E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত বরিশালের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

২০১৫ জুন ২০ ১৬:৩৯:৪৮
মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত বরিশালের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বরিশাল প্রতিনিধি : গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের চালু করা মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশালবাসী। জেলার ১০ উপজেলার প্রতিটি হাসপাতালে মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হলেও অধিকাংশ উপজেলায় এ সেবা সর্ম্পকে কেউ জানেনই না। ফলে সরকারের এ মহতি উদ্যোগ থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার জনগণ।

সূত্রমতে, ২০১৩ সালে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন মাত্র ১০৪ জন ও ২০১৪ সালে ৮৯ জন। এরা অধিকাংশই হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের নিকটতম স্বজন। ওই উপজেলার বিলাঞ্চল বলে খ্যাত হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামের উন্নয়ন কর্মী বাসুদেব, শিবপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আঃ মজিদ বকতিয়ারসহ একাধিক সচেতন নাগরিকেরা জানান, তাদের গ্রাম থেকে হারতার রাস্তায় উঠতেই নূণ্যতম দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। এমন স্থান থেকে কোন রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে তাদের বেগ পেতে হয়। সরকারের মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা সর্ম্পকে তারা অবগত নন। কোথায় মোবাইল নাম্বার টানানো রয়েছে তারা তাও জানেননা। সেক্ষেত্রে প্রচার প্রচরনার অভাবকেই তারা দায়ী করেন। তারা প্রতিটি হাট-বাজারসহ স্কুল-কলেজে মোবাইল নাম্বার ছড়িয়ে দেয়ার দাবি করেছেন। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ একেএম সামছুদ্দিন বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা হচ্ছে উজিরপুর। এখানকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনের তুলনায় এমনিতেই ডাক্তার সংকট রয়েছে। তাই জরুরী বিভাগের মোবাইল নাম্বারটি সবখানে টানিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে তারাই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুলাদী উপজেলাবাসী মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে কিছুই জানেননা। সেখানে দায়সারা ভাবে উপজেলা পরিষদ ও হাসপাতালের এক কনারে মোবাইল নাম্বারটি টানিয়ে রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের মেডিকেল অফিস ডাঃ সাইদুর রহমান জানান, হাসপাতালের সামনে নাম্বার লেখা রয়েছে। বাকেরগঞ্জ পৌর সদরের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল তালুকদার জানান, তাদের এলাকার মানুষের এ সেবা সর্ম্পকে জানা নেই। মুলত প্রচার-প্রচারনা না থাকায় তারা জানতে পারছে না। উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুর রহমান জানান, তিনি উপজেলা পরিষদে মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা নামে একটি মোবাইল নাম্বার পেয়ে দুইদিন ওই নাম্বারে ফোন করে তা বন্ধ পেয়েছেন। যার কারণে আর ফোন করেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে সাইফুর রহমান বলেন, সরকার তাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার চেষ্ঠা করলেও মূলত সিভিল সার্জন অফিসের তদারকি বা মনিটরিংয়ের অভাবে তারা সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হিজলা উপজেলায় প্রচার প্রচারনার অভাবে ২০১৩ সালে মাত্র ৫৬ জন মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করেছেন। ২০১৪ সালে এ সেবার পরিমান আরো কমেছে। গৌরনদী উপজেলায় গত ২০১৩ ও ১৪ সালে একজন রোগীও মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেনি। এ সেবা সম্পর্কে জানা না থাকার কারণে রোগীরা সেবা নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন ওই উপজেলার জনগন। এছাড়া বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, আগৈলঝাড়া ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাবাসীও এ সেবা সম্পর্কে কিছুই জানেননা। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে এমবিবিএস চিকিৎসকের সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তারা (চিকিৎসকেরা) অনুপস্থিত রয়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকেও রোগীরা তেমন কোন সেবা পায়না।

এ ব্যাপারে বরিশালের সিভিল র্সাজন ডা. এটিএম মিজানুর রহমান জানান, মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে তারা আগে নিয়মিত মনিটরিং করতেন। এখন তেমন একটা করা হচ্ছে না। মুলত কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রভাবে মোবাইল স্বাস্থ্যসেবার চাপ কমছে। ফলে এখন আর জনগন ফোন করে না, তারা সরাসরি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা গ্রহন করছে। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকা ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
(টিবি/পিবি/জুন ২০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test