E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে যৌতুক লোভী মাদ্রাসা শিক্ষকের কাণ্ড

২০১৫ জুন ২৮ ১৪:৪৮:১৩
বাগেরহাটে যৌতুক লোভী মাদ্রাসা শিক্ষকের কাণ্ড

বাগেরহাট প্রতিনিধি : মাত্র ছয় মাসের শিশু কন্যা তুবা জন্মের পর থেকেই পিতার আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। তুবা জানেনা তার পিতা মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল খায়েরের যৌতুকের শিকার হয়েছে মা সানজিদা। অবুঝ সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে পিতার ভালোবাসা থেকে। সানজিদা তার কন্যার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যৌতুক লোভী স্বামীর বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জানাগেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের ভরাঘাটা গ্রামের মো.নূরুল ইসলাম হাওলাদারের কন্যা সানজিদা আকতার মারুফা (২৪)। ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর ৫০ হাজার ১ টাকা দেনমোহরে কাবিননামা মূলে হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের পাঠামারা গ্রামের আব্দুল খালেক মাতুব্বরের ছেলে আবুল খায়ের মাতুব্বরের (৩৫) বিয়ে হয়। আবুল খায়ের মাতুব্বর পৌর সদরের আবু হুরাইরা দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক। বিয়ের সময় ও বিয়ের পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, ফটোষ্টাট মেশিন, দোকানের আসবাবপত্র, রঙিন টেলিভিশন ও সংসারের যাবতীয় মালামালসহ ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয় । এছাড়াও ছোট জামাতা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার ও অজুহাতে আরো সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দেয়া হয়।

এরই মধ্যে তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নিয়ে ২য় সন্তানটি কোল জুড়ে বেঁচে আছে। ২য় বার সন্তান কন্যা জন্ম নেয়ায় স্বামী আবুল খায়ের মাতুব্বর স্ত্রীর উপর চরম ভাবে নাখোশ হয়। আর এরই জের ধরে স্ত্রী উপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যৌতুকলোভী স্বামী আবুল খায়ের আবারো মোটরসাইকেলের জন্য আরো দেড় লক্ষ টাকা দাবি করে। দিতে অস্বীকার করায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শিশু সন্তান নিয়ে পিতার বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয়। এনিয়ে দুই পবিারের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্ধ নিয়ে ৮ মে সানজিদা আকতারের পিতার বাড়িতে আপোষ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে যৌতুক লোভী স্বামীসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিল। এ বৈঠকে যৌতুকের দেড় লক্ষ টাকার দ্বন্দের জের ধরে যৌতুক লোভী লম্পট স্বামী সানজিদাকে বেধড়ক মারপিট করে। মারপিটে গুরুতর আহত সানজিদাকে মোরেলগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনায় সানজিদা আকতার বাদি হয়ে স্বামী আবুল খায়ের সহ ৪ জনকে আসামী করে ১৩ মে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৩। এ মামলা দায়েরের পর প্রভাবশালী আসামী আবুল খায়ের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আবুল খায়ের মাদ্রাসায় মেডিকেল ছুটিতে আছেন বলে তার মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শাহাদাত হোসেন জানান।
মোড়েলগঞ্জ থানার এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মারাফাত আলী জানান, আবুল খায়ের পলাতক রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আবুল খায়ের মামলার কোন তোয়াক্কা না করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সানজিদাকে তালাক দেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন।
সানজিদা আকতার মারুফা মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল খায়ের মাতুব্বরের দ্বিতীয় স্ত্রী।

এর আগে আবুল খায়ের ২০০২ সালে জিয়ানগর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুস সালাম মৃধার কন্যা আসমা আকতার (২৬) কে বিয়ে করে। সেখানে তাদের দুটি সন্তান শাহরিয়ার (৫ ) ও কন্যা সরাইয়া (৩) রয়েছে। এ সংসারটি ও যৌতুকলোভী স্বামীর কারণে টিকিয়ে রাখতে পারেনি আবুল খায়েরর প্রথম স্ত্রী আসমা। অভিশপ্ত যৌতুকের শিকার আসমা আকতার বাদি হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে পিরোজপুর আদালতে মামলা (সিআর ১২২/১০) দায়ের করেন। এ মামলাটি প্রভাবশালী আবুল খায়ের প্রভাব খাটিয়ে মীমাংসা করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। তালাকপ্রাপ্ত আসমা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে পিত্রলায় আছেন।
প্রথম স্ত্রী আসমা বেগম ও দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আকতার বলেন, আবুল খায়ের রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে । আইন আছে কিন্তুু আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে লেবাজধারী ধার্মিক আবুল খায়ের আইনের ফাঁক ফোকর ও অর্থের বিনিময়ে পার পেয়ে যেতে পরে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

(একে/পিবি/জুন ২৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test