E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষক দ্বারা গৃহকর্মী ধর্ষিত

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৪:১৫:৫৩
শিক্ষক দ্বারা গৃহকর্মী ধর্ষিত

মাদারীপুর প্রতিনিধি: আবারও মাদারীপুরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মাদারীপুরের কুলপদ্বি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় গোলদার দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করছিলো তারই গৃহকর্মীকে।

পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিষ খাইয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় ঐ গৃহকর্মীকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. প্রদীপ কুমার ঐ গৃহকর্মীকে বাজে-খারাপ মেয়ে বলে গালিগালাজ করে এবং তাকে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলে।

শুক্রবার সকালে এমন অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগী ও স্থানীরা।

স্থানীয়, ভূক্তভোগী, পুলিশ, হাসপাতাল ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর নতুন শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন কুলপদ্বি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় গোলদার ও তার স্ত্রী রাজৈর উপজেলার নয়াকান্দি বাজিতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা নিপুনা বিশ্বাস।

ঐ বাড়িতে প্রায় এক বছর আগে রাজৈর উপজেলা আমগ্রামের মৃত গোবিন্দ রায়ের মেয়ে (১৬) গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয়। এর কিছুদিন পরই শিক্ষকের স্ত্রী তার কর্মস্থল স্কুলে থাকায় জোর করে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করে ঐ শিক্ষক। ঘটনাটি তার স্ত্রীকে জানাতে না বলে এবং ভয়ভীতি দেখায়। গৃহকর্মী ভয় ও লজ্জায় কাউকে কিছু বলেনা। পরে প্রায় তাকে জোর করে ধর্ষণ করে। গৃহকর্মী তাতে বাধা দিলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে।

এক পর্যায় ঘটনাটি শিক্ষক বিজয় গোলদারের স্ত্রী নিপুনা বিশ্বাস টের পায়। টের পেয়ে কৌশলে বেড়াতে যাবার কথা বলে ঐ গৃহকর্মীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় আরেকজন গৃহকর্মী ঠিক করে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক বিজয় গোলদারের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ঐ গৃহকর্মী তার বাড়িতে ফিরে আসে। এ সময় ঐ বাড়িতে কোকসহ অন্যান্য খাবার খেয়ে আমগ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে ঐ গৃহকর্মী। এসময় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বমি করতে শুরু করে। পরে তাকে তার পরিবারের লোকজন গুরুতর অবস্থায় রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে সে ঐ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

অপরদিকে শিক্ষক ও তার স্ত্রী ঐ গৃহকর্মীকে ঘটনাটি চেপে যাওয়া ও কাউকে না জানার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং তারা স্থানীয় ও প্রভাবশালীদের নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

ঐ গৃহকর্মী বলেন, প্রথমে আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেছে। আমি বাধা দিলে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে তারা আমাকে কোকের সাথে বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এখন আমাকে এ ব্যাপারে কোন কথা না বলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ডাক্তার প্রদীপ কুমার এসেও আমাকে খারাপ-বাজে মেয়ে বলে গালি দিয়েছে। এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। কাউকে এ কথা জানালে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তাছাড়া ঐ শিক্ষকের ভাই বিনয় গোলদার শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার। সেও এখানের ডাক্তারদের উল্টোপাল্টা কথা বলে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলছে। আমি গরীব মানুষ। আমার কোন টাকা পয়সা নেই। ওরা প্রভাবশালী। ওদের অনেক টাকা আছে। আমি জানি এর কোন বিচার পাবো না। তাই মামলা করিনি। তাছাড়া মামলা চালানোর মতো আমার কাছে টাকাও নেই।

রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গৃহকর্মীর পাশের বেডের নদী নামের এক রোগী ও অপর এক রোগীর স্বামী সাইদুর মোল্যাসহ হাসপাতালের কয়েকজন রোগী বলেন, ডা. প্রদীপ কুমার এখানে এসে ঐ মেয়েকে বাজে-খারাপ মেয়ে বলে গালিগালাজ করেছে। এ সময় তাকে হাসপাতাল ছেড়ে যেতে বলেছে।

আরো বলেছে তুই খারাব বাজে মেয়ে, ভালো মানুষকে কেন অপবাদ দিচ্ছিস। ভালো চাস তাহলে এখান থেকে চলে যা।

অপরদিকে এই ঘটনার খবর শুনে মাদারীপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা হাসপাতালে গিয়ে ঐ গৃহকর্মীর সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চত হয়ে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃজনক। শিক্ষক হয়েও এভাবে ধর্ষণ করে আবার তার উপর নির্যাতন করার ঘটনাটি খুবই নিন্দাজনক ও অপরাধ। এ ব্যাপারে সরকারীভাবে মামলার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে করে অপরাধীর শাস্তি হয়। তাছাড়া আমি রাজৈর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। তারা ব্যাপারটি দেখছেন।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার কথা আমি শুনেছি। আগে মেয়েটির চিকিৎসা দরকার। চিকিৎসা করে মেয়েটি সুস্থ হোক। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. প্রদীপ কুমারকে হাসপাতালে শুক্রবার থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সে ফোন রিভিস করেনি। তবে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভিন্ন অপরাধের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে বলে জানা যায়।

এ সময় জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসক হামিদা বেগম বলেন, আমি ঐ রোগী সম্পর্কে কিছু জানিনা।

(এএসএ/এপিবি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test