E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জকিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ খাদ্য গুদামে লাগামহীন হরিলুট চলছে

২০১৫ আগস্ট ২২ ২১:৫৪:৪৮
জকিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ খাদ্য গুদামে লাগামহীন হরিলুট চলছে

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি :জকিগঞ্জের খাদ্য গোদাম দুটিতে সরকারী ধান চাল ক্রয় করাকে কেন্দ্র করে লাগামহীন অনিয়ম দূর্ণীতি হরিলুট চলছেই।

গতকাল জকিগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান সহ সকল মহলের আপত্তির মূখে চার গাড়ী নিম্নমানের আতব চাল জকিগঞ্জ সরকারী গডাউনে ঢোকানোর চেষ্ঠায় হুলুস্থুল শুরু হয়। এক গাড়ী নিম্ন মানের চাল ঢোকানো হলেও আপত্তির মূখে তিন গাড়ী চাল আপতত ফিরত দিতে হয় কতৃপক্ষ। গত বছরও কোন আপত্তি তোয়াক্কা না করে দূর্ণীতির মাধ্যমে ৩৬০ টন নিম্নমানের আতব চাল ক্রয় করা হয়।

যেকোন আতব চালের লংজিবিটি (স্থায়িত্ব মেয়াদ) মাত্র ১ মাস। অথচ ১০/১১ মাস পর এসব পোকা ধরা ড্রাস্ট হয়ে যাওয়া চাল সারা উপজেলার গরীব দুঃখী শ্রমজীবিদের মাঝে ভিজিএফ/ ভিজিডি/ কাবিখা/ি টআরসহ বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের নামে সরবরাহ করা হয়। খাবার অযোগ্য চাল নিতে বাধ্য হয় উপজেলার গরীব জনগোষ্ঠি। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বাররা চিল¬াচিলি¬ করলেও কোন কাজে আসেনি। সরকারী গডাউনে যেসব খাদ্য মজুদ রয়েছে তাই সরবরাহের নিয়ম গুণগত মানের প্রশ্নে চাইলেও কিছু করার থাকেনা। অথচ পাশ্ববর্ত্বী কানাইঘাট উপজেলায় গত বছর স্থায়িত্ব মেয়াদ না থাকায় কোন ধরণের আতব চাল ক্রয় করা হয়নি। এবারও হচ্ছেনা বলে জানাগেছে।

জকিগঞ্জে গত বারের কায়দায় এবারও সিদ্ধ চাল কেলেংকারীর পর শুক্রবার থেকে নিম্নমানের আতব চাল তড়িগড়ি করে জকিগঞ্জ খাদ্য গোদামে ঢোকানো শুরু হয়েছে। সরকার স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেজি প্রতি ২২ টাকা দামে ক্রয় করতে বললেও জকিগঞ্জের ৫ ইউনিয়নের কোন কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে কৃষি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করে কালিগঞ্জ খাদ্য গোদামের ওসিইলেস্ট্রি ফজলুল হক সিলেটের বাহির থেকে র্নিজে গাড়ী গাড়ী ধান ক্রয় করে এনে কাগজপত্রে জকিগঞ্জের কৃষকদের থেকে সরকারী মূল্য ২২ টাকা দরে ক্রয় দেখিয়েছেন। স্থানীয় ধানের বাজারে ক্রয় মূল্য কেজি প্রতি ১৩/১৪ টাকা। কেজিতে ৮/৯ টাকা করে পকেট ভারী করে তিনির গোদামে ৩৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় দেখান। তাছাড়া ফজলুল হক ৯০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল জকিগঞ্জের দুটি কথিত মিলের নাম ব্যবহার করে ক্রয় দেখালেও সরেজমিনে এ ধরণের কোন সিদ্ধ চাল মিলের অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রতি কেজি চালে সরকারী ক্রয় মূল্য ৩১ টাকা দেখানো হলেও বাজার দর ২০ টাকা রয়েছে। কেজি প্রতি ১১ টাকা করে পকেট ভারী করা হয়। উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন কালিগঞ্জ খাদ্য গোদাম ব্যবহার করে থাকে। পৌরসভা সহ আরও ৪ টি ইউনিয়ন জকিগঞ্জ খাদ্য গোদাম ব্যবহার করে। জকিগঞ্জ খাদ্য গোদামের ওসিইলেস্ট্রি লাকি রানী দে ৫০ টন ধান ক্রয়ের মধ্যে বেশীর ভাগ স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করলেও সরকার নির্ধারিত ২২ টাকা দর কোন কৃষককে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ৮৭ টন সিদ্ধ চাল ক্রয়ে সবগুলোই পুরোনো ২০১২/১৩/১৪ সালের নিম্নমানের চাল।

গত বছরের কাবিখা/ টিআর এর চালের ডিও কমদামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন পূর্বক ২০১৫ সালের সিলমোহর কৃত বস্তায় ঢোকিয়ে পুকুর চুরি করেছেন। এমনকি গত ঈদে খলাছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বশীলদের সাথে আতাত করে ৩ টন সিদ্ধ চাল গোদামে সরকারী ক্রয় দেখিয়ে বাহির থেকে পচা খাবার অযোগ্য আতাব চাল কম দামে ক্রয় করে ৩শ পরিবারকে বিতরন করেন। এসব পচা চাল খেয়ে ২০ জনের ডায়রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। তাছাড়া গত ২২ রামজান গভীর রাতে রতনগঞ্জস্থ ইসহাক আটো আতব রাইছ মিলের গডাউনে সংগ্রহ করে এক রাতে নিম্নমানের ২০ টন সিদ্ধ চাল জকিগঞ্জ সরকারী গডাউনে ২০১৫ সালের সিলমোহরকৃত বস্তায় ঢোকিয়ে স্থানান্তরিত করার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও পরবর্তিতে বিষয়টি রহস্যজনক প্রশমিত হয়ে যায়।

গত মার্চ মাসে জকিগঞ্জ সরকারী গডাউন থেকে ৫০ টন ধান ইসহাক অটো রাইছ মিলে সরকারী ভাবে মিলিংয়ের জন্য এনে পরবর্তিতে এ ধানের উচু মানের চাল বেশী দামে বিক্রি করে কাবিখা/ টিআর এর ডিও কিনে ও নিম্ন মানের চাল কালো বাজারীদের থেকে সংগ্রহ করে সরকারী গোদামের হিসাব দেখানোটি তখন আলোচিত হয়েছিলো। এভাবেই লাগামহীন অনিয়ম, দূর্নীতি চলছে জকিগঞ্জের দুটি খাদ্য গোদামে। র্দীঘদিন থেকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ শুন্য থাকায় সরকারী খাদ্য গোদাম গুলোর কার্যক্রম সুপারভিশন হচ্ছেনা। বিয়ানীবাজার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গৌরভ পদ দেব অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও জকিগঞ্জে মাঝে মধ্যে আসেন মাত্র।


(এসকেপি/এসসি/আগস্ট২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test