E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপাসিয়ায় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, প্রকাশ না করতে স্বামীকে বেঁধে রেখে হুমকি

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০২ ২১:৪৭:৪৪
কাপাসিয়ায় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, প্রকাশ না করতে স্বামীকে বেঁধে রেখে হুমকি

গাজীপুর প্রতিনিধি :হাসপাতালের আইসিও’তে দশ দিন অচেতন থাকার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন গৃহবধু সামসুন্নাহার। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গাজীপুরের কাপাসিয়ার দেওনা গ্রামের দরিদ্র সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী সামসুন্নাহার (২৬)। প্রসব ব্যাথা উঠলে চিকিৎসার জন্য গত ২৪ আগষ্ট সকালে ভর্তি হয়ে ছিলেন উপজেলার আমরাইদ আইডিয়াল হাসপাতালে। সেখানেই ভুল চিকিৎসার স্বীকার হন তিনি। 

নিহতের স্বামী অভিযোগ করেন, ভুল চিকিৎসার বিষয়ে জানতে ওই হাসপাতালে গেলে হাসপাতালের মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিরন মোল্লা ঘটনা প্রকাশ না করতে তাকে শ্বাসায় এবং এক পর্যায়ে হাসপাতালের ভিতরের একটি কক্ষে বেঁধে রাখেন।

গৃহবধূর পরিবারের লোকজন জানান, গত ২৪ আগষ্ট সকালে সামসুন্নাহারের প্রসব ব্যাথ শুরু হয়। স্থানীয় ভাবে প্রসব না হওয়ায় বিকেলে আইডিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে জানায়, রোগীর গর্ভের সন্তানের অবস্থা ভালো নয়, তাই মা ও সন্তানকে বাঁচাতে হলে এক্ষুনি অপারেশন করা প্রয়োজন। অন্যাথায় এক ঘন্টার মধ্যে তাদের মৃত্যুর সম্ভবনা রয়েছে। মা ও শিশুর জীবনের কথা চিন্তা করে অপারেশনে সম্মতি দেয়া হয়। পরে অপারেশনের মাধ্যমে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু অপারেশনের সময় অচেতন করার পর তার আর জ্ঞান ফিরেনি। দু’দিন চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে আইডিয়াল হাসপাতালের লোকজন সামসুন্নাহারকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রথমে তাকে রাজধানীর উত্তরার নোভানা জেনারেল হাসপাসাল প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকগনও চেষ্টা করে জ্ঞান ফেরাতে না পারায় ২৭ আগষ্ট রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি আইসিও’তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান।

চিকিৎসার নামে ডাক্তারের অপারেশনের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের স্বামী সিরাজুল ইসলাম জানান, অপারেশন রুমে নিয়ে একজন নার্স তাঁর স্ত্রীর ডান হাতের বাহুতে একটি ইনজেকশন পুশ করে চলে যান। ১০ মিনিট পর এক চিকিৎসক (নাম জানা নেই), সহযোগী চিকিৎসক মিজান এবং দুজন নার্স অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢোকেন। ওই চিকিৎসক পেটের নীচের অংশে কেটে একটি কন্যা সন্তান বের করেন। পেটের কাটার সময় তার স্ত্রী তীব্র ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় ওই চিকিৎসক ও তার সহযোগীরা সামসুন্নাহারকে জাপটে অপারেশন টেবিলে শুয়ে দেন। তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখেন।

স্ত্রীকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকগন জানান ভুল চিকিৎসার কারনেই সামসুন্নাহারের এমন পরিনতি হয়েছে। তিনি কাপাসিয়ার আইডিয়াল হাসপাতালে এ বিষয়ে জানতে গেলে হাসপাতালের মালিক রায়েদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা হিরন মোল্লা ভিতরে নিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখে। পরে কারও কাছে অভিযোগ না করার শর্তে ছেড়ে তাকে দেয়া হয়। তিনি হাসপাতালের মালিক এবং জড়িত চিকিৎসকদের বিচার দাবি করেন।

নিহতের ছোট বোন কামরুন্নাহার জানান, তার বোন জামাই খুবই দরিদ্র। ০৮-১০ হাজার টাকায় অপারেশন হবে বলে হাসপাতালের লোকজন জানিয়েছিল। এখন চিকিৎসার জন্যে কয়েক লাখ টাকা চলে গেছে। তারপরও বোনকে বাঁচানো যায়নি। ধারদেনায় চিকিৎসা করে এখন তারা নিঃস্ব।

কাপাসিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজউদ্দিন জানান, আইডিয়াল হাসপাতালের লাইসেন্স আছে কিনা কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না। তবে ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিরন মোল্লা জানান, আমি নামেই হাসপাতালের চেয়ারম্যান। রাজনীতির কারনে ঠিকমত খোঁজ খবর রাখতে পারেনা। তাছাড়া রোগী তার হাসপাতালে মারা যায়নি। তাই দায়-দায়িত্বও তার নয়।



(এসএএস/এসসি/সেপ্টম্বর ০২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test