E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলায় সড়কগুলোর বেহাল দশা

২০১৫ জুন ২৮ ১৩:৫৮:১৯
মংলায় সড়কগুলোর বেহাল দশা

বাগেরহাট প্রতিনিধি  : সামুদ্রিক বন্দর শহর মংলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভয়াবহ আকারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার অধিবাসীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছে। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণের নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলে অতিরিক্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থাতেও কাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে করে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও এ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে পৌরসাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে শহরের অধিকাংশ সড়কই এখন যেন চাষের ক্ষেত হয়ে পড়েছে। পৌরবাসীকে পানি কাদা মাটির মধ্যে দারুণ ভোগান্তির মধ্যে চলাচল করতে  হচ্ছে। এদিকে পুরো শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন ঈদ বাজারে। সড়কের ভগ্ন দশার কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন বিচিকিনি করতে পারছে না।

জানা গেছে, বছর দেড়েক আগে প্রথম শ্রেণীর মংলা পোর্ট পৌরসভা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক ও সড়কের পার্শ্বে ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণের কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার দরুণ কাজ চলতে থাকে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এক বছরের নির্ধারিত সময় পার হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে অতিরিক্ত আরো তিন মাস সময় বর্ধিত করে নেয়। এ অতিরিক্ত সময়ের ইতিমধ্যে এক মাস সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কাজ চলছে ধীরগতিতে যেনতেন ভাবে। এ অবস্থায় বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে শেখ আঃ হাই সড়ক, বিএলএস রোড়, মাদ্রাসা রোড়, শ্রমিক সংঘ সড়ক, হাজী বাহার উদ্দিন সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক সংলগ্ন ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণ কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। এসব নির্মাণ কাজ বর্ষার আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। এ অবস্থায় পৌরবাসীকে সড়কে চলাচলে দায় হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। সড়কের নানা জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে যত্রতএভাবে। সড়কের দু’পাশে ড্রেন কাম ফুটপাথ পুরোপুরি নির্মাণ শেষ করা হয়নি। ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণে সড়কে ব্যাপক খোড়াখুড়ি করায় বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। সড়কগুলোতে কবে নাগাদ ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কাদার মধ্যে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রিক্সশা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন এমনকি সাইকেল পর্যন্ত চলাচলে ভোগান্তির শেষ থাকছে না। পথচারীসহ যানবাহন চালকদের প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। অফিসগামি লোকেরা কদমাক্ত রাস্তায় পড়ে গিয়ে নানাভাবে আহত হচ্ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সড়কের মাঝে গর্তে আটকে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। এতে করে ওই সব সড়কের অধিবাসীদের কষ্টের আর অন্ত থাকছে না।
মংলা পৌরসভা রিক্স্রা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ঈদ্রিস আলী বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের চরম খামখেয়ালীপনার দরুণ বর্ষার আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। এ অবস্থায় শহরের যানবাহন চালক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা পর্যন্ত চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এদিকে পুরো শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন ঈদ বাজারে। শহরের বাজার এলাকায় রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে পোষাক, জুতাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সগুলোতে কোন ক্রেতা ও অর্ডার নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা এবারের ঈদ বাজার নিয়ে দুঃচিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মংলা বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি হাবিব মাষ্টার এ ব্যাপারে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে সড়কের দুরাবস্থায় এবারের ঈদে ব্যবসায়ীরা তেমন বিচিকিনি করতে পারছে না। এতে করে ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকার লোকসান গুনবে।
মংলা নাগরিক সমাজের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নূর আলম পুরো শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদারসহ পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে জন ভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি এ নির্মাণকাজে ব্যাপক স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ধিত সময়ের মধ্যেই যাতে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয় তার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক তদারকি করছে। এর পরেও যদি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদেরকে জরিমানা গুনতে হবে।
(একে/পিবি/জুন ২৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test