E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুমতী নদীতে বিদ্যালয়ভবন বিলীন, ৫ বছর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

২০১৫ আগস্ট ২৬ ১৪:৩১:৩২
মধুমতী নদীতে বিদ্যালয়ভবন বিলীন, ৫ বছর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

লোহাগড়া (নড়াইল)প্রতিনিধি :নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মধুমতী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর ধরে গোয়ালঘর, পোল্ট্রি খামারের ঘর ও খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর ডিক্রীরচর গ্রামে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪৭ এবং শিক্ষক চার জন। ২০০৯ সালে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই বছর বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৩০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ হয়। সেই টাকায় বিদ্যালয় মাঠের এক পাশে একটি ছাপড়া ঘর তুলে চলতে থাকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ২০১০ সালে ওই ছাপড়া ঘরটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের কোনো জায়গা বা ঘর না থাকায় পাঁচ বছর ধরে গোয়ালঘর, পোল্ট্রি খামারের ঘর ও খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।

শুকনো মৌসুমে গ্রামের একটি বাঁশঝাড় তলায় ক্লাস নেওয়া হয়। সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বৃষ্টি হলেই কাঁদা হয়। আশপাশের বাগান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে কিছুদিন একটি পোল্ট্রি খামারের ঘরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টির কারনে গোয়াল ঘরে চলেছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। রাতে সেখানে গরু থাকে। দিনে পরিষ্কার করে ক্লাস নেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ডিক্রীরচর গ্রামে এ বিদ্যালয়ের অবস্থান। রাস্তার পাশে শক্ত মাটির উঁচু ফাঁকা জায়গা। সেখানে গাদাগাদি করে বস্তা ও মাদুরে বসে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

সহকারী শিক্ষক সেলিনা পারভীন বলেন, ‘কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকায় এখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। শিক্ষার্থীদের নিচে বসে লিখতে সমস্যা হয়। খোলা জায়গা, তাই প্রায় মলমূত্র পাওয়া যায়। তা বালু দিয়ে ঢেকে তারপর চলে শিক্ষা কার্যক্রম। শীতকালে কুাঁয়াশা ও খোলা ঠান্ডা বাতাস। শৌচাগার ও খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের ফাইলপত্র, চক-ডাস্টার ইত্যাদি ব্যাগে ভরে বাড়িতে নিতে হয়। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যঘাত ঘটে। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন বলে, ‘সামনে সমাপনী পরীক্ষা। এ অবস্থায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’ অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘নাতি-পোতারা বৃষ্টির জন্যি স্কুলে আসে না। বাড়িতে প্রাইভেট দিছি।’

প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জানান, ‘৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের জন্য নতুন একতলা ভবন নির্মাণ গত অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে। চেয়ার, বেঞ্চ এবং অন্যান্য আসবাবও তখন এসেছে। যিনি বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি দান করেছিলেন, শরীকানা সম্পত্তি হওয়ায় মালিকানা জটিলাতায় তিনি ওই জমি লিখে দেননি। তাই গত নয় মাসেও ওই ভবনে ওঠা সম্ভব হয়নি’।

স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জামাল শেখ বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী চেষ্টা করেও ওই ভবনে ওঠার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই প্রায় পাঁচ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ডিক্রীরচর গ্রামের নদী ভাঙন কবলিত এ মানুষগুলো কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।’

লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ডিক্রীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য খুব শ্রীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।


(আরএম/এসসি/আগস্ট২৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test