E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৫টি ড্রেজার সরিয়ে নেওয়ায় মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ রুটের খনন কাজ ব্যাহত

২০১৫ জুলাই ৩০ ১১:৪৬:০৭
৫টি ড্রেজার সরিয়ে নেওয়ায় মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ রুটের খনন কাজ ব্যাহত

বাগেরহাট প্রতিনিধি :চলতি বছরের জুন মাসে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার জন্য সরকারি ঘোষণা থাকলেও জুলাই মাসের মধ্যেও শেষ করা যায়নি ভারতের সাথে নৌ প্রটোকলভুক্ত মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেলের ড্রেজিং কাজ। এরই মধ্যে ৫টি ড্রেজার মাওয়ার পদ্মায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় চ্যানেল খনন কাজে ইতিমধ্যে অনেকটা ধীর গতি চলে এসেছে। দেখা দিয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতার।

গত বছরের ১ জুলাই রামপালের কালীগঞ্জ-ডাকরা পয়েন্টে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন কাজের উদ্বোধন করেন বিআইডাব্লুটিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র চার মাসের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে ২ দফা সময় বাড়িয়েও তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে নৌ-পথটি চালুর ঘোষণা দেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এ চ্যানেলের খনন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সরকারি বেসরকারি ১৪টি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চালানো হলেও এর মধ্যে ৫টি ড্রেজার মাওয়ার পদ্মায় সরিয়ে নেয়ার ফলে খনন কাজে গতি কমেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে এ কাজের স্থানীয় সমন্বয়ক রামপাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব কুমার রায় বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ড্রেজারের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে খনন কাজে একটু গতি কমেছে তবে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। নাব্যতা সংকটে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌরুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এ রুটে চলাচল কারি নৌযানসমূহ বিকল্প পথ হিসাবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলের কারণে বনের জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। এর পরও সুন্দরবনের ভেতর নৌ দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে । গত বছর ১০ ডিসেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জের মৃগামারীর বাদামতলা এলাকায় সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস ওয়েল নিয়ে ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন নামের একটি তেলবাহী ট্যাংঙ্কার ডুবে সমগ্র তেল বনের ভেতর ছড়িয়ে পড়ায় নৌযান চলাচলের পুরানো রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত খনন ও নৌযান চলাচলের খুলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খনন কাজ দ্রুত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ১৪টি ড্রেজার দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্প এলাকা থেকে এক লাখ ঘন মিটার মাটি উত্তোলন করে চ্যানেলের নাব্যতা বাড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও দু’দফা সময় বাড়ানো হলেও খনন কাজের এখনও শেষ করা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডাব্লুটিএ’র ড্রেজারগুলো লোক দেখানো ড্রেজিং করছে। সরকারি ড্রেজারগুলো তাদের সিডিউল মোতাবেক ড্রেজিং করছেনা । সরকারি ড্রেজারগুলোর মধ্যে কেউ কেউ ড্রেজিং না করেই লগবুকে (বই) ড্রেজিং দেখিয়ে তেল বিক্রিও করছে। ওই সব ড্রেজারকে কেন্দ্র করে মংলায় একটি তেল চোরাই সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। তবে এ বিষয় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব কুমার রায় বলেন, ড্রেজিং না করে লগ বইতে তুলে তেল বিক্রি করলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ রুটে নাব্যতা বৃদ্ধি এবং নৌযান চলাচল আংশিকভাবে শুরু সরকারিভাবে এমন দাবি করা হলেও এ বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে ভিন্ন তথ্য জানা গেছে। রামপাল নদী পারাপার ঘাট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম , একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল হাওলাদার ও নুরুল ইজারাদার বলেন, এ নদীপথে এখনও পর্যন্ত বড় কোন কার্গো ট্যাঙ্কার বা কোষ্টার চলাচল করছেনা। তবে মাঝে মাঝে ছোট ছোট মালবাহী ট্রলার ও বলগেট চলাচল করছে। বিআইডাব্লুটিএ’র ড্রেজার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দিদার এ আলম বলেন, খননকৃত জায়গা দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানে টাইডাল বেসিন তৈরি করা প্রয়োজন এবং অর্থ বরাদ্দ হলে এর কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, টাইডাল বেসিন তৈরী হলে এ চ্যানেলের নাব্যতা সংকট কেটে যাবে। তবে বর্তমানে ড্রেজার সংকটে খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ভারতের সঙ্গে নৌ প্রটোকল রুটের অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ-পথ। মূলত মংলার পশুর নদীর সঙ্গে বলেশ্বর নদের ঘষিয়াখালী অংশে এটি সংযুক্ত হয়েছে। ওই নৌ-পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ কিলোমিটার। ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদী খনন করে প্রয়াত এমএজি ওসমানী এটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রচুর বালি ও পলির কারণে প্রতি বছরই নৌ-পথটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে। এক পর্যায়ে এ পথে নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল এর রামপাল অংশে খনন কাজ শুরু করে বিআইডবি¬উটিএ। কিন্তু খননের গতির চেয়ে পলি জমার প্রবণতা বেশি হওয়ায় তিন মাসের মাথায় ড্রেজিং কার্যক্রম বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে এই নৌপথটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডাব্লুটিএ কর্তৃপক্ষ।

(একে/এসসি/জুলাই৩০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test