E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জুনেও শেষ হয়নি মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যালেন খনন

২০১৫ জুলাই ০২ ১৮:১৬:৩৮
জুনেও শেষ হয়নি মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যালেন খনন

বাগেরহাট প্রতিনিধি:তিন দফা সময় বাড়িয়ে জুন মাসেও শেষ হয়নি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প আন্তর্জাতিক নৌ প্রটোকল ভুক্ত মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যালেনটির খনন কাজ। খনন শেষে জুন মাসে চ্যানেলটি জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এঅবস্থায় কোটি কোটি টাকা খরচ করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চ্যানেলটির খনন কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন। তবে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে আগামী আগষ্ট মাসের মধ্যে শেষ হবে এই চ্যানেল খনন কাজ। একদিকে চলছে খননের কাজ। অন্যদিকে জোয়ারের সময় বিপুল পরিমাণে পলি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। দুই দফায় সময় বাড়িয়েও সর্বশেষ জুন মাসের মধ্যে নৌপথটি চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্ধেকের মত কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

গতবছরের ১জুলাই বাগেরহাটের রামপালের কালীগঞ্জ-ডাকরা পয়েন্টে খনন কাজের উদ্বোধন করেছিলেন বিআইডব্লিউটিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার। একাধিক বার পরির্দশনে এসে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে এই চ্যানেলটি মাত্র চার মাসের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার ঘোষণা দেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী, সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান। তবে পরবর্তী সময়ে ২ দফা সময় বাড়িয়েও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জুন নৌপথটি চালুর ঘোষণা দেন খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

বিআইডব্লিউটিএ সুত্রে জানাগেছে, গত জুন মাস পর্যন্ত ওই চ্যানেলে প্রায় ৬৬ লাখ ঘনমিটার খনন করা হয়েছে। এর ফলে মাত্র ৯ থেকে ১০ ফুট গভীরতার জাহাজ এই পথে চলাচল করতে পারছে। তবে স্থানীরা জানিয়েছে শুধু জোয়ারের সময় এসব জাহাজ চলাচল করতে পারছে। বর্তমানে ১৫ ড্রেজার দিয়ে একযোগে খননকাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া একটি লুপকাট করার কারণে এই নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার কমে এসেছে।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ওই নৌপথ চালুর জন্য করণীয় নির্ধারণে একটি সামগ্রিক সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সিইজিআইএস ওরাবুনিয়া বিল, পেড়িখালী বিল ও হোগলডাঙ্গা বিলে তিনটি টাইডাল বেসিন নির্মাণের এবং দাউদখালী খালের ১৫ কিলোমিটার ও আরো কয়েকটি খালের ৬০ কিলোমিটার খননের সুপারিশ করে। এসব না করে শুধু খনন করা হলে পলি জমে চ্যানেলটি কিছু দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে প্রাথমিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।

এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী এ এইচ মো: ফরহাদ উজ্জামান বলেন, বর্তমানে ওই চ্যানেলের বগুড়া খালের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পলি পড়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তাই ড্রেজিং করেও নির্ধারিত সময়সীমা রক্ষা করা যাচ্ছে না। ঈদের পর চোট লাইটারেজ জাহাজের জন্য চ্যানেলটি পুরোপুরি (২৪ ঘন্টার) জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে চ্যানেলটিতে ১৩ ফুট গভীরতায় আনা সম্ভব হবে। যাতে সকল প্রকার জাহাজ চলাচল করতে পারে। বর্তমানে ছোট ছোট তেলের জাহাজ চলাচল করছে। এই চ্যানেলটি দিয়ে গত ৫মে থেকে জোয়ারের সময়ে জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৬’শ ছোট ছোট লাইটারের জাহাজ চলাচল করেছে বলেও তার দাবি।

এলাকাবাসি জানায়, বর্তমানে চ্যানেলটি পুরোপুরি চালু করতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে। একদিকে সংযোগ খাল কেটে দেয়া হলেও অন্যদিকে আবার প্রভাবশালীরা পুনারায় দ্রুত তা আটকে দিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। এই নৌপথটি বন্ধ থাকায় ভারত-মংলা-ঢাকা রুটের নৌযানগুলোকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এই জাহাজ চলাচলের ফলে সুন্দরবনে শ্যালা,মরা ভোলা ও ভোলা নদীতে তিন তিন বার লাইটারের জাহাজ ডুবে বনের জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। এঅবস্থায় জাতি সংর্ঘের বিশেষজ্ঞ দলকে আসতে হয়েছে সুন্দরবনে।

এদিকে, এই নৌপথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মংলা বন্দর থেকে পণ্য বহনকারী জাহাজগুলোকে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করতে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়। একই অবস্থা ঘটে বাংলাদেশ-ভারতের নৌযানগুলোর ক্ষেত্রেও। ২০১১ সালে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বিকল্প একটি নৌপথ চালু করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ফলে সুন্দরবনের সন্ন্যাসী, রায়েন্দা, বগী, শরণখোলা, দুধমুখী, হরিণটানা, আন্ধারমানিক, মৃগমারি, চাঁদপাই, জয়মনিগোল, মংলা পথে চলতে শুরু করে ভারী জাহাজ-কার্গো। সংরক্ষিত ওই বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল করায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান পরিবেশবিদরা।

প্রসঙ্গত: ভারতের সঙ্গে নৌ প্রটোকল রুটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মংলা-ঘাষিয়াখালী নৌপথটি। মূলত মংলার পশুর নদীর সঙ্গে বলেশ্বর নদীর ঘাষিয়াখালী অংশে এটি সংযুক্ত হয়েছে। ওই নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ কিলোমিটার। ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদী খনন করে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এই নৌপথের দু’তীরের সংযোগ খাল ও প্লাবন ভূমিতে বাধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে প্রচুর বালি ও পলির কারণে প্রতি বছরই নৌপথটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে। একপর্যায়ে এ পথে নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরআগে ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল বাগেরহাটের রামপাল অংশে খনন কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু খননের গতির চেয়ে পলি জমার প্রবণতা বেশি হওয়ায় তিন মাসের মাথায় ড্রেজিং কার্যক্রম বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে এই নৌপথটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ।

(একে/এসসি/জুলাই০২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test