E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে দীঘি ভরাট করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৭:৩০:১৬
বরিশালে দীঘি ভরাট করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি,বরিশাল : নগরীর একটি ঐতিহ্যবাহী দিঘি ভরাট করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দীঘির পানি অপসারণ করে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। জলাশয় ভরাট করে খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় পাশ্ববর্তী কীর্তনখোলার তীরের বধ্যভূমি ও দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এনিয়ে সচেতন নগরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ত্রিশগোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমি ও রিজার্ভ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ব্যারাকের পাশের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দীঘির চারপাশে পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। সৌন্দর্যময় দিঘির পানি সেচ দিয়ে অনেকটা শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। চলছে কীর্তনখোলা নদী থেকে পাইপ বসানোর কাজ। পাইপ দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হবে পুরো দিঘিটি। পিলার স্থাপনে কাজ করা শ্রমিক সর্দার জামিলুর রহমান জানান, কোম্পানী কাজ করাচ্ছে। প্রাচীর নির্মাণের পর দীঘিটি বালু দিয়ে ভরাট করে খাদ্যগুদামের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি প্রকল্পের অধীনে বরিশালে চাল সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এজন্য নগরীর ত্রিশ গোডাউনের পাশে থাকা বড় জলাশয় এবং নীচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। প্রকল্পের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, এটা কত টাকার প্রকল্প সে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। শুধুমাত্র তিনি জানেন, ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গোডাউন নির্মাণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসেলিটিজ প্রজেক্টের নামে বরিশালে চাল সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক কাজের অংশ হিসেবে তিন কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ১২ একর জায়গার মধ্যে ওই প্রকল্প বাস্তাবায়ন করার কথা রয়েছে। দুই একর জমি বধ্যভূমি এলাকার আওতায়। বর্তমানে পুকুরসহ ১০ একর উন্নয়ন করা হবে।

আট একর পুকুর ভরাট, দুই একর নীচু জমি ভরাট, প্রাচীর নির্মাণ এবং প্রকল্প কার্যালয় নির্মাণ করা হবে। ওই প্রকল্পের মধ্যে পাশাপাশি ১৬টি গোডাউন, প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন। ছোট বড় আরও পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এদিকে বধ্যভূমি এলাকার বিশাল জলাভূমি ভরাট করে খাদ্য গোডাউন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।

নগরীর একাধিক বাসিন্দারা জানান, বরিশালের অন্যতম নিদর্শন বধ্যভূমি। তার পাশে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার কবর। এই এলাকায় বিশালাকার জলাশয়টি দীর্ঘদিন থেকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সে জলাশয় ভারাট করে খাদ্যগুদাম নির্মান করার কোন যৌক্তিকতা নেই। নগরীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, খাদ্যগুদাম করার দরকার থাকলে ত্রিশ গোডাউনগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে, সেখানে করা হোক।

বৃহৎ জলাশয় ভরাট করে এবং বধ্যভূমি এলাকার সৌন্দার্য নষ্ট করা হলে বরিশালবাসী আন্দোলনে নামবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নগর সৌন্দর্য রক্ষা এবং খাল-নদী-জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, সরকার একদিকে ঘোষণা করেছে জলাশয়, পুকুর, খাল ভরাট করা যাবে না।

অন্যদিকে নগরের অন্যতম সৌন্দর্য নষ্ট করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিদিন বধ্যভূমি এলাকায় ওই জলাশয় ও কীর্তনখোলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়। সেইখানে খাদ্যগুদাম নির্মান হলে নাগরিকদের বিনোদনস্থান এবং বধ্যভূমির সৌন্দর্য নষ্ট হবে।

এ ব্যাপারে মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসেলিটিজ প্রজেক্টের পরামর্শক মো. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রকল্পের অধীনে ১২ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে দুই একরে বধ্যভূমি থাকায় সেটা কি হবে এখনো ঠিক হয়নি। বর্তমানে পুকুরের আট একরসহ ১০ একর ভরাট করে উন্নয়নের কাজ করা হবে। ভূমি উন্নয়ন প্রাচীরের জন্য প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকার কাজ শুরু করা হয়েছে।

(টিবি/এএস/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test