E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষণে বান্দরবানে আবারো বন্যা

২০১৫ জুলাই ৩১ ১৮:৫২:৪৩
পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষণে বান্দরবানে আবারো বন্যা

বান্দরবান প্রতিনিধি : পাহাড়ী ঢলে ও প্রবল বর্ষণে বান্দরবান, থানছি ও রুমাসহ ৭ উপজেলায় আবারো বন্যা।  অবিরাম বর্ষণের ফলে সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ২য় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ২দিনের মাথায় নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছে দুর্গম পাহাড়ী জনপদের হাজার হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ী। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে।

সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা শহরের ইসলামপুর, শেওে বাংলা নগর, কাশেম পাড়া, আর্মীপাড়া, মেম্বার পাড়া, হাফেজঘোনা, মধ্যমপাড়া, উজানী পাড়া, ভরাখালী, পুলপাড়াসহ ৩০টি গ্রাম বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। বন্যা দুর্গত এসব মানুষকে পারাপারের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে ৩টি নৌকা দেয়া হয়েছে। পৌর মেয়র মোঃ জাবেদ রেজা জানান, একমাসের মধ্যে ৩টি বন্যা বান্দরবানবাসীর জন্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভারী বর্ষণের কারণে পৌর এলাকার সবগুলো সড়ক যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এবারের বন্যায় পৌর এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা অতীতের সকল রেকড ভঙ্গ হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে বলে তিনি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি আরো জানান, পৌরবাসীকে সেবা দিতে প্রতিদিন আশ্রয় কেন্দ্রে বিশুদ্ধ খাবার পানি, চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যহত রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘুর্ণিঝড় কোমেন এর কবলে পড়ে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার গাছের নীচে চাপা পড়ে মো. সিদ্দিক (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। পুলিশ আজ শুক্রবার বিকেলে লাশ উদ্ধার করেছে। স্থানীয়রা জানায়, মো. সিদ্দিকের বাড়ি চকোরিয়া উপজেলায়। সে স্বপন নামে এক ব্যক্তির কাছে দিন মজুর হিসেবে কাজ করতো। ঘুর্ণিঝড়ের প্রবল বাতাসে সে বাড়িতে অবস্থান করার সময় একটি গাছ উপড়ে গিয়ে বাড়িতে পড়ে। এতে সে গাছের নীচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। বিষয়টি আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিশ্চিত করেছে।

অপরদিকে কয়েক দিনের টানা বর্ষনের ফলে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের সুয়ালক এলাকায় একটি ব্রীজ ধ্বসে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সড়ক বিভাগ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধ্বসে যাওয়া ব্রীজ সচ্ছল করার জন্য বেইলী ব্রীজ স্থাপনের কাজ করছে আজ সকাল থেকে। বেইলী ব্রীজ স্থাপনের কাজ শেষ হলে আগামীকাল থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়াও রুমা-থানছি সড়কের বিভিন্ন অংশে ধসে যাওয়ায় অভ্যন্তনীণ রুট গুলোও বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অপরদিকে গতকাল বিকেলে ও রাতে ঘুর্নিঝড়ের তাণ্ডবে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরাবান সদর ও থানছি উপজেলায় কয়েকশ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও গাছ ভেঙ্গে পড়ে বিদ্যুতের অসংখ্য খুটি ভেঙ্গে গেছে। ফলে ৩দিন ধরে বান্দরবান জেলার কোথাও বিদ্যুৎ নেই।

এদিকে থানছি উপজেলার দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌছানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। সিংগাফা মৌজার হেডম্যান মুই শৈ থুই জানান, পরপর ৩’দফা বন্যায় রেমাত্রী ইউনিয়নের দুর্গম বড়মদকসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঐসব এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণের চাল পৌছানো হয় নি। ফলে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট বিরাজ করছে।

তিনি জানান, বড়মদকসহ আশেপাশের এলাকা গুলোতে যোগাযোগের কোন মাধ্যম না থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া চাল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় পৌছানোর কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পৌছানো হয়নি।

(এএফবি/এএস/জুলাই ৩১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test