতাউর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লঞ্চে কোনো প্রকারের ওভারলোড হয় না। ভবিষ্যতেও হবে না। এই বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টরা তৎপর আছি।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাওরাকান্দি ঘাটে কোনো পুলিশ ফাঁড়ি নেই। এটি শিবচর থানার অধীনে রয়েছে। যখন কাওরাকান্দিতে কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখন শিবচর থানা পুলিশ বিষয়টি দেখে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মানুষের জীবন যাতে কেউ হুমকির মুখে ফেলতে না পারে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, নৌ দুর্ঘটনা রোধে ভ্রাম্যমান আদালত বসানো এখন সময়ের দাবী এবং তা সম্ভব। বিশেষ করে আসন্ন ঈদে ঘরমুখী মানুষের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি জরুরী ভেবে কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি নৌপথের যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে।

(একেএমএনএইচ/পিএস/জুন ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test