E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ১২:৫৩:৫১
বাগেরহাটে কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার মাহাফুজুর রহমান নামে এক কর্মকর্তা।

তবে টাকার অংকের বিষয়ে ওই ব্যাংকের কেউই মুখ খুলছেন না। ঘটনা তদন্তে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের খুলনার জিএম অফিস ও বাগেরহাট রিজিওনাল অফিসের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের পৃথক দুটি তদনাত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাগেরহাট সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখা সূত্রে জানাগেছে, ব্যাংকের আভ্যান্তরিন অডিট চলাকালে গত ৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার মাহাফুজুর রহমান লোনের ডকুমেন্ট না দেখিয়ে গা’ঢাকা দেয়। তখন বিষয়টি দিলে অডিট টিমের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এখন ওই কর্মকর্তাকে আর খুঁজে পাচ্ছেনা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর আভ্যান্তরিন অডিট টিম বাগেরহাট শাখার লোন ডকুমেন্ট পর্যালোচনা শুরু করলে বেরিয়ে পড়ে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা। এ অবস্থায় বন্ধের দিন শুক্রবার বাগেরহাট শাখায় ছুটে আসেন সোনালী ব্যাংকের খুলনার জিএম নেপাল চন্দ্র সাহা।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম লোন থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এর সাথে বাগেরহাট শাখার সিবিএ’র ২-১ জন নেতাও জড়িত তাকার সম্ভবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই কারসাজির জড়িত ছিল। বাগেরহাট শাখার ওই সিনিয়র কমকর্তা শিক্ষা সঞ্চয়ী স্কীম, মেডিক্যাল ডিপোজিট স্কীম ও স্থায়ী আমানত স্কীমসহ ব্যাংকে গচ্ছিত বিভিন্ন স্কীমের ঋণ বিতরণের বিষয়টি দেখভার করতেন। মাহাফুজুর রহমান তিন বছর ধরে বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংকের এই শাখায় কর্মরত আছে। প্রায় এক বছর আগে তাকে একবার এখান থেকে বদলি করা হলেও লবিং করে আবারো এই শাখায় ফিরে আসেন। যা ছিলো বিধি বহির্ভূত।

অভিযোগ আছে, চলতি বছরে মাহাফুজুর রহমান ওরফে বাবু একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এর খুলনা বিভাগের সকল শাখা কিনে নিয়েছেন। অল্প সময়ে কয়েকটি পিকআপ ও মাইক্রোবাস কিনে শহরে রেন্টেকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। হয়তর খানজাহান (রহ.) মাজার মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টও খুলে বসেছেন।

এসব বিষয় নিয়ে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখার একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও অফিশিয়ালি কেউই কিছু বলতে রাজি হননি। তবে আর্থিক অনিয়মের সন্দেহে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খান বজলুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, খান মিজানুর রহামান ও রবিন গাইন। সোনালী ব্যাংকের খুলনার জিএম অফিসের পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট রিজিওনাল অফিসের প্রধান কর্মকর্তা আশুতোষ মন্ডল জানান, অডিট টিমের কাছে ডকুমেন্ট দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে আত্মীয় মারা গেছে এমন অজুহাত দিয়ে মাহাফুজুর রহমান ওই দিন ব্যাংক ত্যাগ করেন। এরপর থেকে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ও জিএম অফিসের পক্ষ থেকেও অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রবিবার সকাল থেকে এই দুটি তদন্ত কমিটি আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে কাজ শুরু করেছে। কমিটি দুটি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকৃত কি পরিমান টাকা আত্মসাত হয়েছে তা জানা যাবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়।

বাগেরহাটের একাধিক বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংকের এই শাখায় চেক জালিয়াতি, ভূয়া নামে লোন উত্তলোনসহ আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত প্রয়োজন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহাফুজুর রহমানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে, তার মা মরজিনা বেগম বলেন, বাবু (মাহাফুজুর রহমানের ডাক নাম) কোথায় আছে তা আমাদের জানা নেই। আমরা সকালে সোনালী ব্যাংকের অডিট কমিটির কাছে লিখিত দিয়েছি সে যদি ব্যাংকের কোন টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে আমরা তা পরিশোধ করব।

(একে/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test