E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় বন্দুকের গুলিতে আদিবাসী বালক নিহত , আটক ১৬

২০১৫ জুন ২২ ১৭:৩৬:৪০
নওগাঁয় বন্দুকের গুলিতে আদিবাসী বালক নিহত , আটক ১৬

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর পত্নীতলায় আদিবাসীদের উচ্ছেদ প্রচেষ্টার জের ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুকের গুলি করে এক আদিবাসী বালককে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ভূমিহীন  পরিবারের সমস্য গুলিবিদ্ধ হাফিজুল (২৬) ও বেলাল (২৮)কে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে উপজেলার আকবরপুর গ্রামের বুধুয়া পুকুর পাড়ে আদিবাসী ও ভূমিহীনদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও গুলি বর্ষনেরর ঘটনা ঘটে। ঘটনার মুলহোতাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামে সরকারী খাস জমি বুধুয়া পুকুর পাড়ে এলাকার বেশ কিছু ভূমিহীন আদিবাসী পরিবার ও কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে তাদের বসত বাড়ি তৈরী করে সেখানে বসবাস করে আসছিল। একই সম্পত্তি ওই গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল মতিন গং নিজেদের দাবী করে পুকুর পাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার জন্য ইতোপূর্বে বেশ কয়েক দফায় সেখানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে প্রভাবশালীরা সেখানে বসবাসরত আদিবাসী ও ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়। সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ৫০/৬০জনের একদল ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে প্রভাবশালী মতিন গং ফের ওই আদিবাসী পল্লীতে উপস্থিত হয়ে তাদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ওই পল্লীতে বসবাসকারী ভূমিহীনরা তাদের আশ্রয়স্থল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলে প্রভাবশালী আব্দুল মতিন প্রকাশ্যে বাড়ি থেকে তার লাইসেন্সধারী দু'নলা বন্দুক বের করে এনে আদিবাসীদের ওপর ৪ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। এসময় ওই বন্দুকের গুলিতে ওই পল্লীর সুনু উরাওয়ের পুত্র শ্রী মিথূন উরাও (১৩) ঘটনা¯স্থলেই নিহত হয়। এছাড়া মাহতাব আলীর পুত্র হাফিজুল হক (২৫), জয়নালের পুত্র বেলাল (২৮), শ্রী সুভান উরাওয়ের পুত্র শ্রী উকিল উরাও (২৭), মৃত নজিমুদ্দীনের পুত্র নুর ইসলাম (৩৫), শহিদুল ইসলামের স্ত্রী সায়েদা খাতুন (৩০) গুরুতর আহত হয়। আহতদের পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে হাফিজুল ও বেলালের অবস্থা গুরতর হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে পত্নীতলা ফায়ার সার্ভিস সেখানে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই সঙ্গে সিনিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (পত্নীতলা সার্কেল) মোঃ ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রভাবশালী আব্দুল মতিনের গ্রামবাসী কর্তৃক ঘেরাও করে রাখা বাড়িটি হেফাজতে নেন। এসময় পুলিশ ওই বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বন্দুক চালক ঘাতক আব্দুল মতিন, তার ভাই আব্দুল মজিদ, মোজাম ও ঘটনা সঙ্গে জড়িত কয়েকজন লাঠিয়ালবাহিনীসহ মোট ১৬জনকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মাত্র মাসখানেক আগে মতিন গং ওই আদিবাসী পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটালেও পুলিশ আদিবাসীদের দেয়া মামলাটি অজ্ঞাত কারণে রেকর্ড করেনি। তাদের মতে, তখন মামলাটি রেকর্ড করে দোষীদের গ্রেফতার করলে আজ হয়তো বালক মিথুনের অকালে প্রাণ যেত না। যদিও ওই পুকুর নিয়ে আগের বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়েই নওগাঁর পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে প্রভাবশালী আব্দুল মতিনের বাড়িটি রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।

(বিএম/পিবি/জুন ২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test