E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা মামলার বিচার কাজ ফের শুরু

২০১৪ মে ১৮ ১৮:২৪:৫৯
নাটোরে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা মামলার বিচার কাজ ফের শুরু

নাটোর প্রতিনিধি : সাক্ষী হাজির না হওয়ায় কয়েকদফা সময় পেছানোর পর নাটোরে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা মামলার বিচার কাজ আবারও শুরু হয়েছে। রোববার মামলার ধার্য দিনে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রহিবুল ইসলামের আদালতে কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।

এদিন ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের মীরপাড়া এলাকার যে বাড়ি থেকে ৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই বাড়ির মালিকের স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া,ছেলে মোজাহারুল ইসলাম,জামাতা এমএ মামুন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী মকছেদ ও ফজলুর রহমান সহ ৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলার মোট ৬৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতিপুর্বে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে আটককৃতদের মধ্যে ৪ জন নিজেদের জেএমবি আত্মঘাতি স্কোয়াডের সদস্য বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সাক্ষ্য গ্রহনের দিন মামলার ৭ আসামীর মধ্যে ৬ জনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়। রোববার ৭ জন স্বাক্ষীর জেরা জবানবন্দী শেষে পরবর্তী স্বাক্ষীর জন্য আদালত ৪ ঠা আগষ্ট দিন ধার্য করেন। এসময় উপস্থিত ৬ আসামী মামলার ধার্য দিন এগিয়ে দেওয়ার জন্য বিচারকের নিকট আবেদন করে। আদালত দিন পরিবর্তন করে আগামী ১৬ জুলাই দিন ধার্য করেন।
জেএমবির এই সিরিজ বোমা হামলা মামলার আসামীদের আদালতে হাজির করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সকাল থেকেই পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আদালত চত্বর সহ সহ আশপাশ এলাকায় নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আদালত এলাকায় প্রবেশের মুখে সাধারন মানুষদের তল্লাশী করা হয়। রোববার বিশেষ পুলিশী নিরাপত্তায় আসামী আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেন মিঠু , হাফিজুর রহমান হাফিজ , শিহাব উদ্দিন শিহাব , শহীদুল্লাহ্ ওরফে ফারুক, শফিউল্লাহ্ ওরফে তারিককে কারাগার থেকে নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে আনা হয়। অপর আসামী আব্দুল মতিন ওরফে ইসমাইলকে আদালতে আনা হয়নি।
২০০৫ সালের ১৭ ই আগষ্ট নাটোরে জজ আদালত, ডিসি অফিস, ট্রেজারি, বাসস্ট্যান্ড, পেট্রোলপাম্প সহ ৮টি স্থানে সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে বোমা বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটে। বোমা বিষ্ফোরনের স্থানে ইসলামি শাসন কায়েমের লক্ষ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের আহ্বান সম্বলিত জামায়েতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবি’র প্রচারপত্র বা লিফলেট পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নাটোর থানার উপ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ওই দিনই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাটোর থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে। পরে ২০০৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়িতে জেএমবি সদস্য শহীদুল্লাহ্ তারেক ওরফে তুষার বিপুল পরিমান জেহাদী বই , লিফলেট ও বিষ্ফোরক দ্রব্যসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তারই স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাটোর শহরের মীরপাড়া জেএমবির আস্তানায় নাটোর ও রাজশাহী জেলার পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। ১৮সেপ্টেম্বর রাতে ওই আস্তানার তিনতলা ভবন থেকে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশের সাথে জেএমবি সদস্যদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। বোমা ফাটিয়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়ক আব্দুর রহমানের জামাতা আব্দুল আওয়ালসহ অন্যরা বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ এখান থেকে বিপুল পরিমান জেহাদী বই, মোবাইল, মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল, বিষ্ফোরক দ্রব্য, হিট লিষ্ট উদ্ধার করে। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের তৎকালীন ম্যাজিষ্ট্রেট এম এম আরিফ পাশার কাছে শিহাব , দেলোয়ার হোসেন মিঠু, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আব্দুল মতিন ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলে তারা জেএমবি আত্মঘাতি স্কোয়াডের সদস্য ।
এ মামলায় তদন্তকারি কর্মকর্ত আইও নাটোর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান তদন্ত শেষে আত্মস্বীকৃত জেএমবির সুসাইড স্কোয়াডের সদস্য হাফিজুর ইসলাম হাফিজ ওরফে নোমান, দেলোয়ার হোসেন ওরফে ফজলার রহমান, শিহাব উদ্দিন ওরফে শিহাব ওরফে হানজালা ওরফে আনজালা, মতিন ওরফে ইসমাইলসহ শহীদুল্লাহ্ ওরফে ফারুক, শফিউল্লাহ্ ওরফে তারিক ও আবাদুর রশিদের নামে নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহন করে বিচারের জন্য ২০০৫ সালের ২৯ শে নভেম্বর মামলাটি জজ আদালতে প্রেরন করেন। এর পর সাক্ষি হাজির না হওয়ায় গত ৮ বছরেও মামলাটির বিচার কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। মামলার ৬৬ জন সাক্ষীর মধ্যে কয়েক দফায় এপর্যন্ত ৩১ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়।
(এমআর/এএস/মে ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test